ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করবেন না ॥ সিনহা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ আগস্ট ২০১৭

বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করবেন না ॥ সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদালতে মামলার শুনানিকালে বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে হওয়া বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন না করতে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ্যাডভোকেট শান্তি পদ ঘোষের ‘জুডিসিয়াল ইন্টারপ্রিটেশন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেয়াকালে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রেস কনফারেন্স করে কোনো কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। বিচারক হিসেবে কোন মামলার শুনানির সময় আইনজীবীকে একটা প্রশ্ন করতে পারি। এটা বিচারকের স্বাধীনতা। প্রশ্নটা কি কারণে কোন উদ্দেশ্যে, তা না বুঝে, কোর্ট করলে, অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তিনি বলেন, প্রেক্ষিত না বুঝে সংবাদ পরিবেশন করার কারণে আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এটা যাতে আমাকে না পড়তে হয় তার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আইনজীবীদের আরও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আইনজীবী এবং বিচারকদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের বিষয়ে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। সর্বোচ্চ আদালত ও দেশের সব আদালতের বিচারকদের আরও দায়িত্বশীল হতে আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, বিচারকদের বিচারিক জীবনে প্রবেশ করার আগের সব আদর্শিক চিন্তা পরিহার করে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে মনস্থির করে জুডিসিয়াল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগুতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিচারকরা হয়ত ছাত্রজীবনে বা প্রফেশন জীবনে প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনা থাকতে পারে রাজনীতি নিয়ে। আমরা বিচারকরা যখন বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করি এবং দেশে যারা বিচারক আছেন আপীল বিভাগে, হাইকোর্ট বিভাগ কিংবা নিম্ন আদালতে, তাদের বলব- আপনারা আপনাদের পাস্ট (অতীত) ভুলে যান। এই বিচার বিভাগের আপনি যখন বিচারক আপনাকে প্রেজেন্ট এবং ফিউচার নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে মাত্র পনেরো ষোলোশ বিচারক। অনেক... আমরা দেখি নিরপেক্ষভাবে বিচার করার জন্য। বিচার করতে গেলে কে কি রাজনীতি করত সেটা, যদি রাজনীতি করতে হয় আপনারা ছেড়ে চলে আসেন। বিচারক যদি হোন নিরপেক্ষভাবে করবেন। এটা আপনাদের প্রতি মানুষের অধিকার। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমেরিকার প্রধান বিচরপতি আর্ন ওয়ারেন্ট জেলা আদালতে ওকালতি আরম্ভ করেছিলেন। এরপর তিনি সরকারী উকিল হয়েছিলেন। তার মেধার কারণে তিনি তিন তিনবার গবর্নর হয়েছিলেন। উনি ছিলেন রিপাবলিকান দলের। কিন্তু ১৯৭০ সালে যখন গবর্নর হন তখন তার নিরপেক্ষতার জন্য দলমত নির্বিশেষে গবর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আগে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না। প্রধান বিচারপতি বলেন, শুধু বিচারকদের বলব না, আইনজীবীদের বলব। এই সমাজে আপনাদেরও অনেক কিছু করার আছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা এক হোন। আমি আগেও বলেছি আজকেও বলছি, আপনাদের প্রফেশনাল জীবন একটু কম দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এটা শোকের মাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে এই মাসে ১৫ আগস্ট কয়েকজন বিপথগামী লোক নৃসংশভাবে হত্যা করেছিল। আমি এ মামলার শেষ রায় এবং রিভিউ আমার হাতে নিষ্পত্তি করেছি। আমি যখন মামলার শুরু করি তখন এত কষ্ট লাগল। এই মামলাতে অনেক কিছু ছিল। একটা বাচ্চা ছেলে রাসেল তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? এটা পশুর চেয়েও জঘন্য। কিন্তু এর নথি যখন পর্যালোচনা করলাম, যেহেতু এটা ফাইনাল কোর্ট, আমরা দেখলাম অনেক ত্রুটি ছিল এ মামলায়। যে রকম ইনভেস্টিগেশনের ত্রুটি ছিল, সেরকম প্রসিকিউশনের ত্রুটি ছিল। তিনি আরও বলেন, সপরিবার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সঙ্গে জেল হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি ছিল। এ উভয় মামলায়ই বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট রায় তারা গ্রহণ না করে এ দুটি ঘটনাকে ‘ক্রিমিনাল কন্সপেরেসি’ হিসেবে রায় দিয়েছেন। মামলায় মাত্র ১৫/১৬ জনের বিচার হয়েছে দুই ঘটনায়ই অনেককে বিচারের আওতায় আনা যায়নি শুধু মামলা সংক্রান্ত নানা দুর্বলতার কারণে। এসব নিয়ে তিনি ভবিষ্যতে বই লিখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকট জয়নাল আবেদিন, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের পর আইনজীবীদের মধ্যে বিভাজন নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকেন। আইনজীবীর কেউ কেউ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকছেন। এ রকম অবস্থা চলছে ভীতদের নিয়ে। কিন্তু বিচার বিভাগের ওপর কোন আঘাত যাতে না আসে, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের আন্দোলন-সংগ্রামে গৌরবোজ্জল ঐতিহ্যের কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরে ড.কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সই করা সংবিধান আমাদের প্রেরণা । কেউ যদি দলিলের ওপর আঘাত করতে চায় সে যত বাপের বেটা-বেটি হোক, জনগণকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে তা প্রতিহত করবই। জীবন দিয়ে হলেও সংবিধান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে।
×