ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেইমারের বিরুদ্ধে বার্সিলোনার মামলা

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৪ আগস্ট ২০১৭

নেইমারের বিরুদ্ধে বার্সিলোনার মামলা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নেইমারের বার্সিলোনা ছাড়া নিয়ে নাটক এখনও শেষ হয়নি। অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর ন্যুক্যাম্প ছেড়ে ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে (পিএসজি) যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। প্যারিসের পরাশক্তিদের হয়ে ইতোমধ্যে জ্বলজ্বলে অভিষেকও হয়েছে। এরপরও থামেনি দলবদলের ঝামেলা। বরং বার্সা ও নেইমারের মধ্যে দ্বন্দ্বটা আরও প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। সম্পর্কের তিক্ততাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখন আদালত পর্যন্ত যেতে হচ্ছে দুইপক্ষকে। ব্রাজিলিয়ান তারকার কাছে চুক্তি নবায়নের বোনাস ফেরত পেতে চায় কাতালানরা। কেবল সেটিই নয় এরসঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানাও দিতে হবে নেইমারকে। তিনি অপারগ হলে পিএসজিকে সেই অর্থ ফেরত দিতে বলেছে কাতালান ক্লাবটি। অর্থাৎ নেইমারের কাছে কমপক্ষে ৮.৫ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে তার সাবেক ক্লাব বার্সিলোনা। চুক্তির নিয়ম ভঙ্গের দায়ে তার কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। ২০১৬ সালে বার্সার সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়নের সময় বোনাস হিসেবে আলাদাভাবে নেইমারকে ২৬ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বার্সিলোনা ওই অর্থ পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করায় কাতালানের ক্লাবটি ছেড়ে পিএসজিতে পাড়ি জমান সেলেসাও তারকা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বার্সিলোনা জানিয়েছে, আইনসম্মতভাবেই ক্লাব এই অর্থ দাবি করছে। কারণ চুক্তি নবায়নের সময় তাকে কিছু অর্থ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করেননি। এর ফলে ৮.৫ মিলিয়ন ইউরো লোকসান হয়েছে। অর্থ পরিশোধের বিলম্বের কারণে ১০ শতাংশ করে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তির পরপরই নেইমারের পরিবার তাদের স্বার্থ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জবাব দিয়েছে। এনএন কনসাল্টোরিয়া নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যেহেতু ওই খেলোয়াড় চুক্তির বৈধ শর্তের প্রতি শতভাগ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই ক্লাবটি ছেড়ে এসেছে, সেহেতু নতুন এই খবরটি শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছি। ২০১৬ সালে চুক্তি নবায়নের সময় প্রতিশ্রুত বোনাস এখনও পরিশোধ করেনি বার্সিলোনা। বর্তমানে ওই অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে। চুক্তিবদ্ধ থাকার পরও নেইমারকে পিএসজি যাওয়া থেকে রুখতে পারেনি বার্সিলোনা। চুক্তির শর্ত পূরণের মাধ্যমে চলতি মাসের শুরুতে ন্যুক্যাম্প ছেড়ে প্যারিসে উড়াল দেন নেইমার। সাড়া জাগানো এই দলবদল প্রক্রিয়া সম্পাদন হওযার আটদিন পর গত ১১ আগস্ট বার্সিলোনা নেইমারের বিরুদ্ধে কর্মসংস্থান আদালতে তাদের দাবি সম্বলিত একটি আবেদন নথিভুক্ত করেছে। এ বিষয়ে কিভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তা জানতে চেয়ে কাতালানীয় জায়ান্টরা স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের মাধ্যমে ফ্রেন্স ফুটবল ফেডারেশন ও ফিফা বরাবরে আবেদন করেছে। নেইমার যদি দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ না করে তাহলে তার আয়ের অর্থ থেকে সেটি প্রদান করার জন্য পিএসজিকে অনুরোধ জানিয়েছে বার্সা। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর আয়কর পরিশোধের পরও নেইমার ৩০ মিলিয়ন ইউরো আয় করবেন। এমন পরিস্থিতি প্রকৃত ঘটনা তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। দিন দুয়েক আগে বোমাটা ফাটান নেইমার। ঘরের মাঠে তুলুজের বিরুদ্ধে দুই গোলের স্মরণীয় অভিষেকের পর বার্সিলোনার বোর্ড অব ডিরেক্টরদের দিকে তীর ছুড়েছিলেন। এমনও বলেছিলেন, বার্সায় তার সাবেক সতীর্থরা কেউ নাকি সুখে নেই। এরপর ভীষণ চাপে থাকা বার্সার ক্লাবকর্তারা পাল্টা তীর ছুড়তে একদমই দেরি করেননি। তারা চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে মামলা ঠুকে দিয়েছেন নেইমারের বিরুদ্ধে। তবে অনাকাক্সিক্ষত এই ঘটনায় নেইমারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে পিএসজি। ক্লাবটি তাদের অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলেছে, নেইমার জুনিয়রের মতো, পিএসজি আবারও জানাচ্ছে ক্লাব সবসময় যে কোন চুক্তির নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছে। বার্সিলোনার এই আচরণে আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত। এদিকে মামলা করার কিছুক্ষণ পরই বার্সিলোনায় হাজির হন নেইমার। ক্লাবের কাজে নয় পুরনো সতীর্থ মেসি-সুয়ারেজ-পিকেদের সঙ্গে দেখা করতেই স্পেনে আসেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। কেবল তাই নয়, নেইমারের সফরসঙ্গী ছিলেন সাবেক বার্সা তারকা দানি আলভেজও। সাবেক সতীর্থদের সঙ্গে দারুণ কিছু সময় কাটিয়েছেন তারা। ইনস্টাগ্রামে সেই ছবিগুলো পোস্ট করেছেন নেইমার। ফলে আরেকবার একসাথে দেখা যায় বিখ্যাত ‘এমএসএন’ ত্রয়ীকে। এই ছবিতে এখন সয়লাব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। এর ফলে একটি বিষয় পরিষ্কার, নেইমারের সঙ্গে বার্সার তিক্ত সম্পর্ক হলেও সেটা খেলোয়াড়দের সম্পর্কে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং মেসি-সুয়ারেজ-পিকেরা নেইমারের পাশেই আছেন। এখন অনেকে আবার এও বলছেন, বার্সায় সুখে নেই মেসি। বিশেষ করে ক্লাব কর্মকর্তাদের ওপর বিরক্ত তিনি। আগামী বছরই বার্সিলোনার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের। নতুন চুক্তির ব্যাপারে একের পর এক সময়ক্ষেপণ করেই যাচ্ছেন। এমনও বলা হচ্ছে নেইমারের পথ অনুসরণ করতে পারেন তিনিও। কয়েকদিন আগে গুঞ্জন ছড়ায় ম্যানচেস্টার সিটি নাকি ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেও মেসিকে কিনতে প্রস্তুত। পেপ গার্ডিওলাও আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাহলে কি সত্যিই বার্সিলোনা ছাড়বেন মেসি?
×