ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষাতকারে লেবাননের রাষ্ট্রদূত

দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে লেবাননে অভিবাসন ব্যয় কমবে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৬ আগস্ট ২০১৭

 দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে লেবাননে অভিবাসন ব্যয় কমবে

তৌহিদুর রহমান ॥ লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার বলেছেন, লেবাননে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দালালদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে লেবাননে অভিবাসন ব্যয় অনেক কমবে। জনকণ্ঠকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। আবদুল মোতালেব সরকার দু’বছর ধরে লেবাননের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকায় অবস্থানকালে জনকণ্ঠকে এই সাক্ষাতকার দেন তিনি। লেবাননে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে খরচ কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল মোতালেব সরকার বলেন, লেবাননে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় হাজার কর্মী যাচ্ছেন। তবে এসব কর্মিনিয়োগের ক্ষেত্রে দালালদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। কোন কোন কর্মিনিয়োগের ক্ষেত্রে দালালদের ৪ থেকে ৫ হাত বদল হয়ে থাকে। প্রতি হাত বদলে ৪ থেকে ৫শ’ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে লেবাননে কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় কমবে। যে কোন মূল্যে আমাদের এই দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে কতজন বাংলাদেশী রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেবাননে এখন আনুমানিক এক লাখ ৪০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি জানান, লেবাননে মূলত দুটি খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা যাচ্ছেন। সেখানে বেশিরভাগ মহিলা কর্মীরাই কাজ করছেন। একটি হাউস মেট, অপরটি ক্লিনার। লেবাননের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করছেন বলে তিনি জানান। লেবাননে অন্যান্য খাতে বাংলাদেশী কর্মীদের কাজের সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেবাননের জনসংখ্যা চার মিলিয়ন (৪০ লাখ)। এর মধ্যে প্রায় এক মিলিয়ন (১০ লাখ) লোক বাইরের। সেখানে বিভিন্ন দেশের কর্মীরা কাজ করছেন। তাই সেখানে কাজের সুযোগ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশের নারী কর্মীরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। লেবাননে কর্মরত নারীরা এই ধরনের শিকার হচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেবাননে বাংলাদেশের নারী কর্মীদের নির্যাতনের হার খুবই কম। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে দূতাবাসে নির্যাতনের শিকারের অভিযোগ এলে, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকি। বাংলাদেশে লেবাননের বা লেবাননে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের কোন সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে এলএনজি গ্যাস খাতে লেবানন বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা গত বছর অক্টোবরে লেবাননে একটি বিজনেস ক্যাম্পেইন করেছি। সেখানে দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অবশ্য লেবাননেও বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পোশাক ও ওষুধ খাতে সেখানে বাংলাদেশীদের বিনিয়োগের একটি বিশেষ সুযোগ রয়েছে। লেবানন সরকার চায় সেখানে বাংলাদেশীরা বিনিয়োগে করুক। লেবানন সরকার সেখানে অবৈধ নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশী সেখান থেকে ফিরেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুল মোতালেব সরকার বলেন, এ বিষয়ে আমরা দূতাবাস থেকে উদ্যোগ নিয়েছি। প্রায় চার হাজার বাংলাদেশী দেশে ফেরার জন্য আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশীকে দেশে পাঠানোও হয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশীদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আগামী ঈদ ও হজ মৌসুমে বিমান টিকেটের মূল্য বেশি। সে কারণে এই মৌসুম শেষে তারা আরও কম খরচে ফিরতে পারবেন। বিভিন্ন দূতাবাসে প্রবাসীরা যথাযথ সেবা পায় না এমন অভিযোগ রয়েছে। লেবানন দূতাবাসে বাংলাদেশী প্রবাসীদের সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, লেবানন দূতাবাসের সেবা নিয়ে নিয়ে সেখানের বাংলাদেশী প্রবাসীরা সন্তুষ্ট। আমাদের দূতাবাসে যারাই গিয়েছেন, তারাই সেবা পেয়েছেন। তবে আমাদের দূতাবাসে যথেষ্ট জনবল নেই। সেখানে কোন লেবার উইংও নেই। সেখানে জনবল বাড়ালে আরও সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। আবদুল মোতালেব সরকার জানান, লেবানন দূতাবাসের বিদ্যমান সেবা কার্যক্রমে আরও গতি আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। সেখানে সেবার মান বৃদ্ধি ও প্রবাসীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। সেখানে যে কোন সময় প্রবাসীরা যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আমরা ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পও করেছিলাম। এমন নানা উদ্যোগ আমরা নিয়েছিল।
×