ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক সপ্তাহে দুই হাজারেরও বেশি অনুপ্রবেশ

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর ফের নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৩ আগস্ট ২০১৭

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর ফের নির্যাতন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমারে মায়ু পর্বতের পাশে ছয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষকে হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। অত্যাচার থেকে বাঁচতে এক সপ্তাহে দুই সহস্রাধিক রোহিঙ্গা ফের অনুপ্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। কাউন্টার টেররিজম অপারেশনের নামে সন্ত্রাসী, চরমপন্থী দমনের অজুহাতে রাখাইনে রোহিঙ্গা পল্লীতে সেনাবাহিনী তল্লাশি, মারধর ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এ পর্যন্ত যত অভিযান হয়েছে, তার একমাত্র উদ্দেশ্য রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করা। জাতিসংঘও ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে তাদের জন্মভূমি থেকে তাড়িয়ে সমূলে উচ্ছেদ করার জন্য অপতৎপরতা চালাচ্ছে। নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দেয়া তথ্য এবং সীমান্ত এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। রাখাইনে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা দিগি¦দিক পালিয়ে যাচ্ছে দাবি করে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, এক সপ্তাহে ২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং ও বালুখালী বস্তিসহ আশপাশের বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে জেলার বিভিন্নস্থানে স্বজনদের বাড়িঘরে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রোহিঙ্গা অনুপ্রবশ ঘটেনি বলে জানিয়েছে। এদিকে নাফ নদী অতিক্রম করে অবৈধভাবে টেকনাফে প্রবেশের চেষ্টাকালে নারী-শিশুসহ ৩১ রোহিঙ্গাকে আটকের পর মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদস্যরা। শাহপরীর দ্বীপের গুলারচর পয়েন্ট দিয়ে একটি নৌকায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় তাদের আটক ও ওসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, নৌকাতে ৪ শিশু ও ৯ নারীসহ মিয়ানমারের ৩১ নাগরিক ছিল। সূত্র জানায়, দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়, তারা বাঙালী। তাই তাদের যেভাবে হোক রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়ন করতেই হবে। এ লক্ষ্যে সেনা সদস্যরা গত দুই সপ্তাহ ধরে রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে একতরফা তল্লাশির নামে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। উত্তর মংডু, বুচিদং ও রাচিদং শহরে সেনাবাহিনী টহল ও রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের ওপর নির্যাতন, ধরপাকড় এবং চলাচলে বাধা দিচ্ছে সেনা সদস্যরা। রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে অস্ত্রের সন্ধানের নামে বিশেষ করে মুঠোফোন আছে কিনা তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গত বছর নবেম্বর-ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা নির্যাতনের তাৎক্ষণিক খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পেছনে তারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন, নিশ্চয় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে মুঠোফোন ছিল। তাই এবারে তল্লাশিতে তারা মুঠোফোন খুঁজছে আগেভাগে। মংডু, বুচিদং ও রাচিদং এলাকার রোহিঙ্গা পল্লীর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারফিউ বলবৎ থাকায় রোহিঙ্গারা দিনমুজুরি এমনকি খালে-ঝিলে মাছ শিকারও করতে যেতে পারছে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা পরিবারের ওপর দমন-পীড়ন চালালেও দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশ তা সহজে প্রচার না হয় সেই পন্থা অবলম্বন করে চলেছে।
×