ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৃধা মোহাম্মদ বেলাল

মাঠের অভাবে বিপথে ভবিষ্যত প্রজন্ম

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ আগস্ট ২০১৭

মাঠের অভাবে বিপথে ভবিষ্যত প্রজন্ম

একটি আদর্শ নগরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, খেলাধুলা বা শরীরচর্চা ও মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ থাকা অপরিহার্য। বর্তমান পরস্থিতিতে বিশেষ করে নগর-মহানগর ও জেলা শহরে খেলাধুলা বা শরীরচর্চা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দিন দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বেদখল হয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ ও সরকারী খোলা জমি। স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু, অসাধু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা দুষ্কৃতকারীদের দ্বারাই ঘটছে এমন ঘটনা। এক্ষেত্রে খোদ প্রশাসনের যোগসাজশ ও সরকারী সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবাদী কিছু কর্মকর্তাগণ নিজেদের পকেট ভারি হলেই থাকেন নিশ্চুপ-নিষ্ক্রিয়! ফলশ্রুতিতে শিশু-কিশোররা আবদ্ধ হয়ে পড়ছে শিক্ষালয় ও বাসার চার দেয়ালের মধ্যে। তারা ঝুঁকে পরছে ভার্চুয়াল জগতে ও গেমস্কম্পিউটারে। যে বয়সে তাদের খেলাধুলার ক্লাবের সঙ্গে থাকার কথা সেই বয়সেই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে গ্যাং গ্রুপ! বলা হয়ে থাকে আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। কিন্তু খেলার মাঠ বা জমি এভাবে ভোগ দখল হতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম হবে ঠিক ফিটনেসবিহীন গাড়ির মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি আদর্শ নগরীর বাসিন্দাদের জন্য নগরের মোট আয়তনের অন্তত ১০ শতাংশ জমি খেলার মাঠ বা পার্কের জন্য থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় খেলার মাঠের জন্য আছে মাত্র চার শতাংশ জমি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চিত্রও প্রায় একই। ঢাকা মহানগরীতে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। কিন্তু বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি)- এর হিসাবে দেখা যায়, রাজধানীতে গড়ে দুই লাখ ৩০ হাজার ৭৬৯ জন মানুষের জন্য খেলার মাঠ আছে মাত্র ১টি। ডিসিসির সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং রাজউক নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি সেক্টরে একটি করে খেলার মাঠ থাকার কথা। কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ৯৩টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ আছে সর্বসাকুল্যে ২৫টি। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন শহরের মাঠগুলোতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলতে থাকে মেলা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এসব মেলার অন্তরালে জমজমাট জুয়া ও মাদক ব্যবসাও চলে লাগামহীন! এ অবস্থায় সরকার এসব দখলদারের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য নগর-মহানগর ও জেলা শহরের খোলা জায়গা, পার্ক ও মাঠ রক্ষায় এখনই জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সরকারের নাম ভাঙিয়ে কেউ যাতে অবৈধ কোন সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মূলত সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে খোলা জায়গা, পার্ক ও খেলার মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ করা। আশা করি সরকার ভবিষ্যত প্রজন্মকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ও অপরাধপ্রবণতা থেকে রক্ষা করতে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সারাদেশের প্রতিটি মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করে সর্বসাধারণের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এটাই কাম্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×