ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জমে উঠেছে কসবা হাট

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৫ আগস্ট ২০১৭

জমে উঠেছে কসবা হাট

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জমে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত ও শত বছরের প্রাচীন গৌরনদী পৌর এলাকার কসবা গো-হাট। এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ এ পশুর হাটে গত ২২ আগস্ট থেকে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সূত্রমতে, প্রতিবছর ঈদ-উল আজহায় এ হাটে সবচেয়ে বেশি পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়। ইতোমধ্যে এ হাটে ভারতীয়, নেপালী, দেশী গরুতে সয়লাব হয়ে গেছে। তবে ক্রেতাদের কাছে দেশী গরুর চাহিদা বেশি লক্ষ্যকরা গেছে। এ গো-হাটকে কেন্দ্র করে কসবা, বানীয়াশুরি, চরদিয়াশুর, কালকিনির রমজানপুর, চরআইরকান্দি, সাহেবরামপুর, কয়ারিয়া, আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট, বাশাইল, কোটালীপাড়া ও বান্ধাবাড়ি এলাকার কয়েক শ’ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।হাট ইজারাদার আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার জানান, আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে সাপ্তাহিক হাটের (বৃহস্পতিবার) পরিবর্তে গত ২২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক গরু বিক্রি হয়। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বালামি নৌকায় (ট্রলার) গরু ব্যবসায়ীরা আসেন এ হাটে গরু ক্রয়ের জন্য। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ট্রাক ভর্তি করে গরু আনেন বিক্রি করার জন্য।এছাড়া খুচরা পাইকাররা গ্রামঘুরে গৃহস্থের গরু ক্রয় করে আমদানি করেন এ হাটে বিক্রির জন্য। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি কেতাব আলী হাওলাদার জানান, প্রায় একশ’ বছর আগে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র গো-হাট ছিল বর্তমান মাদারীপুরের গোপালপুর এলাকায়। সেখানকার হাট পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে কসবা গ্রামের মোচন খান, পবন খান, গনি মুন্সী, জহুর আলী খান, কাসেম খানসহ ১০-১৫ জন গরু ব্যবসায়ীরা কসবা এলাকার শাহ্ বংশের পরিত্যক্ত ভিটায় (বর্তমানে সরকারী সম্পত্তি) কসবা গো-হাট প্রতিষ্ঠিত করেন। চৌগাছা পশুহাটে কেনাবেচা শুরু স্টাফ রিপোর্টার যশোর থেকে জানান, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী পশুহাট। সপ্তাহে দুইদিন এ হাটে বিপুলসংখ্যক পশুর সমারোহ ঘটে। এদিকে দাম হাতের নাগালে থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই মহাখুশি। এদিকে ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ২৩ আগস্ট থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত প্রতিদিনই হাট চলানোর ঘোষণা দিয়েছেন হাট কর্তৃপক্ষ।সূত্র জানায়, চৌগাছার পশুহাট এ অঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ পশুহাট বলে পরিচিত যুগযুগ ধরে। ঈদ সামনে রেখে জাকজমক হয়ে উঠেছে। গরু ছাগলের এতটাই সমারোহ যে তাদের জায়গা দিতে হাট মালিকরা রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। তারপরও দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় সকলেই মহাখুশি। বুধবার সরজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় কথা হয় গরু বিক্রি করতে আসা উপজেলার মুক্তদাহ গ্রামের কিতাব আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়িতে পালন করা এ গরুটি নিয়ে তিনি বাজারে এসেছেন। ১ লাখ টাকা দাম হাঁকা হয়েছে গরুটির। ৮৫ হাজার পর্যন্ত দাম উঠেছে। তবে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকার মধ্যে সে গরু বিক্রি করে দেবেন। যশোর থেকে গরু কিনতে আসা আক্তারুজ্জামান জানান, লোকমুখে গল্প শুনে এ বাজারে এসেছি। বাজারে প্রচুর গরু, তবে আমার মনে হচ্ছে বিক্রেতারা একটু বেশি দাম চাচ্ছে। দেখি আজ না হলে আগামী হাটে এ বাজার থেকে একটি গরু কিনব বলে আশা করছি। কুষ্টিয়ার গরু যাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিজস্ব সংবাদদাতা কুষ্টিয়া থেকে জানান, সদর উপজেলার আইলচারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম কোরবানি ঈদ সামনে রেখে এবার ৫টি গরু পালছেন। ইতোমধ্যে তার খামারের বড় দুটি গরুর দামও উঠেছিল ৯ লাখ টাকা। কিন্তু ভারত থেকে গরু আসার খবর শুনে পিছুটান দিয়েছেন ঢাকার ওই ব্যাপারী। ফোনে তিনি জানান, পরিস্থিতি দেখেশুনে তারপর গরু নিবেন। এ খবরে বড় চিন্তায় পড়েছেন খামারি রফিকুল ইসলাম। বাড়ির খামার থেকে বিক্রি না হলে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের বাজারে গরু নেয়ার চিন্তা করছেন তিনি। রফিকুল ইসলাম জানান, গত কোরবানির ঈদের পর ৫টি গরু তিনি ১২ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। গরুগুলোর পিছনে তার এক বছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২৭ আগস্ট ঢাকায় নেয়ার আগ পর্যন্ত তার খরচ আরও বাড়বে। তাই এ বছর গরু বিক্রি করে তিনি লাভ করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। রফিকুল জানান, গত ঈদের আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে অনেক ব্যাপারী বাড়ির ওপর খোঁজখবর নিতে আসেন। বিক্রিও হয়েছিল অনেক গরু। ৯টি গরু বিক্রি করে ওইবার তিনি লাভ করেন ৩ লাখ টাকা। কিন্তু ভারত থেকে গরু আসার খবরে ব্যাপারীরা কেউ ভিড়ছেন না। এবার ৫টি গরু তিনি ২২ থেকে ২৩ লাখ টাকা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। আইলচারা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে কোরবানির গরু। একেকটি বাড়িতে ২ থেকে ১৫টি পর্যন্ত গরু পালন করা হচ্ছে। তবে এসব গরুর বেশিরভাগই বড় সাইজের। রফিকুলের ভাই হাবিবুর রহমানও পালছেন ১১টি গরু। লাল ও কালো রংয়ের গরুগুলো বিশাল সাইজের। হাবিবুর রহমান জানান, এক বছরের ব্যবধানে গরুগুলো তিনি ক্রয় করেছেন। গরু পালনে তার খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। ব্যাংক থেকেও লোন নেয়া হয়েছে। এলাকার কয়েকজন খামারি জানান, গরু লালন পালন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। গত বছরের তুলনায় গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সুরুজ আলী চাকরির পাশাপাশি পালছেন ১০টি গরু। নিজের অর্থ ছাড়া স্থানীয় কৃষি ব্যাংক থেকে তিনি লোন নিয়েছেন ২ লাখ টাকা। সুরুজ আলীর স্ত্রী হাসিনা বেগম সারাদিন গরুগুলোকে দেখভাল করেন।
×