ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী, উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৫ আগস্ট ২০১৭

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী, উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রীমকোর্টে ষষ্ঠ দিনের মতো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালিত হয়েছে। সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রীমকোর্টে এ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচী ঘিরে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে দিনভর ছিল টানটান উত্তেজনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কঠোর সমালোচনা করে তার সব অনুষ্ঠান বর্জন ও প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। সেøাগান ওঠে তিনি (প্রধান বিচারপতি) শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ হওয়ার কারণে তিনি আর পদে থাকতে পারেন না। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মেসেজ এসেছে, সরকার পতনের ওয়েভ (ঢেউ) তৈরি হয়ে গেছে। দুপুরে সুপ্রীমকোর্টের শামসুল হক চৌধুরী মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কঠোর সমালোচনা করে তার সব অনুষ্ঠান বর্জন ও প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। সংগঠনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি বলেন, আমরা এস কে সিনহার সব কর্মসূচী বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করব। কোন আইনজীবী তার কোন অনুষ্ঠানে যাবেন না। আমাদের দাবি হবে এক দফা এক দাবি। কারণ তিনি (প্রধান বিচারপতি) এরই মধ্যে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের অসাংবিধানিক ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেননি। এরই মধ্যে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ হওয়ার কারণে তিনি আর পদে থাকতে পারেন না। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সবদিক থেকেই আপনি অযোগ্য হয়ে গেছেন। প্রধান বিচারপতির পদটি ধরে রাখার কোন যোগ্যতাই আপনার নেই। একজন বিচারপতি তার জুডিসিয়াল ফাংশান এক্সারসাইজ করার সময় সাংবিধানিক পদের কাউকে ফেক করার যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন সেটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। অক্টোবরের আগেই চলে যাবেন। না হলে অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন করব। মনে রাখতে হবে জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী। আন্দোলনের মাধ্যমেই আপনাকে (প্রধান বিচারপতি) পদত্যাগে বাধ্য করব। সমাবেশে আইনজীবীদের জ্বালাময়ী সেøাগানে প্রতিবাদ সমাবেশস্থল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় সাধারণ আইনজীবীরা কঠোর কর্মসূচী দেয়ার জন্য নেতৃবৃন্দের প্রতি জোর আহ্বান জানান। প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আমাদের সংবিধান বলছে জনগণ সকল ক্ষমতার অধিকারী এবং সংবিধান যেটা বলছে সেটা হলো ক্ষমতাটা ব্যবহার করবে সংসদ। তিনি বলেন, সংসদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। আমার দুঃখ হয় তাকে (প্রধান বিচারপতি) শপথবাক্য পড়িয়েছেন কে? তিনি (প্রধান বিচারপতি) অত্যন্ত বেশি কথা বলে ফেলেছেন। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আরও বলেন, রায়ের যে পর্যবেক্ষণ তা তিনি একা দিয়েছেন। যদি একাই দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকেই তা বাতিল করতে হবে। তা না হলে যে কর্মসূচী দেব তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মামলায় চ্যালেঞ্জ ছিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ। এটাকে তিনি (প্রধান বিচারপতি) হ্যাঁ বা না বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি রায়ে ১১৬ অনুচ্ছেদকে বাতিল করে ফেলেছেন। তিনি প্রেসিডেন্টের ওপর বসতে চান। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যে কর্মসূচী দেবেন, সেটা যদি হয় আমরা আর আপনাকে সুপ্রীমকোর্টে দেখতে চাই না। সেটা যদি হয় আপনি সরকারী গাড়ি ব্যবহারের উপযুক্ত না, আপনি মানুষ হিসেবে সুস্থ আছেন কি-না সে পরীক্ষা-নিরীক্ষাÑ যে কর্মসূচীই দেয়া হবে আমরা তা পালন করব। মানুষের ভাষা বুঝতে হবে, মানুষের সেন্টিমেন্ট বুঝতে হবে। ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিল না করলে যে পরিণতি হবে তার দায়-দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেনÑ সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, সানজিদা খানম এমপি, পরিমল গুহ, আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া, এমএ ফায়েজ, আব্দুল হাই, রবিউল আলম বুদু প্রমুখ। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, মেসেজ এসেছে, সরকার পতনের ওয়েভ (ঢেউ) তৈরি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যেহেতু এ পার্লামেন্ট অবৈধ তাই আমরা আইনজীবীরা এবং জনগণ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। এ অবৈধ সরকার, অবৈধ পার্লামেন্ট নিয়ে যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন তারা বিচার বিভাগের ওপর আক্রমণ করবে। এ অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীদের আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের উত্তর হলে এ প্রতিবাদ সভায় এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেনÑ সমিতির সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, আবদুর রকিব খান, আবেদ রাজা, কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মনির হোসেন, মোহাম্মদ আলী, মির্জা আল মাহমুদ, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
×