ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায় ॥ প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি বাজেয়াফতের নির্দেশ

নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার সব চুক্তি অবৈধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৫ আগস্ট ২০১৭

নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার সব চুক্তি অবৈধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কানাডাভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার সব চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সব সম্পত্তি বাজেয়াফতেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নাইকো সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল আর্বিট্রেশন আদালতের হয়ে বাপেক্সের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মঈন গনি। রায়ের পর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ পেলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রায় বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে আদালত বলেছে, সুনামগঞ্জের টেংরাটিলায় নাইকোর গ্যাসক্ষেত্রে ২০০৫ সালের বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন দুটি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নাইকোকে কোনো অর্থ পরিশোধ করা যাবে না। আর ওই দুই চুক্তির আওতায় নাইকো কানাডা ও নাইকো বাংলাদেশের সব সম্পত্তি এবং ৯ নম্বর ব্লকে থাকা নাইকোর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, ‘এটা স্বীকৃত যে নাইকো দুর্নীতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০৩ সালে যৌথ অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি করে। এ কাজে নাইকো বাংলাদেশে তাদের তৎকালীন এজেন্ট কাসেম শরীফের সঙ্গে চার মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছিল। তাকে পরে নাইকো বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ‘এটা স্বীকৃত যে কাজ পাওয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনকে উৎকোচ দেয়া হয়েছিল। যদিও নাইকো বলেছে যে উৎকোচ নয়, উপহার হিসেবে তারা তা দিয়েছিল। কিন্তু এ ধরনের উপহার সামগ্রী দেয়া বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন।’ ব্যারিস্টার মঈন গনি সাংবাদিকদের জানান, ২০০৬ সালে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম শামসুল আলম একটি রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, ২০০৩ ও ২০০৬ সালে নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার চুক্তি সঠিকভাবে হয়নি। দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছে। এছাড়া ২০০৫ সালে ছাতকে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশে থাকা নাইকোর সব সম্পত্তি জব্দের জন্যও আবেদন করা হয়। এ রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট এই রায় ঘোষণা করেছেন। এ রায়ের ফলে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য এক যুগের বেশি আগে সরকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সঙ্গে কানাডার প্রতিষ্ঠান নাইকোর করা যৌথ উদ্যোগ (জয়েন্ট ভেনচার) চুক্তি বাতিল হয়েছে বলে জানান আইনজীবী। ২০১৬ সালের ৯ মে বাপেক্সের সঙ্গে নাইকোর করা যৌথ উদ্যোগ চুক্তি কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট এই রায় ঘোষণা করেছেন। প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের কাজ পায় কানাডাভিত্তিক কোম্পানি নাইকো। এ সময় তারা পেট্রোবাংলার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচার চুক্তি করে, আর বাপেক্সের সঙ্গে করে একটি যৌথ উদ্যোগের চুক্তি। চুক্তি মোতাবেক ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে নাইকো গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করে। কিন্তু সুনামগঞ্জের ছাতকের টেংরাটিলায় কূপ খনন করতে গিয়ে কোম্পানিটি দু’বার বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণের পর থেকে বাংলাদেশ নাইকোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছে। কানাডীয় কোম্পানি নাইকো রিসোর্সেস ২০০৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্সকে সঙ্গে নিয়ে ফেনী ও ছাতকে গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের দায়িত্ব পায়। ওই দুই গ্যাসক্ষেত্রে নাইকোর ৮০ শতাংশ এবং বাপেক্সের ২০ শতাংশ মালিকানা ছিল। দায়িত্ব পাওয়ার পর ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করে আসছিল নাইকো। কিন্তু তাদের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফা বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা- ঘটে। তাতে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পুড়ে যায় এবং পরিবেশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই বিস্ফোরণের জন্য নাইকোকে দায়ী করে আদালতে যায় পেট্রোবাংলা। সেই মামলায় ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। সেইসঙ্গে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে নাইকোর সরবরাহ করা গ্যাসের দাম পরিশোধ করা বন্ধ করে দেয় সরকার।
×