ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, এখনও লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ আগস্ট ২০১৭

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, এখনও  লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, সুরমা ও কুশিয়ারাসহ দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি আরও কমেছে। ফলে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পদ্মা নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানিও কমছে। তবে অনেক জেলায় এখনও বন্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এদিকে সব নদী থেকে পানি কমা অব্যাহত থাকলেও কিছু কিছু জেলায় এখনও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ। রাজশাহীর তিন উপজেলায় দেড় লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। নাটোরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত জেলার ১২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ত্রাণতৎপরতা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল বলে জানা গেছে। পানিবন্দী থাকায় জয়পুর হাটের মানুষের আহাজারি বাড়ছে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে এখন পর্যন্ত বন্যায় দেশের ৩১ জেলার ১৮৩টি উপজেলার ৪৭টি পৌরসভাসহ ১২০০টি ইউনিয়ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের সর্বশেষ তথ্যে এসব এলাকায় ৬১ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তারা জানায়, সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গত এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১ জনে দাঁড়িয়েছে। নাটোর ॥ নাটোরের সিংড়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এখন পর্যন্ত সিংড়া পৌরসভা এবং ১১টি ইউনিয়নের অন্তত ১২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উপজেলা সদরে খোলা হয়েছে ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র। প্রতিদিনই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। এছাড়া নলডাঙ্গা উপজেলার বারনই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাজশাহী ॥ বাগমারায় বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। নতুন করে আরও একটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফলে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা ও জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চলতি বন্যায় রাজশাহীর বাগমারা, মোহনপুর ও বাঘার চরাঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এসব মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন। সরকারী-বেসরকারী কিছু সংস্থা তাদের সাহায্যে এগিয়ে এলে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। শুধু সরকারী হিসেবেই রাজশাহীর বাগমারা, বাঘা ও মোহনপুর উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৬১১টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সরকারী হিসেবে, বানভাসি মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৪২ হাজার ৬৮৫ জন। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জয়পুরহাট ॥ জয়পুরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি না হলেও জেলার আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল উপজেলার বেশকিছু গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী অবস্থায়। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ সমস্ত মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। উজানের ঢল ও বর্ষণ না থাকায় বন্যার তা-ব থেকে রেহাই পেলেও হাজার হাজার কৃষক তাদের জমির আমন ধান, কলা, বিভিন্ন ধরনের সবজি নষ্ট হওয়ায় আহাজারি শুরু করেছে। কৃষকদের এই ফসল নষ্ট হওয়ার পরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ ধান বীজ ছাড়াও বিভিন্ন বীজ ও খাদ্য এবং ওষুধ বিতরণ শুরু করেছে। কুড়িগ্রাম ॥ নদ-নদীর পানি নেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যাদুর্গত বেশিরভাগ পরিবার ঘর-বাড়িতে ফিরে গেলেও অনেক পরিবার এখনও বাস করছে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কে। বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। সরকারের পাশাপাশি বে-সরকারী ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও জেলার ৯ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য তা অপ্রতুল। এদিকে বন্যার পানি নেমে গেলে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যাদুর্গতরা। পানিতে থাকতে থাকতে তাদের হাতে পায়ে ঘা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গবাদী পশু যে মারা গেছে তার দুর্গন্ধে থাকাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে অনেক এলাকায়। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট বিধ্বস্ত হওয়ায় চলাচলে ভোগান্তি বেড়েছে বন্যা দুর্গতদের। এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, কুমিল্লা, শেরপুর নাটোর ও ঢাকা জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলার ৮ হাজার ৭৪৬টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপদ্রুত জেলাগুলোতে ৪৫ হাজার ২৬৩টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯ হাজার ৩২৮টি হাঁস-মুরগি মারা গেছে। ৩ হাজার ১৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৪ হাজার ৮৩৫ কি.মি. রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। ২৬৮টি সেতু ও কালভার্টও ধসে গেছে।
×