ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রালজিয়ায় ভুগছেন অনেকেই

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৩ আগস্ট ২০১৭

চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রালজিয়ায় ভুগছেন অনেকেই

নিখিল মানখিন ॥ দেশে চিকুনগুনিয়ার তীব্রতা হ্রাস পাচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রমে এ চিত্র ধরা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাপ্ত রক্তের নমুনা ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পর এ চিত্র বের করা হয়েছে। তবে চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রালজিয়ায় ভুগছেন অনেক মানুষ। সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি ইতোমধ্যে চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ প্রদান করেছেন। এর আগে এ রোগের চিকিৎসার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা ছিল না। আইইডিসিআরর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ডাঃ মুস্তাক হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, শুরু থেকেই চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব মনিটরিং কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। মোট চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা বের করা এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য নয়। দেশে চিকুনগুনিয়ার গতি প্রকৃতি ও প্রাদুর্ভাবের মাত্রা নিরূপণ করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইইডিসিআরর ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় এপ্রিলে ১০ জন, মে মাসে ২৮৫ জন, জুনে ২২৬ জন, জুলাইয়ে ৩৫৭ জন ও আগস্টে ৮২ জন চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়। এতে দেখা যাচ্ছে, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নগামী। তিনি আরও জানান, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের ব্যথা কমাতে চিকুনগুনিয়া রোগ বা রোগ পরবর্তী অস্থিসন্ধিতে ব্যথা আর্থ্রালজিয়া নামে পরিচিতি। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত অনেক রোগীর এ ধরনের ব্যথা-উপসর্গ দেখা দিতে পারে। চিকুনগুনিয়া রোগের নামকরণও মূলত এ ব্যথার ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে। চিকুনগুনিয়া রোগের ব্যথা উপশমে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের একসভা আইইডিসিআরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে দেশের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ সব বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান ডাঃ মুস্তাক হোসেন। এদিকে আইইডিসিআরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়া ও চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রালজিয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজারের বেশি। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ হাজার ৮৮৯ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৮১৭ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ হাজার ১১৬ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩১ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৯১ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪৬৭ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ১৯৭ জন, ডেল্টা হাসপাতালে ২৫৫ জন, আইইডিসিআর এ ২০১৭ জন এবং অন্য বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৫৪৭ জন আর্থ্রালজিয়া রোগী পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির চিকিৎসা পরামর্শ ॥ যাদের মৃদু (অল্প জ্বর, অল্প গিরায় ব্যথা) থেকে মাঝারি (অল্প থেকে বেশি পরিমাণে এককভাবে জ্বর, মাঝারি ধরনের গিরায় ব্যথা বা ফোলা) অসুস্থতা আছে তারা নিজ বাড়িতে চিকিৎসা করতে পারেন। তবে মারাত্মক অসুস্থতার ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। উষ্ণ পরিবেশে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ পরিহার করতে হবে। ঠা-া সেঁক গিরা ব্যথা গিরার আরও ক্ষতি হওয়া কমাতে পারে। তাপ বা অধিক গরম গিরা ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিশ্রমের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আরোগ্য লাভের সময় হালকা ব্যয়াম বা ফিজিওথেরাপি নেয়া যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান এবং ইলেকট্রোলাইট (খনিজ লবণ) পান করতে হবে (আনুমানিক ২৪ ঘণ্টায় ২ লিটার তরল, লবণসহ)। যদি সম্ভব হয় তবে ২৪ ঘণ্টায় যতটুকু প্রস্রাব হয়, তার হিসাব রাখতে হবে এবং তা ২৪ ঘণ্টায় ১ লিটারের বেশি হতে হবে। জ্বর থাকলে এবং যদি কোন ব্যক্তির পূর্ব থেকে লিভার বা কিডনি রোগ না থাকে তবে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ৫০০ মিলিগ্রাম সর্বোচ্চ ২টা ট্যাবলেট দিনে ৪ বার খাওয়া যেতে পারে। নিজ থেকে কোন ওষুধ, যেমন এ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। চুলকানির জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। আর জ্বর যদি ৫ দিনের বেশি হয়, অসহনীয় ব্যথা থাকলে, দেহের উঠা-বসার পার্থক্যের সময় মাথা ঘোরা, হাত-পা ঠান্ড হয়ে গেলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, বমি হলে এবং চামড়ার নিচ হতে বা শরীরের প্রাকৃতিক কোন অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
×