ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবার শুরু রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান, রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি প্রধান আতাউল্লা পাকিস্তানী

রক্তাক্ত রাখাইন

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৬ আগস্ট ২০১৭

রক্তাক্ত রাখাইন

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর আবারও শুরু হয়েছে বর্বরতম কায়দায় দমন, নিপীড়ন ও নির্যাতন। ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে সেনা, পুলিশ, অসহায় রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশুসহ শতাধিক। রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চল। রাখাইন রাজ্যে ইতোপূর্বে সংঘটিত হত্যাকা-সহ নির্যাতনের ঘটনাবলী নিয়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের রিপোর্ট বৃহস্পতিবার পেশের পরই রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় রোহিঙ্গাবিরোধী রক্তাক্ত অভিযান। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতি জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী ইতোমধ্যে সে দেশের সেনা, পুলিশসহ শতাধিক রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশুসহ অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আবারও দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। বিজিবি সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে। কিন্তু বিভিন্ন ফাঁকফোকর গলিয়ে ঢুকে পড়েছে বহু রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু। সীমান্তের ওপারে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নরনারী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে তৎপর। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবিও তাদের তৎপরতা ইতোপূর্বেকার চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আনান কমিশন রিপোর্ট মিয়ানমার সরকারের পক্ষে যায়নি। ৬৩ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে সীমান্তের ওপারে এবং এপারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত আচরণসহ তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বিলম্ব না করে দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই শেষে তা নিশ্চিত করতে আহবান জানানো হয়েছে। আনান কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে কোফি আনান বৃহস্পতিবার বিকেলে সে দেশে অবস্থানরত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে যে বিবরণ তুলে ধরেছেন তাতে রাখাইন রাজ্যে ইতোপূর্বে সংঘটিত রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতনের সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আশ্রিত ও শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তারা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাও মিয়ানমার সরকারের কাছে রিপোর্টের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে যে ৮৮টি সুপারিশ রয়েছে তাতে রাখাইন রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তা, তাদের অবাধ চলাচল, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয় নিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর এ পর্যন্ত অমানবিক নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং নাগরিকত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে তা নিয়ে সার্বিক বিশ্লেষণমূলক বক্তব্য দেয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। সূত্র জানায়, এতে আনান কমিশনের রিপোর্টে মিয়ানমার সরকারের সীমান্তরক্ষী, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের অমানবিক আচরণের দিকটিই ফুটে উঠেছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব নিজ হাতে এ রিপোর্ট সে দেশের সরকারী শীর্ষ কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়ার পরই তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং এতে আবারও ফুঁসে উঠেছে সে দেশের সরকার ও সরকার নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, পাশাপাশি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও। রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় রোহিঙ্গাবিরোধী নতুন রক্তাক্ত অভিযান। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওপারের বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী মিয়ানমারে সরকারী বাহিনী ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া দু’পক্ষের ওই হামলায় পুলিশ-সেনাসহ শতাধিক রোহিঙ্গা মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রাখাইনে মংডু, বুচিদং ও রাচিদং অঞ্চল মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে যত্রতত্র পড়ে আছে লাশের পর লাশ। লাশের মিছিলের পরও থামছে না সে দেশের সেনা, পুলিশ ও বিজিপি সদস্যদের গুলি বর্ষণ। সেখানকার মংডু, বুচিদং ও রাচিদং এ তিনটি অঞ্চলে শুক্রবার রাতে ঘুমন্ত রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাতের আঁধারে ল-ভ- করে দেয় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলো। ফলে একের পর এক প্রাণ হারাতে থাকে অসহায় রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু। আবার রোহিঙ্গা সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের পাল্টা আক্রমণে সে দেশের সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীদের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে সেখানকার অবস্থা অবর্ণনীয়। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রকৃত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। গণমাধ্যম কর্মীদের সেখানে যাওয়ার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। তাই আসল চিত্র উঠে আসছে না। রোহিঙ্গা পাড়াগুলোতে চলছে আহাজারি ও কান্নার রোল। আবার বহু রোহিঙ্গা যে যেভাবে পারে ঘরবাড়ি ত্যাগ করে শুধু পালাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতেও মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিবর্ষণ ও ভারি অস্ত্রের ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে টেকনাফ ও উখিয়ার রহমতের বিল এবং নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বরাবর সীমান্তের মিয়ানমার অভ্যন্তরে অজস্র গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরতরা। মংডু, বুচিদং এবং রাচিদংয়ের সর্বত্র রোহিঙ্গা পল্লীতে একযোগে সিরিজ হামলা চালানোর ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের দিকে ফিরে না তাকিয়ে রোহিঙ্গারা নিজের প্রাণ বাঁচাতে তৎপর। গুলিবিদ্ধ ও বিভিন্নভাবে আক্রান্ত রোহিঙ্গারাও অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যরা তৎপরতা আরও জোরদার করায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে সহজে অনুপ্রবেশ সম্ভব হয়ে উঠছে না। রাখাইন অঞ্চলে ইতোমধ্যে ১০ টিরও বেশি গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেসব রোহিঙ্গা বেঁচে আছে তারা পাহাড়ের গহিন অরণ্যে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেও তাদের ধাওয়া করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে । প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, রাচিদং এলাকার শিলখালীগ্রাম ঘেরাও করে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে মিয়ানমারের সৈন্যরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে অন্তত ২০ নিরীহ রোহিঙ্গার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শুক্রবার রাতে ঘুমন্ত রোহিঙ্গাদের গ্রাম ঘেরাও করে সেনারা তাদের অভিযান শুরু করে। গ্রামটির অধিকাংশ বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, গ্রামের নারী শিশুসহ যারা বেঁচে আছে তারা প্রাণভয়ে বনে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সেখানেও তাদের রেহাই নেই, ধাওয়া করা হচ্ছে তাদের। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, বরং সাত দশক ধরে চলে আসা সুপরিকল্পিত গণহত্যার চূড়ান্ত পর্ব। মিয়ানমার মিলিটারি চূড়ান্ত পর্ব শুরু করতে এমন এক সময়কে বেছে নিয়েছে, যখন মিয়ানমার দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পথে পা রেখেছে। যাতে সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা গণহত্যার দায় এড়াতে সক্ষম হয়। যে সকল রোহিঙ্গা খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিরোধ করেছে, তারা তাদের সুনির্দিষ্ট দাবিদাওয়া পেশ করে যে কোন চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে বলেছে এ ধরনের কোন কিছু প্রমাণ করতে পারলে তারা যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিলে তারা মূলধারায় ফেরত যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে, তাদের সংগ্রাম কোন গোষ্ঠীর-বেসামরিক জণগণের বিরুদ্ধে নয় বরং ঐ সকল স্বার্থান্বেষীর বিরুদ্ধে যারা সাত দশক ধরে নির্মমভাবে রোহিঙ্গা নিধন করে চলেছে। রোহিঙ্গাদের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজ দেশে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশবিহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এবং শুক্রবার সকালে ও জুমার নামাজের পর যেসব এলাকায় গুলি বর্ষণের শব্দ এপার থেকে শোনা গেছে, মিয়ানমার অভ্যন্তরে ওই এলাকাগুলো হচ্ছে, তুমব্রু, ঢেকিবনিয়া, গাইট্টবনিয়া ও চাকমাকাটা। এছাড়াও মংডু, বুচিদং ও রাচিদং এলাকার অন্তত ১০টি রোহিঙ্গা পল্লীতে সরকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর গুলি বিনিময় হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বিদ্রোহী রোহিঙ্গারা ২৪টি পুলিশ পোস্টে হামলা করেছে বলে মিয়ানমার সরকার দাবি করে বলছে, হামলা চালানোর পাশাপাশি একটি সেনাঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। রাতভর চলা ওই সংঘর্ষে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে। মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, নিহতদের মধ্যে ২১ রোহিঙ্গা, ১০ পুলিশ এবং ১ সেনা সদস্য রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের হামলায় ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে বড় আকারের সামরিক অভিযান হয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যাকা-, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় থেকে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকা-কে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের শামিল বলে উল্লেখ করে। চলতি মাসে রাথেটং শহরে নতুন করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ এলাকায় রাখাইন ও রোহিঙ্গা দুই সম্প্রদায়েরই বসবাস। সে কারণে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গাদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দেশটির সরকারী কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় ১৫০ রোহিঙ্গা একটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তাদের প্রতিহত করে। সেনাবাহিনী জানায়, বিদ্রোহীদের হামলা এবং পাল্টা অভিযানে এক সেনা সদস্য, ১০ পুলিশ ও ২১ বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। রাখাইন রাজ্য নিয়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পক্ষ থেকে এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার একদিন পরই পুলিশের ওপর হামলা হলো। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শুক্রবার রাতে ব্যাপক গুলাগুলির শব্দ শোনার পর শুক্রবার ভোরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে সারিবদ্ধ রোহিঙ্গার নৌকা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে। এদের মধ্যে ৩ শতাধিক নারী, শিশু, পুরুষ ও বৃদ্ধের একটি রোহিঙ্গা দল টেকনাফ হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি সদস্যরা তাদেরকে আটক করে ফেরত পাঠিয়েছে স্বদেশে। সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারে আল-ইয়াকিন নামক একটি রোহিঙ্গা সংগঠন (বর্তমান নাম আরসা) শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে সারারাত গোলাগুলি করে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় জমানো রোহিঙ্গাদের শুক্রবার সকাল ১১টায় টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম ও উপ-অধিনায়ক মেজর শরিফুল ইসলাম ও বিজিবির সদস্যরা উলুবনিয়া সীমান্তে ঝাউবাগান পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পুশব্যাক করেছে। টেকনাফ ২বিজিবির সিও লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সীমান্তে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুশব্যাক করা হয়েছে। আল-ইয়াকিন নাম পরিবর্তন উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আল-ইয়াকিনের লোকজন রয়েছে। এছাড়া হারকাত আল-ইয়াকিন নামে পরিচিত রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন চলতি বছরের মার্চ মাসে নাম পরিবর্তন করেছে। এটি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামে আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রধান হচ্ছে মোঃ আতাউল্লা। তার জন্ম পাকিস্তানে। তার পিতা রাখাইন রাজ্য থেকে ধর্মীয় নিপীড়নে পাকিস্তানে অভিবাসী হয়েছিলেন। পরে তার পরিবার সৌদি আরবের মক্কায় বসবাস শুরু করে। মিয়ানমারকে সতর্ক বাণী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন বন্ধ করতে ইতোপূর্বে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক করেছিল ‘আরসা।’ রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) তথা ‘আরসা’ রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা বন্ধ না হলে প্রতিশোধ নেয়ারও হুমকি দিয়েছিল। ১৮ মিনিটের বেশি এক ভিডিও বার্তায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রচেষ্টার প্রশংসা করে এআরএসএ নেতা মোঃ আতাউল্লাহ আবু আম্মর জুনুনি বলেন, এ লড়াই একান্তই নিজেদের অধিকারের জন্য। রোহিঙ্গাদের ওপর সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ, হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও, পোড়াও অব্যাহত রেখেছে বলে দাবি করে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। বিশ্বের নেতাদের উদ্দেশে আরসা নেতা জুনুনি বলেন, বর্মী সেনারা মিয়ানমারের রাচিদং এলাকায় গত ২০ দিন ধরে রোহিঙ্গাদের ঘিরে রেখেছে এটা খুবই দুঃখজনক। এমনকি সেনাদের সঙ্গে রাখাইনরাও রয়েছে। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলাফেরা বন্ধ হওয়ায় তাদের না খেয়ে মরতে হচ্ছে। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আশা করি আন্তর্জাতিক নেতারা এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। তাই প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশেকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান প্রতিবেশী দেশকে। তবে এআরএসএর সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে তিনি জানান, মিয়ানমার শাসকদের নির্যাতন থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের মুক্ত করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি ভিডিও বার্তায় বলেন, আমাদের ওপর ৭০ বছরের বেশি ধরে মিয়ানমারের সরকার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, গেল বছরের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় পড়ে রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। গত আগস্টে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউন সান সুচি রাখাইন রাজ্যের অস্থিরতা খতিয়ে দেখতে গঠিত একটি কমিশনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য কোফি আনানকে অনুরোধ করেন। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী আউন সান সুচি এই কমিশন গঠনে বাধ্য হন।
×