ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রাবনী আক্তার সান

কুক-ব্রডের ‘ইংলিশ’ রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৩ আগস্ট ২০১৭

কুক-ব্রডের ‘ইংলিশ’ রেকর্ড

ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ টেস্ট রান এ্যালিস্টার কুকের। দেশটির প্রথম ও একমাত্র দশ হাজারি ক্লাবের মালিকের ক্যারিয়ার– রান সাড়ে এগারো হাজারের (১১,৫৬৮) ওপরে। রেকর্ড ৩১টি সেঞ্চুরি তারই। আরও একবার নিজের জাত চেনালেন আধুনিক ইংল্যান্ডের সফলতম ব্যাটসম্যান। এজবাস্টনে ঐতিহাসিক ডে-নাইট টেস্টে উপহার দিলেন ২৪৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। গ্রাহাম গুচের ২৭ বছর (১৯৯০ সাল) পর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুর দেখল ইংলিশ ক্রিকেট। পাশাপাশি ঘরের মাটিতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান (৫,৯৭৩) সংগ্রহের দিক দিয়েও সাবেক ওই গ্রেটকে (৫,৯১৭) ছাড়িয়ে গেছেন কুক। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অধিনায়ক রুটও (১৩৬)। দুই তারকার দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ৫১৪ রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত তুলে নেয় ইনিংস ব্যবধানের বিশাল জয়। ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম কোনও ইংল্যান্ড ওপেনার টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকালেন। ২৭ বছর আগে সেবার লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে ৩৩৩ রান করেছিলেন গ্রেট গ্রাহাম গুচ। আর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংলিশ ওপেনারদের ডাবল সেঞ্চুরির ষষ্ঠ ঘটনা এটি। এই তালিকায় অন্য পাঁচজন হলেন, গ্রাহাম গুচ, জিওফ বয়কট, জন এডরিচ, স্যার লিওনার্দো হাটন ও এ্যান্ডি স্যান্ডহাম। পাশাপাশি ১৪ বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে কোন ওপেনারের ডাবল-সেঞ্চুরির ঘটনা এটি। ২০০৩ সালে এই এজবাস্টনেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭৭ রান করেছিলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। অন্যদিকে ১৯৭৪ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কুকের ২৪৩ রানের ইনিংসটি ইংল্যান্ডের কোন ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সেবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে কিংসটন ওভালে ২৬২ রানের ইনিংসে খেলেন ডেনিস এ্যামিস। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে কুক ও রুট ছাড়াও বড় ইনিংস খেলেন ডেভিড মালান। চতুর্থ উইকেটে কুকের সঙ্গে ১৬২ রানের জুটি গড়ার পথে তিনি করেন ১৩৯ বলে ৬৫ রান। ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির আশা জাগানো কুককে শেষ দিকে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো ও মঈন আলিরা। রিভিউ নিয়ে কুককে থামায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্পিনার রোস্টন চেসের সোজা বল ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটে ছোঁয়াতে পারেননি ইংলিশ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ৪০৭ বলে খেলা তার ২৪৩ রানের ইনিংসটি গড়া ৩৩টি চারে। মুগ্ধ করা, রেকর্ড গড়া ব্যাটিং শৈলী প্রদর্শন করেন সাবেক অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক। তৃতীয় উইকেটে জো রুটের সঙ্গে রেকর্ড ২৪৮ রানের জুটি (ডে-নাইট টেস্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ) গড়ার পর প্রথম দিন ১৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন কুক। দ্বিতীয় দিন সেটা লম্বা করে ডাবল সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন। এটি তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবিতে ২৬৩, ২০১১ সালে বার্মিংহ্যামে ভারতের বিপক্ষে ২৯৪ আর সর্বপ্রথম ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিজবেনে করেন ২৩৫* রান। ইংল্যান্ডের কোন ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডাবল সেঞ্চুরি ঘটনা এটি। কুকেরসমান চারটি করে ডাবল সেঞ্চুরি আছে নেল হাটনের (১৯৩৮-৫৪)। ৭ ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে সবার ওপরে ওয়ালি হ্যামন্ড (১৯২৮-৩৮)। আর ক্রিকেট ইতিহাসে ওপেনার হিসেবে কুকের চেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি আছে মাত্র তিনজনের। সমান ৬টি করে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে শীর্ষে আছেন শ্রীলঙ্কার মারভান আতাপাত্তু ও ভারতের বীরেন্দর শেবাগ। আর ৫টি ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে কুকের ঠিক ওপরে সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা গ্রায়েম স্মিথ। উইন্ডিজের হয়ে ৪ উইকেটে নিয়েছেন চেস। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে পরিষ্কার বোল্ড হয়ে গেলেন শেন ডেরিখ। দুই হাত ছড়িয়ে শূন্যে ছোট্ট একটা লাফ দিলেন ইংলিশ পেসার। সতীর্থরা সবাই এগিয়ে এসে একে একে অভিনন্দন জানালেন ব্রডকে। না, ব্রড পাঁচ উইকেট পাননি কিংবা ম্যাচও শেষ হয়নি। তবে একটা উপলক্ষ তো অবশ্যই ছিল। ডোরিখকে ফিরিয়েই যে ইয়ান বোথামকে ছাড়িয়ে টেস্টে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়ে গেছেন ব্রড। বোথামকে ছাড়িয়ে যেতে এজবাস্টনে দিবারাত্রির টেস্টে ব্রডের প্রয়োজন ছিল ৫ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম এই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ঠিক ৫ উইকেটই নিয়েছেন ৩১ বছর বয়সী পেসার। বোথাম ১০২ টেস্টে তার ৩৮৩ উইকেটের সর্বশেষটি নিয়েছিলেন ২৫ বছর আগে। ডোরিখকে ফিরিয়ে বিফিকে (বোথামের ডাক নাম) ছাড়িয়ে গেলেন ব্রড। ১০৭ টেস্টে ব্রডের এখন ৩৮৪ উইকেট। কাকতালীয়ভাবে দুজনের স্ট্রাইক রেটই সমান, ৫৬.৯! ব্রডের কীর্তির সময় বোথাম কাল এজবাস্টনের প্রেসবক্সেই ছিলেন। হাততালি দিয়ে উত্তরসূরিকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। এক সময় ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিলেন বোথামই। ২০১৫ সালে অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের তখনকার অধিনায়ক দিনেশ রামদিনকে অ্যালিস্টার কুকের ক্যাচ বানিয়ে রেকর্ডটা নিজের করে নেন জেসম অ্যান্ডারসন। এজবাস্টনে ৫ উইকেট নিয়ে ১২৭ টেস্টে অ্যান্ডারসনের উইকেট-সংখ্যা এখন ৪৯২টি। টেস্ট ইতিহাসের ষষ্ঠ বোলার ও তৃতীয় পেসার হিসেবে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে অ্যান্ডারসনের চাই আর ৮ উইকেট। ইংল্যান্ডের বর্তমান পেস আক্রমণের সেরা দুই অস্ত্র অ্যান্ডারসন ও ব্রড। এই দুজনই এখন টেস্টে দেশের সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকার শীর্ষ দুটি স্থানে। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ দুই উইকেটশিকারী একসঙ্গে খেলেছিলেন সেই ১৯৬৩ সালে, ফ্রেড ট্রুম্যান ও ব্রায়ান স্ট্যাথাম। তখন ট্রুম্যান ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। আর স্টাথাম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক। তাদের ৫৪ বছর পর এখন অ্যান্ডারসন ও ব্রড। ‘বোথাম ইংলিশ ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি। তার ইমেজকে কখনোই ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে ভাল লাগছে যে তার শিকার সংখ্য অতিক্রম করতে পেরেছি। এজন্য প্রথমেই আমি আমার বাবাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তার ইচ্ছাতেই আমি এতদুল আসতে পেরেছি। বাবাই আমার সকল প্রেরণার উৎস। সৌভাগ্যবশত আমি বাবার কাছ থেকেই টেস্ট ক্যাপ পেয়েছিলাম। জীবনে ভাল ও খারাপ সময় দুটি থেকেই শিক্ষা নেয়ার মন্ত্রটা তিনিই শিখিয়েছেন।’ অনুভূতি ব্রডের।
×