ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রবি আবাদের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৫ আগস্ট ২০১৭

রবি আবাদের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষক

সমুদ্র হক ॥ জলবায়ুর পরিবর্তন ও আবহাওয়ার ধরন পাল্টে যাওয়ায় এবার উত্তরাঞ্চলের কৃষক এখনই রবি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই সময়টায় প্রকৃতি উষ্ণ থাকলেও রিবাজ করছে শীতের মৃদু আমেজ। দিনে-রাতে গরম অনুভূত হয়। গোধূলিবেলার আগেই পড়ন্ত রোদ প্রকৃতিতে এনে দেয় শীতের আভা। গ্রামে ও নদী তীরবর্তী এলাকায় সন্ধ্যার আগে হালকা সবুজের আবরণে মৃদু কুয়াশা পড়ে। মধ্যরাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশার সঙ্গে শিশির ঝরতে থাকে। এমনই অনাকাক্সিক্ষত আবহাওয়ায় মাঠ পর্যায়ের কৃষক রবি ফসলের আবাদকে সময়ের আগেই টেনে এনেছে। সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামের গৃহস্থ কৃষক সোলায়মান আলী বললেন “আসমান যে ভাও দেখাচ্চে আবাদের মরশুম ওলট পালট হয়া গ্যাছে। হামরা এখন করি ড্য কি? তাই আবাদ আগ্যে আনিচ্চি। (আকাশ যে খেলা দেখাচ্ছে তাতে ফসলের মৌসুম এদিকসেদিক হয়ে গেছে। কৃষক এখন কি করে। তাই আবাদ এগিয়ে এনেছে।)” এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানাচ্ছে, বন্যার পর কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই সময়টায় লেট ভেরাইটির আমনের চারা তৈরি করে অনেক স্থানে বিতরণ শুরু হয়েছে। এই চারা বিতরণ দ্রুত শেষ করা হবে। তবে যে এলাকায় বন্যা হয়নি সেসব এলাকায় রোপা আমনের আবাদ বেশ ভাল হয়েছে। আগাম জাতের রোপা আমনের এলাকাগুলোতে কৃষক ফসল তুলেই সবজি ও রবি ফসলের আবাদ শুরু করবে। চলনবিল এলাকায় প্রায় সকল ফসল আগাম জাতের। এবার ওই এলাকায় বন্যা হয়েছে তবে পানি দ্রুত নেমেও গেছে। বিলের লোকজনের কথা, ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা দ্রুত পুষিয়ে নিতে অন্যান্য আবাদ শুরু করেছে। এই এলাকাতেও রবি ফসলের আবাদ সময়ের আগেই শুরু হবে। বগুড়া অঞ্চলের কৃষক জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে রবি মৌসুম এগিয়ে আসায় তারা আগাম সবজিসহ অন্যান্য ফসলের পরিকল্পনা নিয়েছে। উল্লেখ্য ধান ও সবজি আবাদে বগুড়া উদ্বৃত্ত অঞ্চল। বন্যার এই সময়টাতেও বগুড়া-রংপুর সড়কের মহাস্থান থেকে মোকামতলা পর্যন্ত অনেকটা জায়গাজুড়ে কাঁচাবাজার বসে। বিশেষ করে ভর মৌসুম কলা উৎপাদনের এক বড় এলাকা বগুড়া। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, বন্যাপরবর্তী অবস্থা মোকাবেলা, কৃষি পুনর্বাসনসহ রবি মৌসুমে অধিক আবাদের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রবি মৌসুমে বগুড়া অঞ্চলে অন্তত সাতটি ফসলের আবাদ করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। শীঘ্রই অনুমোদন মিলবে। ফসলগুলো হলো : বোরো ধান, গম, গোল আলু, চিনাবাদাম, সরিষা, ভুট্টা ও মাসকলাই। সঙ্গে শাক-সবজির আবাদ বাধ্যতামূলকভাবে থাকবে। শাক-সবজির আবাদটি কৃষক নিজেদের উদ্যোগে বেশি করে থাকে। তাদের সহযোগিতা দেয়া হবে। বর্তমানে বগুড়ার পূর্বাংশে সরিষা এবং নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরগ্রামে চিনাবাদামের ফলন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা এলাকায় চিনাবাদাম আবাদ করে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছে। গমের আবাদ কমে গিয়েছিল। তা বেড়ে যাচ্ছে। কৃষক দ্বিতীয় প্রধান ফসল হিসেবে গমের আবাদ বেশি করছে। গমের সঙ্গে যবের (প্যারা) আবাদ আগের চেয়ে বেড়েছে। প্যারার ছাতু বগুড়া ও আশপাশের এলাকায় জনপ্রিয় খাবার। আলু আবাদের অন্যতম প্রধান এলাকা বৃহত্তর বগুড়া। বগুড়ার লাল হাগরাই আলু দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। এই আলু আঁঠালো এবং খুবই স্বাদের। ঢাকা ও বাইরের জেলাগুলোতে বগুড়ার এই লাল ছোট আলুর কদর বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলেছে এবার এই হাগরাই আলুর অধিক উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি দেয়া হবে। যাতে কৃষক এই আলু আবাদ করে অধিক লাভবান হতে পারে। এই অঞ্চলের অরেকটি অর্থকরী ফসল মাসকলাই। আশপাশের সকল এলাকায় মাসের ডালের সুখ্যাতি রয়েছে। অনেক এলাকায় মাসকলাইয়ের রুটি ঐতিহ্য হয়ে আছে। এবার এই মাসকলাই আবাদে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানাচ্ছে, দেশের কোন্ অঞ্চলে কোন্ ধরনের রবি ফসলের চাহিদা ও উৎপাদন বেশি তা নিরূপণ করে সেসব ফসলের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে আবাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি এলাকায় রবি ফসলের আবাদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে; যা প্রতিটি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের জানোনা হয়েছে। এর বাইরেও প্রতিটি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকগণ রবি মৌসুমে যেসব আবাদের পরিকল্পনা করে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তা বিশ্লেষণ করে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×