ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব আল হাসান

দেশের মাটিতে আমরা অপরাজেয়’

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৩ আগস্ট ২০১৭

দেশের মাটিতে আমরা অপরাজেয়’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমরা জানি আমাদের সক্ষমতা আছে। আসলে বিশ্বাসটাই দরকার। কেবল জিততে জিততেই এই বিশ্বাস ভেতরে আসে। এখন আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই। দলের সবাই অনুধাবন করি দেশের মাটিতে আমরা অপরাজেয়। প্রতিপক্ষ কে এটা কোন বিষয় না। এই বিশ্বাসটাই আমাদের ভাল দলে পরিণত করেছে।’ কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে এমন কথাই বলেছেন সাকিব। গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতকারে দেশের ক্রিকেটের উত্তরণের গল্প শুনিয়েছেন সাকিব। সেই গল্পেই সাকিবের কণ্ঠে ‘দেশের মাটিতে বাংলাদেশ অপরাজেয়’ এ কথাটি বের হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত শুধু হারই হয়েছিল বাংলাদেশের। এই সময়ে ৭২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৭১টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের হারই যেন ছিল নিয়তি। দিন এখন পুরোটাই পাল্টে গেছে। এখন বাংলাদেশ খেলেই জেতার জন্য। আর নিজেদের মাঠে তো এখন প্রতিপক্ষ আতঙ্কে থাকে। সর্বশেষ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমি ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। এরআগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলেছে। আর টেস্টে গত বছর অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর এ বছর মার্চে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। দেশের মাটিতে ইংলিশদের হারানোর পর শ্রীলঙ্কায় গিয়ে লঙ্কানদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। কি করে এতোটা এগিয়ে যাওয়া? সাকিব বলছেন, ‘এটা লম্বা গল্প। অনেকটা অবিশ্বাস্য। আমার মনে হয় বাংলাদেশের অনেকেও আমাদের এত উন্নতি আশা করেননি।’ সাকিব আরও যোগ করেন, ‘আগে বড় দলের সঙ্গে টেস্টে আমাদের মাইন্ডসেট থাকত ড্র করব। কিংবা পাঁচদিনে খেলা নিয়ে যাব। কিন্তু জিতব এমনটা ভেতর থেকে আসত না। তারপরই আমরা চিন্তা করলাম জিততে চেষ্টা করি। জেতার জন্যই খেলে দেখি। একটা সময় মাইন্ডসেট বদলালো। এখন আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা জিততে পারি।’ গত মার্চে শ্রীলঙ্কার মাঠে সর্বশেষ খেলা টেস্টে ৪ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। দেশের ইতিহাসের শততম টেস্ট ম্যাচটিতে সেঞ্চুরি করে আর ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। অক্টোবরে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা সর্বশেষ টেস্টেও জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। সে ম্যাচেও ব্যাটে বলেও দারুণ অবদান ছিল সাকিবের। সব ফরমেটে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার আগে দাঁড়িয়ে আছেন অনন্য রেকর্ডের সামনে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পেলে সব টেস্ট খেলা দেশের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেয়ার তালিকায় ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ বোলার হিসেবে নাম উঠবে তার। মুত্তিয়া মুরলিধরন, ডেল স্টেইন ও রঙ্গনা হেরাথ আছেন সে তালিকায়। সাকিব অবশ্য এবারই প্রথম অসিদের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে মাঠে নামবেন। ৪৯ টেস্ট খেলা সাকিব বন্ধু তামিম ইকবালের সঙ্গে ক্যারিয়ারের ৫০ নম্বর টেস্টও খেলবেন এই সিরিজে। সাকিব মনে করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলার মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমাদের বর্তমান দলে কোন ক্রিকেটার নেই। ওদের বিপক্ষে খেলার জন্য আমরা রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করছি।’ এরআগে এক রেস্টুরেন্টে ‘ষোলো কোটি মানুষের প্রাণ সাকিব আল হাসান’ নামে সাকিবভক্তদের একটি সংগঠন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে সংবর্ধনা দিয়েছে। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজটি নিয়ে সাকিব বলেছিলেন, ‘আমরা যখনই খেলি জয়ের সম্ভাবনা থাকে। এবারও আছে। তবে অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই ভয়ঙ্কর দল। আমাদের সামনে তাই কঠিন একটা সিরিজ অপেক্ষা করছে। আমরা অবশ্য প্রস্তুত। ঘরের মাঠে আমাদের সর্বশেষ পারফর্মেন্স খুব ভাল ছিল। তাই সিরিজটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে।’ দীর্ঘ ১১ বছর পর টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ২৭ আগস্ট মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। সাকিব নিজের ক্যারিয়ারে অপ্রাপ্তি দেখেন না। বাংলাদেশ দল যা করেছে সবই তিনি প্রাপ্তির খাতায় রাখতে চান, ‘অপ্রাপ্তি তো দেখি না। বাংলাদেশ দল যা করেছে, সবই প্রাপ্তি আমাদের। দুটি ট্রফি পেলে ভাল হতো। যেহেতু আমরা দুইটির ফাইনালে গিয়েছি। তবে সুযোগ এখনও শেষ হয়নি। আমাদের উন্নতির ধারাটা উর্ধমুখী। আশাকরি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ট্রফি জিতবে।’
×