ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেফ্রোটিচ স্যন্ডরমিতে ভুগছে শিশু সুমাইয়া ॥ লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২৬ আগস্ট ২০১৭

নেফ্রোটিচ স্যন্ডরমিতে ভুগছে শিশু সুমাইয়া ॥ লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ মাত্র ৭ বছর বয়সেই হাসপাতালের বিছানায় বসে-শুয়ে দিন কাটাচ্ছে সুমাইয়া। সে কিডনিজনিত ‘নেফ্রোটিচ স্যন্ডরমি’ রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে সুমাইয়া রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড-১১ এর ১৫ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। তার শরীরে পানি জমে গেছে। ফুসফুসে পানি চলে আসায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে তার। ভালভাবে কথা বলতেও পারছে না সুমাইয়া। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হবে সুমাইয়াকে। এজন্য অর্থের প্রয়োজন যা সুমাইয়ার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সঠিক চিকিৎসা না পেলে সুমাইয়াকে না ফেরার দেশে চলে যেতে হবে। তাই সুমাইয়ার পরিবার সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন যেন তাদের মেয়েটি সরকারী চিকিৎসায় সুস্থ হতে পারে। সুমাইয়া পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার দাশেরকাঠি গ্রামের দিনমজুর ফোরকান খন্দকার ও গৃহিণী মাহেনুরের চার মেয়ের মধ্যে তৃতীয়। দিনমজুর পরিবারের ছোট্ট শিশু সুমাইয়া স্থানীয় নুরানি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। কথা বলতে কষ্ট হয় সুমাইয়ার। তবুও সে শুয়ে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করে। তার মাকে বলে, ‘মা, আমার পরীক্ষা চলছে, আমাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাবা না।’ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বেডে কিছু সময় শুয়ে আবার কিছু সময় বেডের পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দিন কাটছে সুমাইয়ার। বেশি সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে পারছে না ছোট্ট সুমাইয়া। সুমাইয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তার বাবা ফোরকান খন্দকার জনকণ্ঠকে জানান, ‘আড়াই মাস আগে সুমাইয়ার জ্বর হয়। সেই সময় সুমাইয়ার মুখ ও শরীর ফুলে গেলে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে যাই। এরপর শরীরের তাপমাত্রা কমলেও মুখ ফোলা কমছিল না। এরপর থেকে সুমাইয়া আরও অসুস্থ হতে থাকে। তাকে নেয়া হয় বরিশাল মেডিক্যালে। সেখানে ডাক্তাররা সুমাইয়ার চিকিৎসা করে জানান, তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর স্থানীয়দের পরামর্শে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু এখানে ডাক্তাররা বলেছেন সে সুস্থ হবে কিন্তু অনেক টাকা লাগবে। আর সরকারীভাবে না-কি এ হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয় না। সুমাইয়ার সকল ওষুধ কিনতে হচ্ছে। একেকটি ইনজেকশনের দাম ৫ হাজার টাকা। রাজমিস্ত্রির কাজ করে কিভাবে আমি মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করব তা আমার অজানা।’ তবে সুমাইয়া বেঁচে থাকতে পারবে সেই আশার কথা জানিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক নিহার রঞ্জন সরকার। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘সুমাইয়ার কিডনি এখনও নষ্ট হয়নি। নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম। মূলত কিডনি সমস্যা থেকেই ‘নেফ্রোটিচ স্যন্ডরমি’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে সুমাইয়া। তবে তার সঠিক চিকিৎসা করলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে সে।’ সুমাইয়ার মা মাহেনুর জনকণ্ঠকে জানান, ‘আড়াই মাস আগে সুমাইয়ার জ্বর হলে যখন ওর মুখ ও শরীর ফুলে যায়, তখন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়েছিলাম। এরপর শরীরের তাপমাত্রা কমলেও মুখ ফোলা কমছিল না। সুমাইয়ার মুখ ফোলা না কমার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় ওই চিকিৎসক বলেন, আস্তে আস্তে কমে যাবে। মায়ের আকুতি তার সুমাইয়াকে বাঁচাতে চান। এজন্য যা করতে হবে তাকে, তিনি তাই করতে প্রস্তুত। তবুও সুমাইয়ার স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে চান মা। সরকারের কাছে তিনি সুমাইয়ার চিকিৎসার সাহায্য চেয়েছেন। তিনি জানান, সবরকম ওষুধ আমাদের কিনতে হচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন বিত্তবানের কাছ থেকে কিছু অর্থ যোগাড় করে ঢাকায় এসেছিলাম। তাও ফুরিয়ে গেছে। কিভাবে মেয়ের চিকিৎসা চালাবো আমরা? সুমাইয়ার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চিকিৎসার যে অর্থের প্রয়োজন তা সুমাইয়ার বাবা-মায়ের নেই। এ জন্য দেশের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তার অসহায় বাবা-মা। সুমাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭৫৬২৯৫৬৯৩ নম্বরে।
×