ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নূর হোসেনের দম্ভোক্তি উবে গেছে, কালো মেঘে ছেয়েছে মুখ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ আগস্ট ২০১৭

নূর হোসেনের দম্ভোক্তি উবে গেছে, কালো মেঘে ছেয়েছে মুখ

শংকর কুমার দে ॥ ‘আমার টাকা কার পেটে না গেছে স্যার! কয়দিন আমারে আটকাইয়া রাখবেন? বেশি হইলে চাইর-পাঁচ বছর! হের পরে তো কোনভাবেই আমারে রাখতে পারবেন না।’ দম্ভোক্তির সুরে এসব কথা বলেছেন চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের মামলার ‘নাটের গুরু’ খ্যাত অন্যতম আসামি নূর হোসেন। প্রায় দুই বছর আগে ‘১৫ সালের নবেম্বরে কলকাতা থেকে ঢাকায় আনার পর এমন দম্ভোক্তি করে মুচকি হেসে এসব কথা বলার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তার হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে আশাবাদী ছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার হাইকোর্টে তার মৃত্যুদ- বা ফাঁসি বহাল থাকার পর দম্ভোক্তি উবে গিয়ে মুখ কালো মেঘে ঢেকেছে। কারাগার কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে এই তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, প্রায় দুই বছর আগে নূর হোসেনকে কলকাতা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর তার পুরনো সিন্ডিকেটও আবার সক্রিয় হওয়ার জন্য তৎপর। মাদক ব্যবসা, পরিবহন চাঁদাবাজি, বালুর মহল, মাছের খামার, জমি দখলসহ অবৈধ আয়ের উৎস ছিল তার পুরানো সাম্রাজ্যের প্রতিমাসে অবৈধ আয় ছিল তার কোটি টাকা। প্রতিমাসে আয়ের কোটি টাকার প্রায় অর্ধেকটাই চলে যেত দুর্নীতিবাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, ওয়াসা, ডেসাসহ সেবা খাতের কর্মকর্তাদের পেছনে। কারাগারে বসেই তার হারানো পুরনো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে আগ্রহী নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনায় যেন তার শাপে বর হয়ে ওঠে। কিন্তু মঙ্গলবার তার ফাঁসির আদেশ বহাল থাকার পর দম্ভোক্তির সঙ্গে হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার আশা তো দূরের কথা জীবনটাই চলে যাওয়ার প্রতীক্ষার প্রহর গোনার পালা শুরু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নূর হোসেন ভারতে থাকার সময়েই ‘১৫ সালের ২ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে নূর হোসেন মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক হাসানই কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সিদ্ধিরগঞ্জের অনেকেই মনে করছেন, কাউন্সিলর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নূর হোসেনের সাম্রাজ্য তার আত্মীয়স্বজন ও সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণে আসার পথ প্রশস্ত হচ্ছে বালুসাম্রাজ্য, মাদকসাম্রাজ্য, তেলসাম্রাজ্য, জবরদখলদারি, টেন্ডারবাজি- সবই এখন নূর হোসেনের সিন্ডিকেটের করায়ত্তে চলে আসছে। এরপর সিদ্ধিরগঞ্জের ট্রাকস্ট্যান্ডে নূর হোসেনের অফিস পুনরায় দখলে নিতে গিয়েছেন স্বয়ং আরিফুল হক ও নূরের ভাতিজা শাহজালাল বাদল। তবে পুলিশী বাধায় তখন তা সম্ভব হয়নি। উপ-নির্বাচনের আগে কলকাতার আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নূর হোসেন সদম্ভে বলেছিলেন, ‘আমার মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করার কোন শক্তি নারায়ণগঞ্জে নাই।’
×