ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চামড়া কিনতে ৭৩৫ কোটি টাকা ঋণ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৪ আগস্ট ২০১৭

চামড়া কিনতে ৭৩৫ কোটি টাকা ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় রফতানি খাত চামড়া। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে এই খাতে। কম সুদে সহজে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রফতানিতে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোরবানি পশুর চামড়া কিনতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকসহ দশ বাণিজ্যিক ব্যাংক এবার ব্যবসায়ীদের প্রায় ৭৩৫ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে। গত বছর এই ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিয়েছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। মূলত চামড়ার বড় সরবরাহ আসে কোরবানির ঈদে। এ ঈদেই বেশি চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চামড়া ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ দেয়ার উদ্যোগও থাকে ব্যাংকগুলোর। চামড়া খাতে দেয়া এবারের ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১১ শতাংশ। ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব চামড়া ব্যবসায়ী আগের ঋণ পুরোপুরি শোধ করেছেন, শুধু তাদেরই ঋণ দেয়ার জন্য নীতিমালা করেছে অগ্রণী ব্যাংক। এ ছাড়া ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটিকে শতভাগ উৎপাদনে থাকতে হবে। ব্যাংক সূত্র বলছে, এ্যাপেক্স ট্যানারি ছাড়া অন্য কোন গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়। এই খাতে ব্যাংকটি ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আগের বছর ব্যাংকটি এই খাতে ৬০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল-ইসলাম বলেন, যারা ঋণ পরিশোধ করছেন শুধু তারাই ঋণ পাবেন। এই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে শর্ত পূরণ করে ঋণ নেয়ার মতো গ্রাহক তেমন নেই। চামড়া খাতে ঋণ নেয়ার জন্য সোনালি ব্যাংকে বেশ কয়েকজন গ্রাহক থাকলেও নিয়মিত না থাকায় অনেকেই ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আগের বছর ব্যাংকটি ভুলুয়া ট্যানারি, আমিন ট্যানারি ও কালাম ট্যানারিকে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। চলতি বছরও ওই প্রতিষ্ঠান তিনটিকে সমপরিমাণ ঋণ দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ব্যাংকটি। জানা গেছে, আগের বছরের মতো চলতি বছরও চামড়া কিনতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেবে জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংক চামড়া কিনতে গত বছর ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। ২০টি প্রতিষ্ঠান এই ঋণ পায়। চলতি বছর এই খাতের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকটি। এ জন্য চামড়া ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছে, পূর্বের ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষ তাদের ঋণ প্রদান করা হবে। রূপালী ব্যাংকের এখন পর্যন্ত চামড়া খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। গত বছর এই খাতে ১৬০ কোটি টাকা ঋণ দেয় রূপালী ব্যাংক। এবার চামড়া খাতে ঋণের জন্য ১৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারী খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এই খাতে সীমিত আকারে ঋণ দিয়ে থাকে। চলতি বছরও ব্যাংক দুটি এই খাতে অর্থায়ন করবে। এছাড়া আরও অন্তত ৬ বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে ঋণ বিতরণ করবে। সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে নগদ সহায়তার হার সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া চামড়াশিল্প নগরী থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রফতানিতে নগদ সহায়তার হার ১০ শতাংশ করা হয়েছে। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে চামড়া রফতানি করে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য ২০১৭’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। জানা গেছে, পশুর ভালমানের চামড়ার সিংহভাগ জোগান আসে কোরবানির পশু থেকে। কোরবানি করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বাছাই করা পশু ক্রয় করে থাকেন। ফলে শিল্পের জন্য উন্নত মানের চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীরাও এ সময় ব্যতিব্যস্ত থাকেন। ট্যানারিশিল্পে বার্ষিক চামড়ার চাহিদার বড় অংশই সংগ্রহ করা হয় কোরবানি দেয়া পশু থেকে। এই চামড়া অন্যান্য সময় সংগৃহীত পশুর চামড়া থেকে উন্নত মানের। বিপুল পরিমাণ চামড়ার সরবরাহ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ সময় সব চামড়া নিজেদের নগদ অর্থে কিনতে পারেন না। তাই প্রতিবছরই ঈদ-উল-আযহার আগে চামড়া খাতে ঋণ বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা তৎপর হন। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলোতে বিশেষত রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ধরণা দিয়ে থাকেন। তবে তথ্যমতে, চামড়া খাতে ৪৫০ কোটি টাকার মতো খেলাপী ঋণ রয়েছে; যার বেশিরভাগই বিতরণ করা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের প্রথম ভাগে। বর্তমানে এই খাতে ঋণ আদায়ের হার আগের তুলনায় ভাল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে চামড়া খাতে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেয়া হয়। এবারও একই পরিমাণে ঋণ মিলবে। তিনি বলেন, এসব ঋণ চলতি মূলধন হিসেবে প্রায় ১১ শতাংশ সুদে দেয়া হয়। অথচ রফতানি ঋণ হিসেবে দেয়া হলে ৮ শতাংশ সুদে তা পাওয়া যেত।
×