ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী অঞ্চলে পশুহাটে বন্যার প্রভাব

আমদানি বাড়লেও ক্রেতা কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ আগস্ট ২০১৭

আমদানি বাড়লেও ক্রেতা কম

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলের পশুর হাটগুলোয় গরু-ছাগলেও আমদানি বাড়লেও এখনও জমে ওঠেনি কেনাবেচা। বন্যার প্রভাবে হাটে পর্যাপ্ত পশু আমদানি হলেও সে অনুপাতে ক্রেতা আসছেন না। তবে হাটের ইজারাদাররা জানান, দু’-একদিনের মধ্যে জমে উঠবে কোরবানির পশুর হাট। গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী ও আশপাশের হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠলেও ক্রেতার সংখ্যা কম। বেচাকেনাও যেন থেমে গেছে। এসব হাটে বন্যার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহীর আশপাশে অনেক এলাকা এখন বন্যাকবলিত। সে কারণে এ অঞ্চলের মানুষ বাড়িতে গরু রাখতে পারছেন না। বিশেষ করে গোখাদ্যের অভাবে হাটে তুলছেন গরু-ছাগল। সামনে কোরবানিতে ভাল দাম পাওয়ার আশায় নিয়ে আসছেন হাটে। ফলে পশুতে ভরছে হাট। তবে ভারতীয় গরুর আমদানি আর ক্রেতা না থাকায় হতাশ হচ্ছেন গরুর মালিকরা। ইতোমধ্যে দেশী গরুর পাশাপাশি হাটে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় গরুও আসতে শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলা মিলে ছোট-বড় প্রায় ৬৫টি পশুর হাট বসে। এর মধ্যে রাজশাহী সিটি হাট এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাট। সারাদেশের পাইকাররা আসেন এ হাটে। রাজশাহী আঞ্চলিক প্রাণিসম্পাদ অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজশাহী অঞ্চলে চলতি বছর কোরবানিতে চাহিদা রয়েছে সাড়ে ১০ লাখ পশুর। এর বিপরীতে ৩৫ হাজার ছোট-বড় খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মিলে মজুদ আছে ১২ লাখ পশু। চাহিদার চেয়ে প্রায় দেড় লাখ পশু বেশি রয়েছে। গত শুক্রবার নওগাঁর চৌবারিয়া হাটে ছোট-বড় মিলে পাঁচটি গরু বিক্রির জন্য এনেছিলেন মান্দা উপজেলার নুরুল্যাবাদ ইউনিয়নের চকদেবীরাম গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন। হাটেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বন্যায় তাদের গ্রাম ১০ দিনের বেশি সময় ডুবে রয়েছে। এমন অবস্থায় গরু-ছাগল তো দূরের কথা, মানুষের থাকার অবস্থা নেই। তিনি আরও বলেন, গরু রাখার তো কোন জায়গা নেই, তার পরে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে চারগুণ। সে কারণে বাড়িতে থাকা দুটি হালের বলদসহ পাঁচটি গরু হাটে তুলেছেন বিক্রি করার জন্য। এমন অবস্থা শুধু মান্দার চকদেবীরাম গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিনের নয়, উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক তাদের বাড়িতে পালিত গরু-ছাগল বিক্রি করতে হাটে তুলতে শুরু করছেন। এদিকে কোরবানির ঈদ টার্গেটে এক বছর ধরে গরু পালন করছে খামারিরা। এখন শেষ সময়েও গরুর ভাল দাম না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারছেন না। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেক ছোট খামারি। কেরানীগঞ্জে খামারে বিভিন্ন জাতের গরু নিজস্ব সংবাদদাতা কেরানীগঞ্জ থেকে জানান, আতাসুর, কোনাখোলা, কলাতিয়া ও আটিবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় তিন শতাধিক খামারে পালন করা হয় উন্নতজাতের ষাঁড় ও বলদ। খামারগুলোতে বিভিন্ন জাতের গরু বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। সুমাইয়া এ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী হাজী ফরহাদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে ৮-১০ মাস আগে থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন দামে গরু ক্রয় করে কেরানীগঞ্জের আতাসুর এলাকায় আমার নিজস্ব খামারে গরুগুলো লালন-পালন করে আসছি। আমার খামারে বর্তমানে ১৭০টি বিভিন্ন জাতের গরু ও মহিষ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির মূল্য ছয় লাখ টাকা, এর ওজন ৯৮০ কেজি। ইতোমধ্যে ১৫টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি গরুগুলো এ এলাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করা হবে। আনোয়ার সিটি এ্যাগ্রোভেটের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর আমার খামারে ১৮০টি গরু গত ছয় মাস ধরে পালন করে আসছি। প্রতিদিন একটি গরুর পেছনে ৪-৫শ’ টাকা খরচ রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ডাক্তার দ্বারা পশুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে গরুগুলো ঈদের আগে অসুস্থ হয়ে না পড়ে। আমার খামারের গরুগুলো মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে কোন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। সম্পূর্ণ দেশীয় খড়, কুঁড়া ও কাঁচা ঘাস খাইয়ে লালন-পালন করা হয়। কোনাখোলা এলাকার খামারের মালিক রায়হান শরীফ ২০১৩ সালে কাঁচপুর এলাকায় ১০টি গরু নিয়ে খামার চালু করেন। সেখানে সাফল্যের মুখ দেখে কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকায় নিজস্ব জায়গায় বড় পরিসরে খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৫শ’ গবাদিপশু আছে। এর মধ্যে তিন শতাধিক বিভিন্ন জাতের ষাঁড় ও বলদ রয়েছে। গত রবিবার ওই খামারে কথা হয় রাজধানীর বনানী থেকে আসা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন সঙ্গে। তিনি গত ঈদ-উল-আযহায় এ খামার থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কিনেছিলেন। এবারও এসেছেন গরু কিনতে। তার গরু পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মালিক দামে ছাড় দিচ্ছেন না। গদাবাগ এলাকার সারফু এ্যাগ্রোভেটের মালিক সারফুদ্দিন জানান, যশোর ও কেরানীগঞ্জে তার দুটি খামার আছে। কেরানীগঞ্জের খামারে ৭০টি উন্নতজাতের বলদ ও ষাঁড় আছে। তিনি বলেন, তারা পশু মোটাতাজাকরণের জন্য রাসায়নিক ও ইনজেকশন ব্যবহার করেন না। চুয়াডাঙ্গায় খামারিদের ঘরে উঠবে ৭শ’কোটি টাকা রাজীব হাসান কচি চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, ঈদকে সামনে রেখে বাণিজ্যিক খামারসহ পারিবারিকভাবে পালন করা হয়েছে ৫৬ হাজার ২২৬ গরু ও এক লাখ ৭২ হাজার ৭৫২ ছাগল, যা গত বছরের তুলনায় গরু চার হাজার এবং ছাগল ৫০ হাজার বেশি। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এ গরু-ছাগল বিক্রি হলে পালনকারী কৃষকের ঘরে উঠবে ৬শ’-৭শ’ কোটি টাকা। সরেজমিন দেখা গেছে, এবারও বসে নেই চুয়াডাঙ্গার গরু পালনকারীরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু-ছাগল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ৩০-৩৫ হাজার পরিবার ও কয়েক শ’ খামারি নেপিয়ার ঘাস, বিচালী, খৈল, ভুসি, ভাত, কাঁঠালের পাতাসহ নানান প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু-ছাগল মোটাতাজা করছেন। চাকরি-ব্যবসাসহ নানান শ্রেণীর মানুষ তাদের নিজ নিজ পেশার পাশাপাশি দু’-একটি গরু-ছাগল পালন করছেন। এতে বছর শেষে তারা মোটা অঙ্কের টাকা আয় করছেন। তবে ভারত থেকে গরু আমদানি হলে কাক্সিক্ষত মূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় চিন্তিত খামারিরা। জেলায় শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু এবং ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন করা হয়। এসব গরু-ছাগল স্থানীয় হাট ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন পশুর হাটে বিক্রি করা হবে। গরু-ছাগল পালন লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিক খামারিদের পাশাপাশি অনেকে পারিবারিকভাবে সচ্ছলতা এনেছেন। দিনমজুর, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ছাত্র ও গৃহিণীরা নিজ কাজের পাশাপাশি প্রতি বছরই দু‘একটি গরু-ছাগল পালন করছেন। সেই লাভ থেকে মেটাচ্ছেন বাড়তি চাহিদা।
×