ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোয়েল চাষে স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৬ আগস্ট ২০১৭

কোয়েল চাষে স্বাবলম্বী

নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস, ইচ্ছা, ধৈর্য আর চেষ্টা থাকলে অনেকভাবেই আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। বুদ্ধিমত্তা আর চেষ্টা থাকলে আয়ের উৎস খোঁজাটা শুধু সময়ের ব্যাপার। তাই আত্নবিশ্বাস, ইচ্ছা, ধৈর্য আর চেষ্টা মানুষকে উন্নতির দিকে ধাবিত করে। কথায় আছে ‘যে নিজেকে সাহায্য করে, সৃষ্টিকর্তা তাকে সাহায্য করে।’ যত ছোটই হোক না কেন কোন কাজ মানুষকে খাটো করে না-বরং উন্নতির চাবি হাতে ধরিয়ে দেয়। তেমনি একটি ছোট্ট কাজ অর্থাৎ কোয়েল পাখি চাষ করে লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে মাদারীপুরের এক শিক্ষিত যুবক শ্রাবণ হাসান সজল। এখন আর তাকে কারও কাছে লেখাপড়ার ব্যয় ও হাত খরচ চাইতে হয় না। এখন সে নিজেই মানুষকে সহযোগিতা করতে পারে। পোল্ট্রির জগতে ক্ষুদ্র পাখি কোয়েল। আগে বন-বাদারে ঘুরে বেড়ালেও এখন বাণিজ্যিকভাবে খামারে চাষ হচ্ছে কোয়েল পাখি। মাদারীপুর অঞ্চলের আবহাওয়া কোয়েল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। কোয়েল পাখির খামার করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছে সদর উপজেলার কেন্দুয়ার সজল নামের এক যুবক। কোয়েল পাখির ডিম ও পাখি বিক্রি করে তিনি এখন লেখাপড়ার খরচ চালিয়েও স্বাবলম্বী। শুধু তাই নয় কোয়েলের পাশাপাশি পালন করছেন সোনালি জাতের মুরগি। সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের শ্রীনাথদী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মজিবুর রহমানের ছেলে শ্রাবণ হাসান সজল। সজলের বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলেছেন কোয়েল পাখির একটি ছোট্ট খামার। বাড়ির পাশে নিজেদের প্রায় দুই শতাংশ জমিতে প্রশস্ত একটি ঘর তৈরি করে তার চারপাশে নেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কোয়েল পাখির খামার। সজল বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে ডক্টর অব ভেটেনারি মেডিসিন (প্রাণী চিকিৎসা) ৩য় বর্ষের ছাত্র। বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তির শুরুতে লেখাপড়া ও হাত খরচ ম্যানেজ করার জন্য কিছু একটা কাজ খুঁজছিল, যাতে আর্থিক সংস্থান করা যায়। হঠাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোয়েল পাখি পালন সম্পর্কে জানতে পারে সে এবং তখন বিক্রয় ডটকম থেকে এক কোয়েল পাখির খামারির নাম্বার সংগ্রহ করে তার কাছ থেকে ২০০ পিস ১ মাস বয়সী কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনে নিয়ে এসে শুরু করেন কোয়েল পাখির খামার। পাখিগুলো যখন ১মাস পর থেকে ডিম দিতে শুরু করল, তখন থেকেই ভাবতে লাগল সজল এটা আসলেই একটি লাভজনক হবে। অবশ্য সে সময়ে তার পিতা সৌদি প্রবাসী মজিবুর রহমানের কাছ থেকে কিছুটা আর্থিক সাপোর্ট পেয়েছে। মা জামিলা বেগমের শ্রম ও সহযোগিতায় যশোর থেকে আরও এক হাজার পিস ১ মাস বয়সী কোয়েল পাখি কিনে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করে সজল। ১টি স্ত্রী কোয়েল ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে। এরা ১৮ মাস পর্যন্ত ডিম দেয়। সজল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে অবস্থানকালে খামারের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন তার মা জামিলা বেগম। মায়ের সহযোগিতা ও উৎসাহের কারণে সজল আরও অনুপ্রেরণা পায়। বর্তমানে তার খামারে প্রায় ২ হাজার ৫ শ’ কোয়েল রয়েছে। প্রতিদিন ডিম পাচ্ছে গড়ে ৮ শ’। খামারে প্রতিদিন তিনি ডিম বিক্রি করে ১ হাজার ৬ শ’ টাকা আয় করেন। প্রতিমাসে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় করে সজল। বেকার সজল কোয়েল পাখির খামার দিয়ে বেকারত্বকে পরাজিত করে অল্প বয়সেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। সজল তার নিরলস প্রচেষ্টার কারণে তার বেকারত্বকে বলি দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। সজলের এই সাফল্যকে উৎসাহ দিচ্ছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। প্রয়োজনে প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন সহযোগিতা লাগলে অবশ্যই তাকে তা দেয়াও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। কোয়েল পাখি পালনে বেশ সুবিধা রয়েছে। কোয়েল দ্রুত বর্ধনশীল, মাত্র ৬-৭ সপ্তাহে ডিম দিতে শুরু করে। ডিমে কোলেস্টরেল কম, প্রোটিনের ভাগ বেশি। মাত্র ১৭/১৮ দিনে কোয়েলের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। হাঁস-মুরগির চেয়ে কোয়েলের রোগ বালাই নেই বললেই চলে। রয়েছে অল্প পূঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×