ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ রাঙ্গামাটিতে প্রকাশনা অনুষ্ঠান

এই প্রথম বাংলায় ২৫ খন্ডে পবিত্র ত্রিপিটক প্রকাশ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৫ আগস্ট ২০১৭

এই প্রথম বাংলায় ২৫ খন্ডে পবিত্র ত্রিপিটক প্রকাশ হচ্ছে

চট্টগ্রাম অফিস/নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি ॥ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মূল ধর্মগ্রন্থ পবিত্র ত্রিপিটক এই প্রথমবারের মতো মোট ২৫ খ-ে পূর্ণাঙ্গ ও সমগ্ররূপে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। হাজার বছরেরও বেশি সময়ের বাংলাভাষার ইতিহাসে এ ঘটনা এই প্রথম। আজ শুক্রবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই পর্বে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। আজ ভোরে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হবে। দুপুর একটায় শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের অর্থাৎ মূল অনুষ্ঠান। ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে ২৫ খ-বিশিষ্ট পবিত্র ত্রিপিটক ধর্মগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করবেন যৌথভাবে রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ও চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খিসা জানিয়েছেন, পৃথিবীর যে কোন ধর্মাবলম্বীর কাছে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মপ্রাণ মানুষ মাত্রই ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে ধর্মকে সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে হলে এবং অনুশীলন বা চর্চা করতে চাইলে নিবিড়ভাবে মূল ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার কোন বিকল্প নেই। তাই একজন সত্যিকার ধার্মিক ব্যক্তির কাছে ধর্মগ্রন্থের মূল্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকের ব্যাপ্তি ও গভীরতা ব্যাপক ও বিশাল। ছোটবড় মোট ৫৯টি বই মিলিয়েই পূর্ণাঙ্গ ত্রিপিটক। ইতোপূর্বে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে এ বিশাল ত্রিপিটকের বেশিরভাগ বই প্রকাশিত হলেও পূর্ণাঙ্গ ও সমগ্র ত্রিপিটক ইতোপূর্বে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়নি। আরও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিচ্ছিন্নভাবে ত্রিপিটকের কিছু কিছু বই পালি থেকে বাংলায় অনূদিত হলেও সুদীর্ঘ দেড় শ’ বছর কেটে যাওয়ার পরও বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকের পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ দেখার ও পড়ার সৌভাগ্য এদেশের ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধদের এখনও হয়নি। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় বাংলা ভাষার হাজার বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে এই প্রথম ‘পবিত্র ত্রিপিটক’ নামে মোট ২৫ খ-ে একসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ও সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশে সক্ষম হয়েছে। আজ ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের এ দিনটি বাংলার বৌদ্ধ ইতিহাসে একটি গৌরবময় দিন হিসেবে অক্ষয় হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। বাংলা ভাষায় এই প্রথমবারের মতো পবিত্র ত্রিপিটক ২৫ খ-ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশনা অনুষ্ঠান ২০১৭’র পক্ষে। বক্তব্য রাখেন প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আহবায়ক শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির। তিনি জানান, রাজবন বিহারের ভিক্ষুরা এই প্রথম পূর্ণাঙ্গভাবে বাংলায় ত্রিপিটক প্রকাশে সক্ষম হয়েছেন। ইতোপূর্বে পালি ভাষা থেকে বাংলায় খ- খ- ত্রিপিটকের সংস্করণ হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে হয়নি। বাংলা ভাষায় এটি প্রকাশের ফলে একদিকে মহামতি ভগবান গৌতম বুদ্ধের অমূল্য উপদেশ বাণী জানার সুযোগ সৃষ্টি হবে অন্যদিকে এটি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে বলে অনুবাদকারীরা জানান। ত্রিপিটক প্রকাশনা কমিটি সূত্রে বলা হয়েছে, এখন থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে ভগবান গৌতম বুদ্ধ মানবমুক্তির জন্য ধর্ম প্রচার করেছিলেন। সেই সাধনালব্ধ অর্জিত জ্ঞান দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি জীবজগতে হিত-সুখ কামনায় প্রচার করেছিলেন তারই সমন্বিত রূপ হলো ত্রিপিটক। এ ত্রিপিটক থাইল্যান্ড, ভারত, মিয়ানমার, চীন, জাপান, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের ভাষায় সমগ্র ত্রিপিটক অনুবাদ হলেও বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়নি। তবে ত্রিপিটক বিক্ষিপ্তভাবে বাংলানুবাদ হয় ১৮৮৭ সাল থেকে । সূত্র মতে, দেশের বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারের প্রধান ও মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত আর্যপুরুষ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের আশা ও স্বপ্ন ছিল একদিন বাংলা ভাষায় পূর্ণাঙ্গ ত্রিপিটক অনুবাদ করা হবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তারই শিষ্যরা ২০১২ থেকে বাংলায় ত্রিপিটক অনুবাদ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে নয় সদস্যবিশিষ্ট ‘বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশনা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দেড় বছর ধরে ত্রিপিটকের পালি ভাষায় রচিত ৫৯টি গ্রন্থকে ২৫ খন্ডে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে।
×