ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির গবেষণা রিপোর্ট

জবাবদিহিতা না থাকা ও রাজনৈতিক প্রভাবে পাউবো প্রকল্পে দুর্নীতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ আগস্ট ২০১৭

জবাবদিহিতা না থাকা ও রাজনৈতিক প্রভাবে পাউবো প্রকল্পে দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে জলবায়ু প্রকল্প বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারী সংস্থার পর্যবেক্ষণের অতি অবহেলা, জনঅংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা না থাকা ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কারণে দুর্নীতি হচ্ছে। এ কারণে দুর্নীতি করলেও শাস্তি হচ্ছে না। ফলে সুশাসনের ঘাটতি হচ্ছে ও জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় প্রত্যাশিত অর্জন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ)-এর অর্থায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর বাস্তবায়িত ছয়টি প্রকল্পে তাদের ব্যর্থতা উদ্বেগজনক বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার সকালে রাজধানীর ধানম-িতে সংস্থাটির মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করা হয়। গবেষণাটি মার্চ ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত হয়। সংস্থাটি বাস্তবায়িত জলবায়ু প্রকল্পে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ১৪ দফা সুপারিশ করে। গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন, মহুয়া রউফ ও এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোঃ রাজু আহম্মেদ মাসুম। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা এবং ক্লাইমেট ফাইন্যাস গর্বনেন্স (সিএফজি) ইউনিটের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম জাকির হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালিত জলবায়ু প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ থাকলেও, সার্বিক বিবেচনায় শুদ্ধাচার, অনিয়ম ও সুশাসনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। তথ্যের উন্মুক্ততার ব্যাপারে আইনী বাধ্যবাধকতা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে এবং প্রকল্পসমূহের গুণগত মানও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তিনি প্রদত্ত সুপারিশসমূহ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। গবেষণায় তথ্য সংগ্রহে মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাতকার, ফোকাস দলীয় আলোচনা, পর্যবেক্ষণ এবং জরিপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাথমিক উৎস হিসেবে প্রকল্প পরিচালক, পাউবো’র বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারি, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, ঠিকাদার ও মিস্ত্রি, বিসিসিটিএফের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়া পরোক্ষ উৎস হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি, নীতিমালা, নির্দেশিকা, প্রাসঙ্গিক গবেষণা প্রতিবেদন, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদন, প্রকল্প প্রস্তাবনা ও ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচিত হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এবং বিসিসিটিএফের প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্দেশিকাতে তথ্যবোর্ডে কোন কোন বিষয় সংযুক্ত করতে ও তথ্যবোর্ড স্থাপনের সময়সীমা ও রক্ষণাবেক্ষণের কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। সরকারী ক্রয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রচলিত ই-টেন্ডারিং পদ্ধতিকে একটি আদর্শ ব্যবস্থা মনে করা হলেও এর মাধ্যমে শুধু দরপত্র জমা দেয়া যায়। দরপত্র মূল্যায়ন ও নির্বাচন পূর্বতন পদ্ধতিতে হওয়ায় স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা সীমিত।
×