ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের রেফারেন্স টানার পেছনে উদ্দেশ্য কী?

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৬ আগস্ট ২০১৭

পাকিস্তানের রেফারেন্স টানার পেছনে উদ্দেশ্য কী?

এ যাবত পৃথিবীর দেশে দেশে যত বিপ্লব হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা একজন প্রথমে জনগণকে সংগঠিত করেছেন। সেই সংগঠিত জনগণ তার পেছনে হাঁটতে হাঁটতে তাকেই তাদের নেতা বানিয়েছে। অর্থাৎ নেতা সংগঠিত জনগণ সৃষ্টি করেন এবং সংগঠিত জনগণ নেতা সৃষ্টি করেন। যেমন মহাত্মা গান্ধী, মাও জে দং, ভøাদিমির ইলিচ ইলিয়ানভ লেনিন, সুকর্ণ কিংবা ফিদেল ক্যাস্ট্রো ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিতে গিয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পর্যবেক্ষণের নামে এখতিয়ার বহির্ভূত মন্তব্য করে সমাজে যে রাজনৈতিক ঝগড়া সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে তাকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কি পদক্ষেপ নেবেন না নেবেন, পদত্যাগ করবেন না পর্যবেক্ষণ সংশোধন করবেন, তা তিনিই ভাল জানেন। এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি কয়েকটি উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন- ১. কোন একক ব্যক্তির নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি, ২. জাতীয় সংসদ অপরিপক্ব, ৩. পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের রেফারেন্স টেনে সতর্কতা প্রদান। এই শেষ মন্তব্যটির পেছনে কোন অশুভ ইঙ্গিত আছে কি না ভাববার বিষয়। বিচারপতি সিনহার পর্যবেক্ষণের পর বাংলাদেশে কিছু মানুষের উল্লাস-আস্ফালন লক্ষণীয়। বিশেষ করে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী এবং সর্বশেষ ড. খন্দকার মোশাররফের কথাবার্তায় মনে হয় তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি পেয়ে গেছেন। পর্যবেক্ষণের পর পরই দেখা গেল বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল সঙ্গে শিবির যাদের কোন অস্তিত্ব গত এক দশক ধরে কোথাও অনুভূত হয়নি তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মহড়া দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শান্তিকামী ছাত্র সমাজ আর লেখাপড়া নষ্ট করতে চায় না। দেখা গেছে, বিগত দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশনজট সৃষ্টি হয়নি, পরীক্ষা সময়মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পরিবেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল ছাত্রদল। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একটি মন্তব্য শুনে লোকটার প্রতি যে কোন নাগরিকের ঘৃণা জন্মাবে। কদিন আগে একটি টিভি চ্যানেলে তিনি বলছেন- “১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট দুর্ঘটনা মাত্র। অনেক দেশেই ঘটেছে। এর জন্যে এত কান্নাকাটি ক্যানো”? এই খন্দকার খুনী খন্দকার মোশতাকের বংশধর কিনা জানি না তবে তিনি যে ঠা-া মাথায় খুন করতে পারবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, ভাবতে অবাক লাগে। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই এবং হাজী মুহম্মদ মহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। আমরা মহসিন হলের প্রথম ব্যাচ। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের আগে তিনি মহসিন হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার ভেতরে যে একটা হিংস্র্রসত্তা লুকিয়ে আছে কে জানত। এতদিন জানতাম মোশতাক-জিয়া-ফারুক-রশীদ-ডালিম-নূর-হুদারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। এখন জানলাম আগস্ট ট্র্যাজেডির পেছনে আরও লোক রয়েছে। বস্তুত সিনহা সাহেব যে বলেছেন, এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি, এতে খন্দকার মোশাররফরা মোক্ষম অস্ত্র পেয়েছেন। যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মিলিটারি জিয়াকে শত চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড় করানো যায়নি, এবার তাকে দাঁড় করাবার মই পেয়ে গেছেন যেন। জিয়া পতনী খালেদা জিয়াও ১৫ আগস্ট তার ভুয়া জন্মদিন বানিয়ে কেক কাটার যে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, খন্দকার মোশাররফও একই কাজ করলেন। খালেদা জিয়া প্রায় দুই দশক ওই নোংরা চর্চা করে নিজেদের দৈন্যই প্রকাশ করেছেন। প্রথমে জিয়াকে নামানো হলো, সুবিধা হলো না। মিলিটারি জিয়া মিলিটারিই রয়ে গেলেন। তার চালু করা ‘কারফিউ গণতন্ত্র’ থেকে তার দল বা খালেদা কেউ বের হতে পারেননি। মাননীয় প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বরখাস্তের প্রসঙ্গ টানলেন কেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান আমাদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল এবং আজ ব্যর্থ রাষ্ট্র। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের গোফঁওয়ালা পাকিস্তানী জেনারেলরা ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে রীতিমতো নাকে খত দিয়ে জীবন বাঁচিয়ে পাকিস্তান ফিরে গিয়েছিল। সেদিন পাকিস্তানের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীসহ (জেনারেল) ৯৩ হাজার পাকিস্তানী মিলিটারি আত্মসমর্পণ করেছিল। পাকিস্তান অঙ্গীকার করেছিল চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের দেশে নিয়ে বিচার করবে। শিমলা চুক্তির পর ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে তারা সে বিচার করেনি। পাকিস্তান আজ কেবল ব্যর্থ রাষ্ট্রই নয়, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ঘরে বাইরে এর কোন অবস্থান নেই, মর্যাদা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ মহান জাতির মহান পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সময়ের সাহসী রাষ্ট্রনেতা প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ মধ্যম আয়ের দেশ। উন্নয়ন সমৃদ্ধির কোন সূচকে পাকিস্তান আমাদের ধারে কাছেও নেই। পেছনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের মহাসড়কে হাঁটতে শুরু করবে। সেই পাকিস্তানকে উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের কোন নাগরিক যখন আমাদের হুমকি দেয় বা কোন নাগরিক যখন উল্লাস প্রকাশ করে, তখন তাদের ব্যাপারে আমাদের ভাবতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী বাংলাদেশকে আন্ডারমাইন্ড করলে ভুল করবে। পাকিস্তানের কথা বলে যারা এ দেশে স্বর্গের সিঁড়ি বানাতে চায় তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। তারা ঘরে বসে আস্ফালন করতে পারবে সিঁড়িতে পা রাখতে পারবে না। মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে আমরা সেই স্বর্গের বাসিন্দা কল্পনা করতে চাই না। তিনি যখন পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের রেফারেন্স টেনে অনভিপ্রেত ইঙ্গিত করেন তখন আমাদেরও একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। বিশেষ করে, তার সেই ইঙ্গিতে উল্লসিত বিএনপি নামক আরেক ব্যর্থ রাজনৈতিক দল এবং সেই দলের নেতারাও যখন হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন তখন পরিষ্কার হয়ে যায় কার অবস্থান কোথায় এবং টার্গেট কার কি? যারা জাতির পিতার নেতৃত্ব নিয়ে কটাক্ষ করার দুঃসাহস দেখায়, তারা বাংলাদেশের ইতিহাস জানে না। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বা ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়েনি এমন ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে একটাই মন্তব্যÑ তারা এ অঞ্চলের রাজনীতি তথা সমাজ বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে অজ্ঞ। এ যাবত পৃথিবীর দেশে দেশে যত বিপ্লব হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা একজন প্রথমে জনগণকে সংগঠিত করেছেন। সেই সংগঠিত জনগণ তার পেছনে হাঁটতে হাঁটতে তাকেই তাদের নেতা বানিয়েছে। অর্থাৎ নেতা সংগঠিত জনগণ সৃষ্টি করেন এবং সংগঠিত জনগণ নেতা সৃষ্টি করেন। যেমন মহাত্মা গান্ধী, মাও জে দং, ভøাদিমির ইলিচ ইলিয়ানভ লেনিন, সুকর্ণ কিংবা ফিদেল ক্যাস্ট্রো। বঙ্গবন্ধুর জীবনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব কিংবা আত্মজীবনী পড়লে দেখা যাবে কত কম বয়স থেকে তিনি জনগণকে সংগঠিত করার নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি না করে যদি লেখক হতেন তাহলেও তিনি একজন লিও টলস্টয় হতেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলনের মাধ্যমে যখন আওয়ামী লীগ দু’ভাগ হয়ে গেল, তখন তিনি মন্ত্রিত্ব (যুক্তফ্রন্ট) ছেড়ে দিয়ে দলের দায়িত্ব নিলেন। ১৯৬৬ সালে বাঙালী জাতির মুক্তি সনদ ৬ দফা দিয়ে যখন চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে হাঁটা শুরু করলেন ততদিনে বাঙালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে আর তিনি হয়ে গেছেন জাতির পিতা। যে জাতি গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করে, তাঁকে জাতির অবিসংবাদিত নেতায় রূপান্তরিত করল। তারপর একাত্তরের দুনিয়া কাঁপানো অসহযোগ আন্দোলন, কালজয়ী রাজনৈতিক ভাষণ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যম স্বজাতি তো বটেই, বিশ্বের বিপ্লবী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। হবেনই বা না কেন? তাঁর ৬ দফায় স্বায়ত্তশাসনের দাবির আড়ালে ছিল এক দফা তথা স্বাধীনতা। আর সেই ৬ দফা নিয়ে এগিয়ে যাবার জন্যে তৎকালীন বর্ষীয়ান নেতা সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের চীফ মিনিস্টার আতাউর রহমান খানকে অনুরোধ করলে, তিনি দুই পা পিছিয়ে বলেছিলেন, “মাথা খারাপ! তুমি কি আমাকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে বলছো?” কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোন দ্বিধা না করে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ তৎকালীন পাকিস্তানের মিলিটারি শাসক আইয়ুব খান তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। আগেই বলেছি বাঙালী জাতি গণআন্দোলনের মাধ্যমে তাদের নেতাকে মুক্ত করে আনে। জানি না প্রধান বিচারপতি মহাশয় শুনেছেন কিনা যে, বঙ্গবন্ধুকে জীবনের ১৩টি বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে। দুইবার তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার পর ইয়াহিয়ার মিলিটারি জান্তা তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের লায়ালপুর কারাগারে নিয়ে যায় এবং গোপন বিচারে ফাঁসি দেয়ার জন্যে কবরও খুঁড়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানী মিলিটারি তাকে ফাঁসি দিতে না পারলেও বাংলাভাষী কিছু বিভ্রান্ত এবং ভাড়াটিয়া মিলিটারি তাঁর বুকে গুলি চালিয়েছিল। এসব তথ্য সিনহা মহাশয়ের জানা থাকার কথা। না জানলে জেনে নিতে অনুরোধ করব। আমাদের সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে আছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ সাধারণ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জাতীয় সংসদ গঠন করে এবং জনপ্রতিনিধিগণ সংসদে বসে আইন করে জাতীয় বাজেট করে জনগণের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চয়তা প্রদান করে। কোন সাংসদ এর ব্যত্যয় ঘটালে ৫ বছর পর তাকে ভোটার তথা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এইভাবে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন করে, সংসদ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সব সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ দেন। অথচ আমাদের প্রধান বিচারপতি মহাশয় সেই সংসদকেও ‘অপরিপক্ব’ মন্তব্য করে জনগণ তথা বাঙালী জাতিকে অপমান করলেন। এর পেছনে তার উদ্দেশ্য কি? তবে কি তিনিও কোন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর মাথায় বসতে চান? মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর একটি মন্তব্য দিয়ে শেষ করতে চাই- “আদালতের বারান্দায় কোন বিচারপতির রায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদি নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এসেছে”। ঢাকা ॥ ২৪ আগস্ট ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×