ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার পানি দ্রুত নামছে, বানভাসিদের নতুন জীবন সংগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৫ আগস্ট ২০১৭

বন্যার পানি দ্রুত নামছে, বানভাসিদের নতুন জীবন সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশ থেকে বন্যার পানি কমলেও এখন দেশের প্রধান ১৫টি নদী ২২ পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে বিভিন্ন নদ নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও অধিকাংশ নদীর পানিই দ্রুত নেমে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার নদীর সমতলের ৯০টি স্টেশনের মধ্যে ৬৯ স্টেশনের পানিই কমছে। অপরদিকে মাত্র ১৯ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে পানি নেমে যাওয়ার কারণে বানভাসিদের নতুন করে জীবন সংগ্রামে পড়তে হচ্ছে উত্তরের জনপদে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির সংস্কারের কাজে মনোনিবেশ করছে তারা। তবে এ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্থ সহায়তা। সরকারের পক্ষ থেকে বানভাসিদের ত্রাণ দেয়া হলে নগদ অর্থসহায়তা পাচ্ছে একেবারেই কম। ফলে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে লোন নিতে হচ্ছে। তারা জানায় বিপদের পড়েই তাদের চড়া সুদে লোন নিতে হচ্ছে। এছাড়া তাদের বিকল্প কোন উপায় নেই। এ টাকা দিয়ে ঘরবাড়ি মেরামতসহ নতুন জীবন সংগ্রামের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া ঈদ সামনে রেখে উত্তরের অনেক জেলায় কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তারা জানায় বানের কারণে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করার কঠিন হয়ে পড়ছে। সেখানে গবাদিপশুর খাদ্য তাদের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফসলের মাঠসহ যেসব এলাকা বানের পানিতে ভেসে গেছে সেসব এলাকায় এখানও গবাদিপশুর খাওয়ার কাঁচা ঘাস জন্মায়নি। অনেক এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র উঁচু বাঁধ থেকে বানভাসিরা ঘরে ফিরে গেলে ঘরবাড়ি মেরামত না থাকায় নিজ ভিটায় তারা খোলা আকাশের নিজের জীবনযাপন করছেন। উত্তরের মানুষ জানিয়েছে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন বেরিয়ে এসেছে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির আসল চেহারা। যেখানে মাটির ঘর ছিল তা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অন্য অন্য ঘরবাড়িরও সম্পূর্ণরূপে ক্ষতি হয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে নতুন করে বন্যার কোন আশঙ্কা এ মুহূর্তে তারা দেখছেন না। তারা জানায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানের পানি নেমে আসার কারণে সাধারণত সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত বন্যার আশঙ্ক থেকে যায়। এরপরে বন্যার আশঙ্কা কেটে যায়। তবে ভারী বৃষ্টিপাত না থাকায় নতুন বন্যার আশঙ্কা করছেন না পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দেশব্যাপী বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীর পানি কমতে থাকায় দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটবে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চতুর্দিকের বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, টঙ্গিখাল এখনও বিপদ সীমার যথাক্রমে ৭৮ সেন্টিমিটার, ৯ সেন্টিমিটার, ১২ সেন্টিমিটার এবং ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী বিপদ সীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইলেও গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। তারা জানায় উত্তরের প্রধান নদী যমুনা কাজিপুরে ২৩ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ৩৯, আরিচায় ১৬ বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুর নদী সিংড়ায় ৯৫ সেন্টিমটার, আত্রাই বাঘাবাড়িতে ৬১ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী এলাসিনে ৬২, লক্ষ্যা নদী লাখপুরে ৯২, নারায়ণগঞ্জে ১৮, কালিগঙ্গা তারাঘাটে ৭২, ধলেশ্বরী জাগিরে ৬৫, মহানন্দা বোরহানপুরে ৬৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ ছোট যমুনা নওগাঁয় ২২, পদ্মা নদী গোয়ান্দ পয়েন্টে ৫৭, ভাগ্যকুলে ১৯, সুরেশ্বরের বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুরমা নদী কানাইঘাটে বিপদ সীমার ৭ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা শেওলায় ২১, শেরপুর সিলেটে ৩, পুরাত সুরম দিরাইতে ১৯, কংস নদী জারিয়াজঞ্জাইল ৪৯ এবং তিতাস নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিপদ সীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এ বন্যায় এখন পর্যন্ত সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১৭টি সড়ক বন্যার পানির তোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা এবং এর আশপাশের জেলাগুলোর সড়ক। এ দুই জেলার ভেতর এবং দুই জেলার সঙ্গে অন্য জেলার সংযোগ স্থাপনকারী অন্তত ৯টি সড়ক পুরোপুরিই বিচ্ছিন্ন। নেত্রকোনা জেলায় ৫টি সড়কে স্থানে স্থানে পানি থাকায় চলাচল প্রায় বন্ধ। জামালপুর, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের তিনটি সড়কের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে উত্তরের ১০ জেলায় ৭৩টি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তালিকা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জামালপুরেই এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও জামালপুরেই বেশি। তারা বন্যায় এ পর্যন্ত ১৩৭ জন মানুষ মারা গেছে। ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৮ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
×