ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৬ আগস্ট ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

নাফনদীর বানের মতো আবারও রোহিঙ্গারা ভেসে আসছে। নিজ দেশে পরবাসী হয়েও থাকার উপায় নেই আর তাদের। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত এবং দেশহীন গোত্র রোহিঙ্গারা দুঃসময়কে ধারণ করে টিকে আছে এখনও নিভু নিভু সলতের মতো। কে তাদের দেবে বাঁচার দিশা, কে দেবে জন্মভূমিতে থাকতে পারার নিশ্চয়তা, সবহারা হয়ে ভেসে যাওয়া থেকে কে করবে তাদের উদ্ধার, জানে না তারা নিজেরাও। যেমন জানে না জাতিসংঘ। মৃত্যু আর দেশত্যাগ রোহিঙ্গাদের নিলেও জাতিসংঘ ভরসা দিতে পারছে না। বহু চেষ্টা চালিয়েও জাতিসংঘের সাবেক ডাকসাইটে মহাসচিব কফি আনান কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। যেমন পারেননি আরেক প্রাক্তন মহাসচিব বান কি মুন। তাদের দৃষ্টিতে অনেক কিছু গোচর হলেও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জাতিসংঘ চাইলেই যে কাজ হয় না, এ তার উজ্জ্বল উদাহরণ। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কফি আনান কমিশন গঠন হলেও ওই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আগ্রহী নয় দেশটি। বরং উল্টো তারা বলছে রোহিঙ্গা নিপীড়ন হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা- এটাই হচ্ছে। বেড়েছে দমন নিপীড়ন বর্বরতা আর নির্মমতা। সার্বক্ষণিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও জীবন মরণের শঙ্কা নিয়ে সে দেশে বসবাস করছে এখনও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ। লাখ লাখ রোহিঙ্গা সেই ১৯৭৭ সাল থেকে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, এখনও নিচ্ছে। বাংলাদেশ চায় এরা নিজ দেশে ফিরে যাক। ইতোমধ্যেই বেশকিছু রোহিঙ্গা নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এখনও কোন আন্তরিকতা মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেখানো হয়নি। এছাড়া জাতিসংঘের সুপারিশ মানতে নারাজ আউং সান সুচি। ইসলামী ঐক্যসংস্থা বা ওআইসি রোহিঙ্গা নিধন বন্ধের জন্য বার বার আহ্বান জানালেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নয় সদস্যের কফি আনান কমিশনের সদস্যরা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ এবং দেশত্যাগের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন। সফরের ওপর গত মার্চ মাসে খসড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গত ২৪ আগস্ট। আনান কমিশন সুপারিশ করে যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারকে পরিচয় যাচাইয়ে একটি সমন্বিত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া ও তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের অবাধে রাখাইন এলাকায় যাওয়ার জন্য সুপারিশ রয়েছে। তাছাড়া উভয় দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যৌথ কমিশন জরুরীভাবে গঠনের সুপারিশও করা হয়। এই কমিশন আন্তর্জাতিক আইন মেনে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ ফেরার পাশাপাশি মানব ও মাদক এবং অবৈধ বাণিজ্য, অবৈধ অভিবাসন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে উল্লেখ করা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনাগুলো একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার সুপারিশ করেছিল। সংস্থার বিশেষ দূত দু’দেশে সফর করে প্রতিবেদন পেশ করেন। অবশ্য তাকে সংঘাতপূর্ণ এলাকাতে যেতে দেয়া হয়নি। তবে মিয়ানমার তদন্তে যে কমিশন করে তা নিরপেক্ষ ছিল না। সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারাই তদন্ত করেন, যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ বেশি। কফি আনানের পরিদর্শনকালেও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা বিক্ষোভ দেখায়। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে। জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে চাপও দেয়া হচ্ছে। ১৯৭৭ সাল থেকে আসা শরণার্থীদের ফেরত নেয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মহলের কোন আবেদন নিবেদন, অনুরোধ, অনুনয়ে সাড়া দিচ্ছে না মিয়ানমার। বরং আবারও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা অভিযান শুরু হয়েছে। কারফিউ জারি করে ধরপাকড় শুরু হবার পর শত শত রোহিঙ্গা আবারও বাংলাদেশে আসছে। অত্যাচার নির্যাতনের সম্মুখীন ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তারা নাফনদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। মিয়ানমারের আদি বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের ওপর যা হচ্ছে, তা নিরসনে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতেই হবে। জাতিসংঘকে হতে হবে আরও সক্রিয় এবং কঠোর।
×