ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ’২১ সালের মধ্যে বিলিয়ন ডলার রফতানি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৪ আগস্ট ২০১৭

খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ’২১ সালের মধ্যে বিলিয়ন ডলার রফতানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাতে বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বুধবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা সম্মেলন-২০১৭’ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ : সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব’ শীর্ষক সেøাগানে দেশে প্রথমবারের মতো করা হয়েছে এ আয়োজন। সম্মিলিতভাবে ১৯টি স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানির সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসি), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি (বিএফএসএ) এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। কি খাচ্ছি সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারের একার পক্ষে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক এবং আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী। আমির হোসেন আমু আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। জমির আয়তন কমছে, আবার মানুষ বাড়ছে। তারপরও শেখ হাসিনার সরকার দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পেরেছে। কৃষকের মধ্যে সার সরবরাহের মধ্য দিয়ে প্রতিটি ফসলে বাম্পার ফলন হচ্ছে। আমু বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রতিবছর হালাল খাদ্য ও পণ্যের চাহিদা ১০.৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০১৪ সালে বিশ্বে হালাল শিল্পের পরিমাণ ছিল ৭৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ২০১৯ সাল নাগাদ বিশ্বে হালাল শিল্পের পরিমাণ ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিণত হবে। হালাল খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাংলাদেশের জন্য গুণগতমানের খাদ্য শিল্প প্রসারের সুযোগ এনে দিয়েছে। এ ধরনের শিল্প স্থাপন করে একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরাপদ খাদ্যের যোগান বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে রফতানির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উদ্যোক্তারা ২২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছেন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২৭ মিলিয়ন ডলার। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাতে বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে সক্ষম হব। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ২৫ লাখ ব্যবসায়ী খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ১৫ লাখ সরাসরি এবং বাকিরা পরোক্ষভাবে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত। দেশে ২৪৬টি উন্নতমানের মাঝারি আকারের খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যখাতের উন্নয়নে ইতোমধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকার রফতানির বিপরীতে ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে আসছে। ফলে দেশে দ্রুত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাত বিকশিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি করছে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এখন বড় দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। নিরাপদ খাদ্য প্রদানে ১৮টি মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করছে। খাদ্য শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আরও সজাগ হতে বলেন খাদ্যমন্ত্রী। খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসাইন বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এক সময় উপযোগী আইনের অভাবে এটি আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল। ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা আইন করা হয়। পরবর্তীতে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) প্রধান টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার নায়কি মিনামিজুকি বলেন, খাদ্যে ভেজাল বন্ধ করা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এর জন্য খাদ্য পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ ও কর্মদক্ষতা বাড়ানো দরকার বলেও জানান তিনি। এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবীর বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে নিরাপদ খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। এই সম্মেলন উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম এই বিষয়ে জানা ও শেয়ার করার জন্য। নিরাপদ খাদ্যের জন্য ভবিষ্যতে আরও ভাল কিছু করার সুযোগ থাকবে। এফআইসিসিআই সভাপতি রুপালি চৌধুরী বলেন, শতকরা হারে অধিকাংশ মানুষই অসুস্থতায় ভোগে এই নিরাপদ খাদ্য না পাওয়ার কারণে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা। নিরাপদ খাদ্য ও মান বজায় রাখতে কাজ করে যেতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসটিআই’র মহাপরিচালক মোঃ সাইফুল হাসিব এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। উদ্বোধনী পর্বের পর শুরু হয় দিনের দ্বিতীয় সেশন। এই সেশনে বৈশ্বিক খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই অধিবেশনের প্রথম বক্তা কোডএক্স এলিম্যানটারিয়াস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এফএসএসএআই’র সাবেক উপদেষ্টা সঞ্জয় দেব। তিনি তার বক্তব্যে খাদ্য নিরাপত্তার বৈশ্বিক পরিস্থিতির সারমর্ম তুলে ধরেন। অনেক দেশেই রাস্তায় কোন মানের খাদ্য ব্যবহার হচ্ছে তারও একটি ধারণা দেন। খাদ্য নিরাপদ হলে অনেকগুলো সমস্যা এমনিই কমে যায় সেটিও তুলে ধরেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিপার্টমেন্ট অব ফুড সেফটি এ্যান্ড জুনেসিস, রিস্ক এসেসমেন্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের কারমেন সাভেলি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তা তুলে ধরেন। প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা, খাদ্য উৎপাদন-বিপণন ও বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। যে সকল খাদ্যে ঝুঁকি আছে তা নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় রাখার কথাও বলা হয়। একই সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার করার বিষয়ে মূল বক্তব্য দেন আটলান্টিক কোকা-কোলা ফার ইস্ট এশিয়া লি. সায়েন্টিফিক এ্যান্ড রেগুলেটরি এ্যাফেয়ার্সের পরিচালক এনজি কিম কিয়েট। এই অধিবেশনে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিধি বিধান জোরদারকরণ ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেন প্যালেন আলোচকরা। আজ বৃহস্পতিবার সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এদিনও প্রত্যেকটি স্তরে খাদ্যের মান বহাল রাখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
×