ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরিয়ায় যুদ্ধের কালো মেঘ আপাতত কেটেছে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৩ আগস্ট ২০১৭

কোরিয়ায় যুদ্ধের কালো মেঘ আপাতত কেটেছে

কোরিয়া উপদ্বীপের পরিস্থিতি অতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধ লাগে লাগে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের হুমকি এবং পাল্টা হুমকির কারণে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যেন উত্তর কোরিয়া মার্কিন সামরিক ঘাঁটি গুয়ামে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ অবস্থায় হুমকি দিয়েছিলেন যে আমেরিকার রুদ্ররোষের অনলে ছারখার হয়ে যাবে উত্তর কোরিয়া। রুদ্ররোষের অনলে ছারখার হয়ে যাবে উত্তর কোরিয়া। শেষে প্রেসিডেন্ট কিম জংউন গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় ট্রাম্প তাঁর সুখ্যাতি করে বক্তব্য দেন। কিম অবশ্য বলেন তিনি আমেরিকার আচরণ আরেকটু দেখবেন। ‘হয় ইয়াঙ্কিরা সংঘত হবে, নইলে মিসাইল মেরে দেব। যাই হোক যুদ্ধের দামামা, তর্জন গর্জন আপাতত থেমেছে। তাই বলে যুদ্ধাশঙ্কা নয়। ১৯৬২ সালে কিউবার মিসাইল সঙ্কটের পর থেকে এমন গুরুতর পরিস্থিতি আর দেখা দেয়নি। যাই হোক, দুই পক্ষ সংযত হওয়ায় কোরিয়া উপদ্বীপের উত্তেজনা প্রকাশ্য যুদ্ধের রূপ আপাতত নিতে পারেনি। যুদ্ধ বেধে গেলে ওই অঞ্চলে কল্পনাতীত প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে যেত। সেটা দুই তরফ থেকেই হতো। উত্তর কোরিয়া মার্কিন ঘাঁটিতে বা তার মিত্রদের ওপর আঘাত হানলে যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যাপক পরিসরে আক্রমণ চালাত তাতে কিম সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবীরূপে ঘটত। কিন্তু মার্কিন হামলার জবাব পিয়ংইয়ং যে একেবারে দিতে পারত না তা নয়। তার প্রচলিত অস্ত্র বিশেষ করে আর্টিলারি ও ক্ষেপণাস্ত্র নিকটবর্তী সিউলও সম্ভবত টোকিওতে ব্যাপক সংহার ও ধ্বংস চালাত। এখানেই শেষ নয়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতরে বহন করার মতো ছোট আকারের পরমাণু বোমা পিয়ংইয়ং হয়ত ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত হানতে পারা যায়। আবার লক্ষ্য অর্জনে পিয়ংইয়ংয়ে পরমাণু বোমা হামলার সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও থাকে। তবে একটা দেশকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করতে পারমাণবিক হামলা চালানো কতটা যৌক্তিক তা লাভ-ক্ষতির অতি সাধারণ হিসাব-নিকেশেও ধোপে টেকে না। যুদ্ধের হুঙ্কার শুরু হয়েছিল কিমের ওপর আরও বেশি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগকে কেন্দ্র করে। গত ৫ আগস্ট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে ২৩৭১ নং প্রস্তাব পাস হয় যার লক্ষ্য হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার ৩শ’ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা যা দেশটা মূলত লোহা, সীসা, কয়লা ও সিফুড রফতানি করে আয় করে থাকে তার এক-তৃতীয়াংশ। সেই সঙ্গে ব্যাংক ও বৈদেশিক লেনদেনের মাধ্যমে অর্জিত আয়েরও কিছু অংশ। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালির ভাষায় ‘এক প্রজন্মের মধ্যে এটা হলো যে কোন দেশের ওপর আরোপিত কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা।’ প্রস্তাবটি পাস হয়েছে কারণ চীন ও রাশিয়া তাতে ভেটো দেয়নি। এখানে চীনের ভূমিকাটাই মুখ্য। উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে চীনের সঙ্গে। চীনকেই এই নিষেধাজ্ঞার বড় অংশ বলবত করতে হবে। আর সেটা করলে পিয়ংইয়ংকে বড় ধরনের লেনদেন ঘাটতিতে পড়তে হবে। এর ফলে সেখানে পণ্যসামগ্রীর অগ্নিমূল্য দেখা দেবে, অস্থিরতা সৃষ্টি হবে এবং তার পরিণতিতে কিম সম্ভবত আলোচনার টেবিলে আসবেন। ইতোমধ্যে বসন্তে খরার কারণে উত্তর কোরিয়া শস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর কোরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, ক্ষেপণাস্ত্র বা পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালিয়ে তারা যেন জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন না করেন। চীনের এই সহযোগিতা অবশ্য এমনি এমনি আসেনি। পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু কর্মসূচী স্থগিত রাখার ব্যবস্থা করার বিনিময়ে চীন চায় যে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমেরিকা যেন তার থাড ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয় এবং মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করা হয়। উপরন্তু বেজিং কিছুতেই কিম সরকারের পতন ঘটাতে দেবে না। কেননা সেক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া থেকে চীনে লাখ লাখ উদ্বাস্তুর ঢল নামবে। আর দুই কোরিয়া তখন এক হয়ে গেলে সিডিউলের মিত্র আমেরিকার সৈন্যরা চীনের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াতে পারে যা কোনমতেই চীনের কাম্য নয়। এখন পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার ব্যাপারে কিম ছয় পক্ষীয় আলোচনার টেবিলে ফিরে যান কিনা সেটাই দেখার বিষয়। চলমান ডেস্ক সূত্র ॥ টাইম
×