ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষজ্ঞ অভিমত ’৯৮ বা ’৮৮ সালের মতো ভয়াবহ না হলেও এবারের বন্যাও বিধ্বংসী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৬ আগস্ট ২০১৭

বিশেষজ্ঞ অভিমত ’৯৮ বা ’৮৮ সালের মতো ভয়াবহ না হলেও এবারের বন্যাও বিধ্বংসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের বন্যা বিগত ’৯৮ বা ’৮৮ সালের মতো ভয়াবহ না হলেও ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় আগের যে কোন বন্যার মতোই বিধ্বংসী। এছাড়াও এবারের বন্যায় স্বল্প সময়ে পানি বৃদ্ধির গড় ছিল অতীতে যে কোন বন্যার চেয়ে বেশি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক হিসাবে দেখা গেছে গত ১১ আগস্ট উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তা একদিনের ব্যবধানে বিপদসীমার ওপর চলে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কম সময়ে পানির এতটা বৃদ্ধি আগে কখনও হয়নি। এছাড়া এবারই প্রথম যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার রেকর্ড অতিক্রম করে। যা আগে কখনও হয়নি। এছাড়া বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের যে কোন বন্যার চেয়ে কোন অংশেই কম হয়নি। দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুই দফা বন্যায় ফসলের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পতিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। সরকারী হিসাবে এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৭৬ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। মৃতের সংখ্যা ১৪০ জনের মতো। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রথম থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সতর্কীকরণ পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। কিন্তু বন্যা ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা গেলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। তারা বলেন, অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঠিক মতো পরিচর্যা বা সংস্কার করা হয় না বছরের পর বছর। ঠিক মতো পরিচর্যা করা হলে বন্যার এই ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে তাদের বাঁধ রয়েছে প্রায় ১১শ’ কিলোমিটার। এর মধ্যে এবারের বন্যায় ২৮০ কিলোটিমার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণরূপে ধসে গেছে। এবারের বন্যায় নিয়ন্ত্রণ বাঁধের এত ক্ষতি হয়েছে যে, গত ১০ বছরে যেখানে পানি উঠেনি, সেই এলাকা এবার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে তলিয়ে যায়। এছাড়া বন্যায় ৩২টি জেলায় ঘরবাড়ি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ও খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। তাদের পোষা গবাদি পশু হাঁস-মুরগির নিয়েও বিপদ চরমে উঠে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে অন্যবারের তুলনায় এবারের বন্যায় আলাদা কিছু বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা গেছে। তা হলো দ্বিতীয় দফায় দ্রুত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়া। এত কম সময়ে এত বেশি পরিমাণ পানি আগের কোন বন্যায় বাড়তে দেখা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগস্টের ১১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত যমুনায় গড়ে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার করে পানি বেড়েছে। সেটা প্রায় দেড় ফুটের মতো। এর আগে এত অল্প সময় পানি দ্রুত বাড়েনি। পদ্মার পানি কিছু জায়গায় বিপদসীমার ওপরে আছে এবং এ কারণে পদ্মা তীরবর্তী গ্রামগুলোতে এখন বন্যা হচ্ছে। তবে গঙ্গা তথা পদ্মার পানি ১৯৮৮ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬২ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৯৯৮ সালের বন্যায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। কিন্তু এ বছর ২২ আগস্টের হিসাবে পদ্মার পানি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উজান থেকে নেমে আসা এবং ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এবার উত্তরাঞ্চলে দুই দফা বন্যা দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত উত্তরের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়নি। প্রথমবারের বন্যায় যমুনার পানি জুলাইয়ের ৬ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। ১৪ তারিখ থেকে পানি কমে। কমার পর ১৭-১৮ তারিখ পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যায়। পরবর্তীতে আবার আগস্ট মাসে পানি ১০ তারিখ থেকে বৃদ্ধি পায়। পানি এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে এগারো তারিখ বারো তারিখ থেকে আবার বিপদসীমার ওপরে উঠে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী শুক্রবার পর্যন্ত ১৫ নদীর ২২ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তারা জানায়, দেশের অধিকাংশ নদী থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। সর্বশেষ ৯০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯ পয়েন্টে পানি কমছে। এছাড়া ২০ পয়েন্টের পানি কমছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। তবে সাধারণত সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত দেশে বন্যার আশঙ্কা থাকে।
×