ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসত্তা বিকশিত হোক;###;মীম মিজান

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ খেলার মাঠে মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ আগস্ট ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ খেলার মাঠে মেলা

দেশ আজ ছেয়ে গেছে মাদকে। ছাত্র-যুবক শ্রেণী ধ্বংসের হাতিয়ার মাদকে বুঁদ হয়ে আছে। এইত বেশি দিন হয়নি, খেলার মাঠগুলো কানায় কানায় দর্শকে থাকত পূর্ণ। গোলের কাছে বল নিয়ে গেলে দর্শকদের ভিতরে গোল গোল শব্দের তুমুল ঝড় উঠত। গোল হলেই হই-হুল্লোড় হতো। বিনোদনের অনেকটা প্রধান অংশই ছিল মাঠে গিয়ে খেলা দেখা। আর এখন উত্তর আধুনিক যুগ। খেলার মাঠ এখন সবার মুঠোফোনের স্ক্রিন। প্রায় প্রত্যেকটি মানুষই বন্দী হয়ে পড়েছে মুখপুস্তিকা (ফেসবুক) ও মুঠোফোনের খেলায় (গেম)। ফলে সৃষ্টিশীলতা হারাচ্ছে। সবাই পরিণত হচ্ছে রোবট মানবে। শারীরিক ও মানুষিক কোন বিকাশই হচ্ছে না, বরং হচ্ছে বিকারগ্রস্ত। চোখ ও মননের ক্ষতি হচ্ছে অপূরণীয়। নেশাগ্রস্তদের থেকেও বেশি মত্ততা দেখা যায় মুখপুস্তিকা (ফেসবুক) ব্যবহারে। বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যোগ হয়ে নিজের অজান্তেই ঢুকে যাচ্ছে ধ্বংস জগতে। এ রকম একটি চরম দুঃসময়ে যারা ভার্চুয়াল জগতের মোহে মোহাবিষ্ট না হয়ে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ও চর্চা করতে চায় তাদের জন্য খেলার উন্মুক্ত জায়গা ও মাঠগুলো বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে থাকে খেলার অনুপযুক্ত। বছরের শুরুতেই বাণিজ্যমেলা। পরের মাসে বইমেলা, এরপর বৃক্ষমেলা এ রকম বিভিন্ন মেলা বছরের প্রায় সময়ই থাকে। রাজধানী, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহরসহ দেশের মোটামুটি সকল শহরেই কমবেশি খেলার মাঠ আছে। আর উপর্যুক্ত মেলা, বিভিন্ন উপলক্ষে বাজার ও নানা অনুষ্ঠানের জন্য খেলার এই মাঠগুলোই ব্যবহৃত হয়। মেলা ও অনুষ্ঠানগুলো শুরু“ হওয়ার পূর্ব থেকেই প্রস্তুতির জন্য মাঠকে বিভিন্নভাবে খুঁড়তে হয় ও অন্যরকম এক রূপ দিতে হয়। অনুষ্ঠান ও মেলা চলে বেশ কিছুদিন। মেলা ও অনুষ্ঠানগুলোতে উচ্চশব্দে চলে মাইক ও সাউন্ডবক্স। আর এহেন উচ্চশব্দে মাইক ও সাউন্ডবক্স বাজানোর ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে শব্দ দূষণ হচ্ছে। ফলে মানুষের ভিতরে অস্থিরতা, উচ্চ রক্তচাপ, মেজাজের ভারসাম্যহীনতা, গর্ভবতী মায়েদের ভ্রƒণ নষ্ট হওয়া, হাসপাতালে রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। তারপর অনুষ্ঠান ও মেলা শেষ হলে মাঠের প্রকৃত অবস্থায় আসতে আরও সময় লেগে যায় মাসখানেকেরও বেশি। মেলা, বাজার ও নানা অনুষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা মাঠের নির্মল পরিবেশকে করে দুর্গন্ধযুক্ত। এই যে দীর্ঘ সময় তরুণ-নবীন, যুবক-ছাত্ররা খেলা ও মানসিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও মাথাব্যথা পরিলক্ষিত হয় না। আমরা নিজেরাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ও ভবিতব্য কর্ণধারদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। তারা মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য মাঠে আসতে না পেরে অসৎ সঙ্গের দিকে ঝুঁকছে। আমরা পরিশীলিত কোন প্রজন্ম পাচ্ছি না। উৎপাদিত হচ্ছে উচ্ছন্নে যাওয়া ও উন্নাসিক প্রজন্ম। কি করে এ সমাজের ভীত হবে মজবুত? যদি না ফেরাতে পারি যুব ও ছাত্র সমাজকে খেলার মাঠে। কেনইবা হবে এ বিকাশকেন্দ্র স্বরূপ মাঠগুলো ব্যবহৃত বিভিন্ন মেলা ও অনুষ্ঠানে? মেলা ও নানা অনুষ্ঠানও আমাদের জাতিসত্তাকে বিকাশের জন্য। তবে জাতিকে যারা ধারণ করবে তারাই যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে সমাধান কিভাবে? খেলা ও মননবিকাশের মাঠগুলো উন্মুক্ত থাকুক বছরের প্রত্যেকটি দিন! মেলা ও নানা অনুষ্ঠানের জন্য বিকল্প স্থানের ব্যবস্থা হোক! আমরা নতুন প্রজন্ম বিকশিত হই ও জাতিসত্তাকে বিকশিত করি এটাই প্রত্যাশা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী থেকে
×