ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োজনীয় ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা ও চেকপোস্ট স্থাপন করা হচ্ছে

ঈদ সামনে রেখে যে কোন অপরাধ রোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৬ আগস্ট ২০১৭

ঈদ সামনে রেখে যে কোন অপরাধ রোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

শংকর কুমার দে ॥ এবারের পবিত্র ঈদ-উল-আযহা (কোরবানির ঈদ) সামনে রেখে পথে পথে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চামড়া পাচার, ডাকাতি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, জালনোটের ব্যবসা, প্রতারণা বন্ধে ও যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক অপরাধ কার্যক্রম বেড়ে চলেছে। ঈদের সময় সব ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা ও চেক পোস্ট স্থাপন, টহল টিম গঠন করে মহাসড়ক পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীকে তাদের টহল জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, প্রতিবছরই ঈদের আগে ডাকাতি, ছিনতাই-মলম পার্টি, জাল নোটের ব্যবসা দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। বেড়ে যায় পথে ঘাটে চাঁদাবাজি ও যানজট। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে ঈদকেন্দ্রিক অপরাধ কার্যক্রম প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পেয়ে ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করেছে। নির্বিঘেœ, নিরাপদে, নিশ্চিন্তে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উদযাপন নিশ্চিত করার জন্য এ সময়ে বাস টার্মিনাল, নৌবন্দর, ফেরিঘাট ও রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র‌্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মোতায়েন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, গত রবিবার ময়মনসিংহের গোপালপুর গ্রামে দুই নৈশপ্রহরীকে খুন করে ১০টি গরু লুটের ঘটনা ঘটেছে। একই রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাজিয়ারচরে হামলা চালিয়ে অন্তত ৩০টি গরু নিয়ে গেছে ডাকাতরা। বাধা দিতে গেলে ডাকাত দলের গুলিতে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ সাতজন আহত হন। পরবর্তী সময় সারাদিন অভিযান চালিয়ে বিকেলের দিকে ২১টি গরু উদ্ধার ও একজনকে আটক করেছে পুলিশ। কোরবানি সামনে রেখে খামারি ও বন্যাদুর্গত মানুষ গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে বাজারে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক শ্রেণির অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। দেশের বিভিন্নস্থানের পথে ঘাটে গরু ও পশু বহনকারী ট্রাক ও যানবাহনগুলোতে চাঁদাবাজি ঘটার অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। যেখান থেকে যখনই অপরাধ কার্যক্রমের অভিযোগ আসবে তখনই দ্রুত অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গরু ও পশু ব্যবসায়ীদের দিনরাত অতিবাহিত হয় পথে বা গরুর হাটে। এসব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকে মূল্যবান পশু কিংবা বড় অঙ্কের নগদ অর্থ। তাই তারা এখন সবখানে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞান পার্টিসহ নানা ধরনের অপরাধী চক্রের টার্গেটে পরিণত হন। প্রতিবছরই দেখা যায় পশু ব্যবসায়ীরা সড়ক-মহাসড়কে নানাভাবে বিড়ম্বিত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি ছিনতাই ডাকাতি পশু ব্যবসায়ীদের সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে পশুবাজারকেও প্রভাবিত করে এমন অপরাধী কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পথে পথে চাঁদা দিতে গিয়ে পশুর দাম বেড়ে যায়, যার মাসুল দিতে হয় ক্রেতাকে। এজন্য ঈদের আগে বিশেষ নিরাপত্তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের প্রাক্কালে মহাসড়কগুলোতে যানজট এড়াতে ২৮ আগস্ট থেকে কয়েক ধাপে শ্রমিকদের ঈদের ছুটি দেয়ার জন্য কারখানা মালিকদের পাশাপাশি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে গত রবিবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও কারখানা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শ্রমিকরা যাতে করে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেজন্য ঈদের আগেই তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব ডঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, অতিরিক্ত আইজিপি ডঃ জাভেদ পাটোয়ারি, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মানুষ যাতে নির্বিঘেœ ও শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করতে পারে সেজন্য সরকার দেশব্যাপী বিশেষ নিরপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চাঁদাবাজি বন্ধে এবং চামড়া ছিনতাই ও পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা ও চেক পোস্ট স্থাপন করা হবে। ঈদের সময় সব ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে মহাসড়ক পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আনসার তাদের টহল জোরদার করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মহাসড়কের পাশে কোন ধরনের পশুর হাট বা হাট-বাজার বসতে দেবে না। যানজট এড়াতে ঈদের তিন দিন আগে থেকে ওষুধ, খাবার ও পশুবাহী ট্রাক ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে অন্য কোন যানবাহন চলাচলসহ বালুবোঝাই জলযানও চলাচল করতে দেয়া হবে না। অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের শনাক্ত করতে ও ছিনতাই প্রতিরোধে অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। জালনোট শনাক্তকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মেশিন সরবরাহ করবে পশুর হাটগুলোতে। এবার রাজধানীতে ২৩টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য লঞ্চ ও বাসগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুসলিম ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাত্রা ও নিরপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
×