ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হিজবুল্লাহর হাতে এখন ট্যাঙ্ক ড্রোন মিসাইল

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ আগস্ট ২০১৭

হিজবুল্লাহর হাতে এখন ট্যাঙ্ক ড্রোন মিসাইল

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার বাইরের তিন শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে আছে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর সহায়তা, ইরানের সামরিক সাহায্য এবং হিজবুল্লাহর স্থল ইউনিট। এই হিজবুল্লাহ ৬ বছর আগে সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বেশকিছু সামরিক সাফল্য অর্জন করেছে। তবে তার জন্য চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে। সিরিয়ার রণাঙ্গনে সম্ভবত ১৫ হাজার হিজবুল্লাহ জঙ্গী লড়ছে। তার মধ্যে প্রায় ২ হাজার ইতোমধ্যে মারা গেছে। তথাপি এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লেবাননের মিলিশিয়া ও রাজনৈতিক দলটির রূপান্তরও ঘটে গেছে। এটি এখন নিয়মিত বাহিনীর অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। হিজবুল্লাহর উৎপত্তি ১৯৮০-এর দশকের প্রথমদিকে যখন ইসরাইলী সেনারা দক্ষিণ লেবানন দখল করেছিল। এরা নানা ধরনের তৎপরতায় ইসরাইলীদের ব্যতিব্যস্ত রাখে। লেবাননের গৃহযুদ্ধে এরা গাড়িবোমা, গুপ্ত হত্যাসহ গেরিলা কৌশলগুলো বিকশিত করে। ২০০০ সালে ইসরাইলী বাহিনী দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে গেলে হিজবুল্লাহ বিজয় দাবি করে। ৬ বছর পর আবার ইসরাইলী বাহিনীর সঙ্গে তাদের রক্তাক্ত লড়াইয়ে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু সিরিয়ার সংঘাতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে হিজবুল্লাহ আরও প্রচলিত কৌশল অবলম্বন করেছে এবং বেশ বড় অস্ত্র ভা-ারেরও অধিকারী হয়েছে। ওরা ট্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ব্যবহার করেছে এবং মরুভূমির বুকে, পাহাড়-পর্বতে ও নগরীর ভেতরে লড়েছে। জানা গেছে, এক দশক আগের তুলনায় হিজবুল্লাহর হাতে এখন ১৭ গুণ বেশি রকেট রয়েছে। তাদের অস্ত্রগুলোও আগের চেয়ে আধুনিক ও উন্নত এবং তার মধ্যে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও আছে। হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নসরুল্লাহ বলেন তাদের রকেটগুলো এখন ইসরাইলের যে কোন জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম। এমনকি দক্ষিণের একটি পারমাণবিক চুল্লিতে এবং উত্তরের একটি রাসায়নিক কারখানাতেও। হিজবুল্লাহর অস্ত্রশস্ত্রের প্রধান যোগানদার হলো ইরান। শোনা যাচ্ছে ইরান এখন লেবাননের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা তৈরি করছে। ইরান গোলান মালভূমির সিরীয় অংশে হিজবুল্লাহর ছাড়াও অন্যান্য প্রক্সি বাহিনী গড়ে তুলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলছে। এতে করে এ অঞ্চলে আরেক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে লেবাননে আরেক ইসরাইলী হামলার আশঙ্কা। আর সত্যই যদি তেমন কিছু হয় তাহলে সে যুদ্ধ আগের চেয়েও ভয়াবহ হবে। ইসরাইলের এক মন্ত্রী বলেন, লেবানন ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার বিভাজন রেখা ঝাপসা হয়ে গেছে। তাই হিজবুল্লাহ ইসরাইলের গায়ে আঘাত হানলে গোটা লেবাননকে ছারখার করে মধ্যযুগে পাঠিয়ে দেয়া হবে। কলকারখানা, বিদ্যুত কেন্দ্র ও অন্যান্য অবকাঠামো একেবারে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। অন্যদিকে নসরুল্লাহ বলেছেন যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য তিনি গোটা আরব বিশ্ব থেকে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করবেন। নসরুল্লাহর সেই লক্ষ্য কতদূর সফল হবে তা বলা মুশকিল। কারণ সংগঠনটির একদা যে প্যান-আরব আবেদন ছিল সিরিয়া যুদ্ধে হিজবুল্লাহর ভূমিকায় তা যথেষ্ট ক্ষুণœ হয়েছে। তবে লেবাননে এর শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে এরা নতুন জোট গড়ে তুলেছে। এই সংগঠনটির সদস্যরা শিয়া। লেবাননের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ হলো সুন্নি। সিরিয়া থেকে বিপুল সংখ্যক সুন্নি উদ্বাস্তু লেবাননে চলে আসায় সুন্নিদের শক্তি বাড়ছে। এতে খ্রীস্টানদের মনে যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার চেষ্টা করছে হিজবুল্লাহ। বলা বাহুল্য, কিছুদিন আগে সংগঠনের যোদ্ধারা লেবাননের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের পাহাড়ী এলাকায় আল কায়েদা জঙ্গীদের হটিয়ে দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা পুনর্দখল করেছে হিজবুল্লাহ। দেশটির খ্রীস্টান প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন। মন্ত্রিসভায় হিজবুল্লাহর মিত্রদের যথেষ্ট আধিক্য আছে যারা সিরিয়ার বাশার সরকারের সমর্থক। চলমান ডেস্ক সূত্র ॥ দি ইকোনমিস্ট
×