ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাক্সওয়েল মনে করেন দুইজনই অস্ট্রেলিয়ার জন্য আতঙ্ক

সাকিব-মুস্তাফিজকে নিয়ে ভাবনায় স্মিথরা

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৪ আগস্ট ২০১৭

সাকিব-মুস্তাফিজকে নিয়ে ভাবনায় স্মিথরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অস্ট্রেলিয়ার হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। নিজেকে টেস্টে প্রমাণ করতে পারছেন না। দলে আসা-যাওয়ার মাঝেই থাকেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নৈপুণ্যের ওপরই তার এ্যাসেজে থাকা না থাকা নির্ভর করছে। এ ব্যাটিং অলরাউন্ডার আবার বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারকে যেন ভয় পাচ্ছেন। সেই দুই ক্রিকেটার হচ্ছেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ম্যাক্সওয়েলের কথাবার্তাতেই বোঝা গেছে বাংলাদেশের এ দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে ভাবনায় আছে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাক্সওয়েল তো এমন ইঙ্গিত দিলেন অস্ট্রেলিয়ার আতঙ্ক এ দুই ক্রিকেটার। বুধবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অনুশীলন ছিল না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অনুশীলন ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সকালে অনুশীলন শুরু করতে পারেনি অসি দল। তারা দুপুরে অনুশীলন করেছে। ম্যাক্সওয়েল অস্ট্রেলিয়া দলের মুখপাত্র হিসেবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন। সেখানেই মুস্তাফিজ ও সাকিবকে নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন। মুস্তাফিজকে নিয়ে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে মুস্তাফিজ বৈচিত্র্যময় একজন বোলার। আইপিএলে আমরা তার বিপক্ষে খেলেছি। আরও বেশি টেস্ট ক্রিকেটে খেলার জন্য সে হয়তো তার বলের গতি কমিয়ে দিয়েছে। তবে এখনও সে অসাধারণ বোলার। যার বল সুইং করার ক্ষমতা আছে। অবিশ্বাস্য সেøায়ারও দিতে পারে সে। সে গতানুগাতিক বাঁহাতি বোলার নয়।’ মুস্তাফিজের কবজির কারুকাজও দেখেছেন ম্যাক্সওয়েল। সেটি আইপিএলেই। তাই তার কবজির ব্যবহার নিয়ে বলেছেন, ‘এটি বুঝতে পারা খুব কঠিন।’ সঙ্গে সাকিবকে নিয়ে জানিয়েছেন, ‘একই বিষয় বলব সাকিবকে নিয়েও। সে সত্যিই অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার। দীর্ঘদিন ধরে সে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। সে অসাধারণ একজন ক্রিকেটার।’ ১১ বছর পর দুই দল আবার পরস্পরের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলবে। ২০০৬ সালে সর্বশেষ দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। এ পর্যন্ত দুই দল চারটি টেস্ট খেলেছে। প্রতিটি টেস্টেই অস্ট্রেলিয়ার জয়জয়কার হয়েছে। তবে এখন সময় বদলেছে। বাংলাদেশ দলও অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দলটি দেশের মাটিতে সর্বশেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারিয়েছে। বিদেশের মাটিতেও সর্বশেষ টেস্টে জিতেছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়া সর্বশেষ টেস্টে ভারতের মাটিতে ভারতের কাছে হেরেছে। উপমহাদেশে অসিদের অবস্থা খুবই করুণ। তা সবারই জানা। তাই বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ২৭ আগস্ট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের দারুণ সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে। সেই সম্ভাবনার পালে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে হাওয়ায় লাগিয়ে রেখেছেন। বলেছেন, অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্ন সফল হবে যদি ঠিকঠাক মতো অসিদের কাবুতে রাখা যায়। ম্যাক্সওয়েলও ভাল কিছু করার পূর্বশর্ত হিসেবে ভাল খেলার বিকল্প দেখছেন না। সিরিজ যে তাদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে তাও ভাল করেই বুঝেন। তাইতো বলেছেন, ‘টেস্ট সিরিজে তাদের (বাংলাদেশের) বিপক্ষে প্রভাব বিস্তার করতে হলে সত্যিই আমাদের ভাল খেলতে হবে। আমরা খেলায় নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে চাই।’ নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে অভিনব কায়দায় প্রস্তুত হচ্ছেন ম্যাক্সওয়েলরা। ব্যাটিং অনুশীলনে কায়দা ব্যবহারও করছেন। কি সেই কায়দা? প্যাড ছাড়া ব্যাটিং করা। যাতে ব্যাটিং করার দক্ষতা বাড়ে। ব্যাট দিয়ে বলকে ঠেকিয়ে দেয়ার কায়দা শক্তিশালী হয়। ম্যাক্সওয়েলই যেমন বলেছেন, ‘এটা সম্ভবত প্রথম করেছিলাম ২০১২ সালে যখন আমাদের ব্যাটিং কোচ ছিলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। আমরা তখন দুবাইয়ে নেট অনুশীলন করেছিলাম। আমি মনে করি এই পদ্ধতিতে ব্যাটের মৌলিক ব্যবহার করা যায়। আপনি যদি কোনরকম নিরাপত্তা ছাড়াই ব্যাটিং করেন তাহলে আপনার রক্ষণ আরও শক্তিশালী হবে।’ বাংলাদেশী বোলারদের বল মোকাবেলায় এই পদ্ধতি আরও বেশি কার্যকর বলে মনে করেন এখন পর্যন্ত ২০১৩ সাল থেকে পাঁচ টেস্টে ২৩.৯০ গড়ে ২৩৯ রান করা ও ৭ উইকেট নেয়া ম্যাক্সওয়েল, ‘বাংলাদেশী বোলাররা সবসময়ই স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল করে থাকে। যা রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করে। এই অনুশীলনের মাধ্যমে সেই চাপ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব এবং এতে রক্ষণটা আরও শক্ত হবে। বাড়িতে আমি এটা নিয়ে অনেক অনুশীলনই করেছি। আশাকরি খেলা শুরুর আগে আমি আরও তৈরি হওয়ার সুযোগ পাব।’ অবশ্য ঢাকায় পা রাখার আগে শুধু বৃষ্টি হওয়ার কথা শুনলেও একদিন রোদে ত্যক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে ম্যাক্সওয়েলদের। তাতে করে যদি কোনভাবে তীব্র রোদ থাকে তাহলে যে অসিদের খেলাতেও এর প্রভাব পড়বে তা ভাল করেই বোঝা গেছে। ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘প্রথমদিনই আমি হিটস্ট্রোকের শিকার হয়ে গেলাম। শুরু হিসেবে মোটেও ভাল ছিল না। বাইরে দৌড়াদৌড়ি করলাম। তারপর ভেতরে গিয়ে ফিটনেস টেস্ট সারলাম। এরপর আবার বাইরে। তাতে কাজ হলো না। শরীর কিছুটা অসাড় হয়ে গেল। কিন্তু আইস বাথ দেয়ার পর বেশি করে তরল খেয়ে ঠিক হয়ে উঠেছিলাম।’ তবে শুরুর দিনের দশা কাটিয়ে উঠেছেন ম্যাক্সওয়েল। এমনটিই জানালেন, ‘কাল (মঙ্গলবার) দিনটা বেশ ভাল ছিল। আগের রাতে ও সকালের বৃষ্টির কারণে। ময়েশ্চার বেরিয়ে এলো মাঠে। তাতেই আমাদের কাজটা দারুণ হলো। বেশ ভাল ছিল। গত কদিন ধরে ভাল কাজ চলছে। আমার মনে হয় দলের অন্যরাও এখন বেশ উপভোগ করছে এখানে।’ অসিরা উপভোগ করছেন। তবে সঙ্গে সাকিব-মুস্তাফিজদের নিয়ে ভাবনাও করছেন।
×