ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার আগেভাগেই রাজধানীতে আসছে কোরবানির পশু

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৫ আগস্ট ২০১৭

এবার আগেভাগেই রাজধানীতে আসছে কোরবানির পশু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদের তিন দিন আগে থেকে পশু বিক্রির নিয়ম থাকলেও এবার অনেকটা আগেভাগেই রাজধানীর হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। একই সঙ্গে খুব জোরেশোরে চলছে রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাট গোছানোর কাজ। বাহারি ডিজাইনের ব্যানার ও গেট বানিয়ে সাজানো হচ্ছে হাটগুলো। ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে ইতোমধ্যে প্রচার শুরু করেছেন হাটের ইজারাদাররা। হাট তদারকির দায়িত্বে থাকা লোকজন বলছেন, আগে থেকেই যেভাবে হাটে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে তাতে এবার গরুর সঙ্কট হবে না। অন্যদিকে কোরবানির পশুর মূল্য নিয়ে ব্যাপারীদের মুখে শোনা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জানা গেছে, ঈদ-উল-আযহা সামনে রেখে রাজধানীর ২৩ স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে রয়েছে ২২টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী হাট। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৩টি হাট বসবে। একমাত্র স্থায়ী হাট গাবতলীতেও কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এদিকে প্রতিটি হাটের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ডিএমপি। সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ-উল-আযহাকে ঘিরে অনেকটা আগেভাগেই রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে কোরবানির পশুর আমদানি শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ অনুযায়ী ঈদের চার দিন আগে থেকে নগরীর অস্থায়ী পশুর হাট বসার কথা রয়েছে। কিন্তু এসব হাটের ইজারাদাররা ৮-১০ দিন আগেই গরু, মহিষ রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। ফলে ঈদের আগ মুহূর্তে সড়কে যানজট ও চাঁদাবাজি এড়াতে এবং দর্শনীয় স্থানে পশু রাখার জন্য ব্যাপারীরা (গরু বিক্রেতা) বেশ আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর এসব হাটে গরু আনা শুরু করে দিয়েছেন। সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটগুলো বাঁশ দিয়ে খুঁটি গেড়ে প্রায় প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব হাটে পশু আমদানি শুরু হলেও বেচাকেনা জমতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। ব্যাপারীরা জানান, বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠবে ঈদের তিন-চার দিন আগে। অন্যদিকে কোরবানির পশুর মূল্য নিয়ে ব্যাপারীদের মুখে শোনা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একাধিক ব্যাপারী জানালেন, এখনও সেভাবে বেচাকেনা জমে ওঠেনি। ফলে সামনের দিনগুলোতে দাম বাড়বে না কমবে তা বলা মুশকিল। বৃহস্পতিবার গাবতলী হাট ঘুরে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ হাটের পরিধি আরও বাড়ছে। মহানগরীর হাটে এবার ২০ থেকে ২২ লাখ গবাদিপশু ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তারা বলেছেন, বন্যা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর গবাদিপশু ইতোমধ্যে গাবতলী হাটে আসতে শুরু করেছে। ঈদ-উল-আযহার দিন যতই ঘনিয়ে আসবে পাল্লা দিয়ে আমদানি তত বাড়বে। একই সঙ্গে ভারত, ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে কোরবানির গবাদিপশু আসবে বলে গাবতলীর হাটের ব্যাপারীরা জানালেন। গাবতলী গরুর হাটের পরিচালনা পরিষদের সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, এবার আগেভাগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু আনতে শুরু করেছেন। তবে এখনও সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। স্বাভাবিকভাবে গাবতলীর হাটে যেভাবে গরু বেচাকেনা হয় সেভাবে হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ কোরবানি হিসেবে কেনাকাটা করছেন। সরেজমিন রাজধানীর আফতাবনগর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, পশু বিক্রির উপযোগী করে ইজারাদারের পক্ষ থেকে সড়কের দুই পাশের ফাঁকা প্লটগুলোতে চলছে বাঁশের সারি সারি গাঁথুনি। ইতোমধ্যেই কিছু গরু নিয়ে চলে এসেছেন ব্যাপারীরা। গরু রাখা এবং ক্রেতাদের আসার পথও তৈরি করা হয়েছে। ক্রেতা না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন গরু ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীরা। রাজধানীর অন্যান্য হাটের চিত্রও অভিন্ন। গাবতলী হাটের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, এবার আগেভাগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু আনা শুরু করেছেন। তবে এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। স্বাভাবিকভাবে গাবতলীর হাটে যেভাবে গরু বেচাকেনা হয় সেভাবে হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবার কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসাবে ১৩টি স্থানে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ মেরাদিয়া বাজার, উত্তর শাহজাহানপুর-খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট এ্যান্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ এবং সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা। ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, আমরা এ বছর ১৩টি হাট ইজারা দিয়েছি। হাটে নাগরিকগণ যাতে স্বাভাবিক পরিবেশে কোরবানির পশু কিনতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবার ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসাবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কুড়িল ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন এলাকা, বসিলা এলাকা, মিরপুর ডিওএইচএস, উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টর, খিলক্ষেত বনরূপা এলাকা, আশিয়ান সিটি, ভাটারার সাঈদনগর, আফতাবনগর ও মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশন। ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা এবারের হাটগুলো রাজধানীর জনবহুল এলাকা থেকে একটু দূরে দেয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে পশুর হাটের জন্য যানজটের সৃষ্টি না হয়। হাটগুলোতে সুস্থ ব্যবস্থাপনা রাখতে ইজারাদারদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×