ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ আগস্ট ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকার অনেক দুর্নাম। সব অস্বীকার করা যাবে না। তবে কিছু ভাল দেখে মন ভরে যায়। এই যেমন এখন রাস্তায় নামলেই চোখে পড়ে, বিভিন্ন বসয়ী মানুষ ছোট ছোট বাক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। মার্কেট শপিংমলের সামনে, সরকারী-বেসরকারী অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দেখা যাচ্ছে তাদের। কেউ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কেউ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি। সবাই নিজের কাজ ফেলে বন্যায় আক্রান্ত মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। বাড়ি ঘর ভেসে যাওয়া মানুষদের কাউকে তারা চেনেন না। এলাকাগুলোতে অনেকে যাননি কোনদিন। অথচ দুর্গত এলাকার মানুষের কান্না তাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বহু দূরের রাজধানী শহরে বাস করেও কিছু করার চেষ্টা করছেন তারা। এই শুভ বোধ, মানবিকতা দেখে কার না ভাল লাগে? বৃহস্পতিবার দুপুর বেলায় সোনারগাঁ হোটেলের সামনে তেমন একটি দৃশ্য দেখা গেল। একদল তরুণ কয়েকটি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কাজ ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করছিলেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ দল গাড়ি থামতেই সেদিকে ছুটছিলেন। জানালার কাছে মুখ নিয়ে বিনয়ী নরম সুর করে বলছিলেন- দেশের বহু মানুষ বন্যাকবলিত। ঘর নেই। খাদ্য সঙ্কট। তাদের পাশে একটু প্লিজ দাঁড়ান। আপনার সামান্য সহায়তা অসহায় মানুষের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে। আবেদনে সাড়া দিচ্ছিলেন কেউ। কেউ না শুনেই চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ছেলেরা ক্লান্তিহীন। প্রচ- গরম অগ্রাহ্য করেই ছুটছিলেন তারা। তরুণদের একজন জানান, তারা সবাই শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা কলেজ ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ও প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন। ফোন ফেসবুকে যোগাযোগের মাধ্যমে একত্রিত হয়েছেন। এক সপ্তাহ ধরে অর্থ সংগ্রহের কাজ করছেন তারা। গুলশান পল্টন শাহবাগ মতিঝিল এলাকার রাস্তায় দোকান পাটের সামনে লম্বা সময় বাক্স হাতে দাঁড়িয়ে কাটিয়েছেন। এখন এসেছেন কাওরান বাজার এলাকায়। কাজ চলবে ঈদের আগ পর্যন্ত। তারপর সংগ্রহ করা অর্থ নিয়ে তারা যাবেন টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ এলাকায়। বন্যার্তদের সহায়তা করার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে ঈদ করবেন বলে জানান তিনি। এর চেয়ে ভাল খবর আর কী হতে পারে? বন্যার্তদের সহায়তা করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন সংস্কৃতিকর্মীরাও। সম্মিলিতি সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে চলছে অর্থ সংগ্রহের কাজ। নাটক গান নৃত্য আবৃত্তির শিল্পীরা দিনের বড় একটা সময় এই কাজে ব্যয় করছেন। এমনকি জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ নিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে অর্থ সংগ্রহের কাজ করছেন। কাজ শুরুর প্রথম দিন কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। বললেন, এবার বড় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেকগুলো এলাকা ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় শুধু সরকারী সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু দায় আছে। সে দায় থেকে বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ করছি। অচিরেই বন্যার্তদের কাছে এই অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান তিনি। এমন সুন্দর মানবিক প্রয়াসগুলো টিকে থাক। জয় হোক মানবিক মানুষের। গরু নিয়ে কাজ কারবার মোটামুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। পশুটি নিয়ে কত রকমের আলোচনা এখন! ছাগল মহিষেরও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। মরুভূমি থেকে আসা উট নিয়ে আছে অন্যরকম কৌতূহল। সবই কোরবানি ঈদ সামনে রেখে। আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদ-উল আযহা। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। রোজার ঈদে নানা রকমের কেনাকাটা থাকে। তবে কোরবানির ঈদে অতো কিছু কেনার থাকে না। সাধ্য মতো পশু কেনেন সবাই। এরই মাঝে শহর ঢাকার এখানে ওখানে বসে গেছে হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এবার রাজধানীতে বসছে ২২টি অস্থায়ী পশুর হাট। এবার ডিএসসিসি এলাকায় বসছে ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাট। ডিএনসিসি এলাকায় বসছে ৯টি। ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ দরের ভিত্তিতে ডিএসসিসির ১৩টি ও ডিএনসিসির ৯টি হাটের ইজারাদার বাছাই করা হয়েছে। এবার হাউড্রোলিক হর্ন প্রসঙ্গ। শহর ঢাকার রাস্তায় কারণে একবার হর্ন বাজানো হচ্ছে। অকারণে বাজানো হচ্ছে তের বার। অজস্র গাড়ি। একসঙ্গে হর্ন বাজাচ্ছে। সাধারণ হর্নেই টেকা যায় না। অথচ কয়েকগুণ বেশি শব্দ করে বাজছে হাউড্রোলিক হর্ন। শব্দ দূষনের চূড়ান্ত হলেও, এ নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা নেই। ছিল না। এবং অতঃপর কিছুটা হলেও স্বস্তির খবরÑ ঢাকার রাস্তায় আগামী ২৭ আগস্টের পর কোন যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো যাবে না। বাজানো হলে গাড়িসহ তা জব্দের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়। আদেশে বলা হয়, হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে যত হাইড্রোলিক হর্ন আছে জব্দ করতে হবে আগামী সাত দিনের মধ্যে। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে এর মধ্যেই নির্দেশ কার্যকরের কতটা হলো তা প্রতিবেদন আকারে জানাতে বলেছে আদালত। পুলিশ প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ ২০ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। কয়েকদিন আগে একই বিষয়ে অভিন্ন মতামত তুলে ধরেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। গত ১৬ আগস্ট ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ট্রাফিক পুলিশ গত এক বছরে ১০ হাজার হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করেছে। আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের অননুমোদিত ব্যবহার কমে এসেছে বটে। পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এবার আসবে তো? ঢাকাবাসী বড় আশা করে আছে।
×