ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩০ মিশনে

রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি ৩৬ মিশনের

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৩ আগস্ট ২০১৭

রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত  হয়নি ৩৬ মিশনের

রহিম শেখ ॥ রফতানি উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত মিশনগুলোর প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তৎপরতার নির্দেশ কোন ফল দিচ্ছে না। ফলে রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না অধিকাংশ বিদেশী মিশন। মোট ৫৭টি মিশনের মধ্যে নতুন অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২১টি মিশনে। তবে রফতানি আয়ের নেতিবাচক ধারায় থাকা ৩৬টি বাণিজ্যিক মিশনের মধ্যে ৩০টিতে আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতানুগতিক দেশের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রফতানি খাত। এজন্য নতুন নতুন দেশের দিকে ব্যবসায়িক পরিসর বাড়াতে হবে। মিশনগুলো এই কাজে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে পারে। জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথম জুলাই মাসে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩২০ কোটি ৭ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫৩ হাজার কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। রফতানির এ আয়ে বড় ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা বৈদেশিক মিশনগুলো। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৫৭টি মিশন রয়েছে। রফতানির ৯৮ শতাংশেরও বেশি আয় হয় এসব মিশনের আওতায় থাকা অঞ্চলগুলো থেকে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে মোট রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ৩২০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার, যা গত অর্র্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। ৫৭টি মিশনের মধ্যে ২১টি মিশন রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আর ব্যর্থ হয়েছে ৩৬টি মিশন। এর মধ্যে ৩০টি মিশনের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এগুলো হলোÑ ওয়াশিংটন, কুয়ালালামপুর, প্যারিস, মস্কো, তাসখন্দ, ভিয়েনা, কোপেনহেগ, কায়রো, বাগদাদ, ম্যানিলা, লিসবন, টোকিও, কাঠমান্ডু, ইসলামাবাদ, রিয়াদ, কলোম্ব, বার্লিন, সিঙ্গাপুর, ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, অটোয়া, ইয়াঙ্গুন, দুবাই, থিম্পু, ত্রিপোলি, প্রিটোরিয়া, দোহা, রোম, রাবাত, স্টোকহোম, হ্যানয় ও সিউল। এর মধ্যে বৃহৎ ও প্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মিশনের জুলাই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ কোটি ১৬ লাখ ডলার আয়ের। কিন্তু আয় হয়েছে ৫০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কম রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে। ফ্রান্সের প্যারিস মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ রফতানি কম হয়েছে। জাপানের টোকিও, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, রাশিয়ার মস্কো, জার্মানির বার্লিন, দিল্লী ও দুবাই মিশনের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি কম হয়েছে। তবে একক বাজার হিসেবে যুক্তরাজ্যের লন্ডন মিশনের (আয়ারল্যান্ডসহ) রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রফতানি। অর্জন হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ মিশন থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এছাড়া আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিশনভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় দেশের রফতানির চিত্র আশাব্যঞ্জক বলা যায়। কিছু মিশন পিছিয়ে পড়লেও অনেক মিশন ভাল করছে। তারা বলেন, মিশনগুলোর কাজ হলো, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ করে দেয়া। বাকি কাজটা করতে হবে ব্যবসায়ীদের। দ্বিপক্ষীয় সংযোগ ঘটানোই মিশনগুলোর প্রধান ভূমিকার বিষয়। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রফতানি আয় করতে পারা ২৫টি মিশন হলোÑ বেইজিং, মস্কো, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, কায়রো, ভিয়েনা, এথেন্স, হংকং, বাগদাদ, রোম, বইরুত, পোর্ট লুই, রাবাত, হেগ, মাস্কাট, ম্যানিলা, লিসবন, কোপেনহেগেন, রিয়াদ, কলম্বো, কাঠমান্ডু, ইসলামাবাদ, ব্যাংকক, তাসখন্দ ও ওয়ার্সো। যদিও এ মিশনগুলোর অধিকাংশই অপ্রচলিত ও ছোট বাজার। এদিকে বর্তমানে ৫৭টি মিশনের মধ্যে ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কমার্শিয়াল ইউং রয়েছে। এগুলো থেকে অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ২৪৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এই ১৮টি ইউংয়ের মধ্যে শুধু ৬টি উইং তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। এগুলো হলোÑ ব্রাসেলস, অটোয়া, তেহরান, মাদ্রিদ ও লন্ডন। আর ব্যর্থ হওয়া ১২টি উইংসহ মোট ১৬টির রফতানি আয় আগের বছরের এ সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, অটোয়ার, বেজিং, প্যারিস, বার্লিন, তেহরান, টোকিও, কুয়ালালামপুর, ইয়াঙ্গুন, মস্কো, সিঙ্গাপুরম, দুবাই, লন্ডন, ওয়াশিংটন। এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও সারা বিশ্বে এক ধরনের নীরব মন্দা চলছে। এটিই রফতানি আয় কমার আসল কারণ। তবে রানা প্লাজা ধসের পরে বেশকিছু বায়ার ব্র্যান্ড তাদের ব্যবসা এখানে বন্ধ না করলেও সম্প্রসারণ করেনি। এটিও রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ কম হচ্ছে। এর ফলে রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ প্রসঙ্গে রফতানিকারকদের সংগঠন ইএবির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে বলেন, গতানুগতিক দেশের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রফতানি খাত। নতুন নতুন দেশের দিকে ব্যবসায়িক পরিসর বাড়াতে হবে। মিশনগুলো এই কাজে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে পারে। বিশেষ করে কোন দেশে কখন কোন ধরনের পণ্যের উপযোগিতা ও চাহিদা রয়েছে, সেটা তারা খুঁজে বের করে সে মোতাবেক ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিতে পারে। তবেই সফলতা আসবে।
×