ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যানজট নিরসনে‘চলন্ত রাস্তা’

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৩ আগস্ট ২০১৭

যানজট নিরসনে‘চলন্ত রাস্তা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সড়ক-মহাসড়কে নতুন এক পরিবহন পদ্ধতির ধারণা নিয়ে এসেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আবু সাইয়ীদ। নতুন এ ধারণার নাম ‘চলন্ত রাস্তা’। তিনি বলছেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে নতুন এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে যানজট নিরসনে তা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, যা নাগরিক জীবনকে করবে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। পরিবেশও রাখবে শতভাগ দূষণমুক্ত। মঙ্গলবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যানজট নিরসনে নতুন এ ধারণাপত্র তুলে ধরেন তিনি। আবু সাইয়ীদ বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট। এতে প্রতিদিন শুধুমাত্র বারো লাখ কর্মঘণ্টাই নষ্ট হচ্ছে না, বছরে অপচয় হচ্ছে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। সড়ক-মহাসড়কে নতুন এক পরিবহন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এ সঙ্কট দূর করা সম্ভব। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন খরচ মেট্রোরেল বা এলিভেটরের চেয়ে অনেক কম। রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি খরচও অনেক কম। এছাড়া পরিবেশদূষণ কমাবে। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন পরবর্তীতে মোটরযানের ব্যবহার অনেক কমে আসবে। সার্বিক বিবেচনায় যাত্রী পরিবহন খাতের সব ব্যয় পঞ্চাশ ভাগের নিচে নেমে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উড়াল সেতু ও উড়াল সড়ক অত্যন্ত ব্যয়বহুল। উন্নত কারিগরি ধারণা। যানজট সমস্যা নিরসনে উড়াল সেতু ও সড়ক নির্মাণ শেষ কথা নয়। প্রয়োজন হয় উন্নত যানবাহনের। সব মিলিয়ে বিশাল অর্থযজ্ঞ। চলন্ত রাস্তা নির্মাণে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এর একটি হলো ধীরগতিসম্পন্ন রাস্তা, অপরটি দ্রুতগতিসম্পন্ন চলন্ত রাস্তা। ধীরগতির সড়কে একই দিক দিয়ে বিভিন্ন গতির একের অধিক রাস্তা বিরতিহীনভাবে চলমান থাকবে। প্রথম রাস্তায় ঘণ্টায় গতি থাকবে তিন কিলোমিটার। দ্বিতীয় সড়কে ঘণ্টায় গতি থাকবে ছয় কিলোমিটার। তৃতীয় রাস্তায় ঘণ্টায় গতি থাকবে নয় কিলোমটার। চতুর্থ রাস্তার গতি থাকবে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত। দ্রুতগতিসম্পন্ন চলন্ত রাস্তায় একই দিক দিয়ে একটি রাস্তা যা নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থামবে। ঢাকা শহরে দুই থেকে পাঁচ মিনিট পরপর ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের জন্য থামবে। এ রাস্তার গতি থাকবে ঘণ্টায় ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত। আর হাইওয়েতে গতি থাকবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটারের বেশি। তবে সড়কের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের ওপর নির্ভর করে ওই রাস্তা কোন্ পদ্ধতির আওতায় আসবে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাস্তার মাঝামাঝি বরাবর উভয় দিকে চলমান দুই বা দুইয়ের অধিক চলমান রাস্তা স্থাপিত হবে। বিভিন্ন ক্রসিংয়ে ভিন্ন দিক থেকে আসা চলন্ত রাস্তা একে অপরকে উড়ন্ত পদ্ধতিতে ক্রস করতে পারবে। উড়ন্ত সেতু বা রাস্তার মতো এটি ব্যয়বহুল হবে না। নিকট দূরত্বে কোন কোন ক্ষেত্রে রাস্তার দুই পাশে ফুটপাথ বরাবর চলন্ত সড়কও স্থাপন করা যেতে পারে। ট্রেন, কনভয়, বেল্টের কারিগরি ধারণার ভিত্তিতে চলন্ত রাস্তা নির্মিত হবে এবং চলমান থাকবে। চলন্ত রাস্তা নির্মাণ পদ্ধতিতে রাস্তার ছাদ বা মূল কাঠামো স্থির থাকবে। একটি শক্ত কাঠামোর ভেতরে ছোট চাকাসহ নিচের পাটাতন বসার আসন এবং পাশের প্লাস্টিকের হাল্কা দেয়াল চলমান থাকবে। ট্রেন বা বিভিন্ন মোটরযানে ভারি কাঠামো গতিশীল রাখতেই অনেক শক্তি ক্ষয় হয়। চলন্ত রাস্তায় ছাদ বা মূল কাঠামো, এমনকি ফ্যানও স্থির থাকার কারণে চলন্ত রাস্তা পরিচালনায় জ্বালানি বা বিদ্যুত খরচ অনেক কম হবে। যে পরিমাণ যাত্রী চলন্ত রাস্তা বহন করবে সে পরিমাণ যাত্রী মোটরযানে বহন করতে যে জ্বালানি খরচ হয়, তারচেয়ে অনেক কম জ্বালানি খরচ হবে চলন্ত রাস্তায়। এছাড়া একজন যাত্রীর যাত্রা শুরু থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে কত মিনিট লাগবে তা নির্ধারিত থাকবে। প্রতিটি রুটে যাত্রাবিরতি এবং স্টপেজের সময় নির্ধারিত থাকায় সহজেই শুরু থেকে গন্তব্যের সময় নির্ধারণ করা যাবে। ধরা যাক কোন চলন্ত রাস্তার গতি ৩৫ কিমি/ঘণ্টা, যাত্রী ওঠা-নামার জন্য প্রতিটি স্টপেজে ১০ সেকেন্ড দাঁড়াবে, স্টপেজের পর প্রথম ৫ সেকেন্ডে গতি ৩ কিমি/ঘণ্টায় উঠবে, পরবর্তী ৫ সেকেন্ডে ৭ কিমি/ঘণ্টায় উঠবে এবং পরবর্তীতে দ্রুত ৩৫ কিমি/ঘণ্টায় উঠবে- এ থেকে সহজেই যাত্রার শুরু থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছার সময় নির্ধারণ করা যাবে। অর্থাৎ কোন যাত্রী গাবতলী থেকে উঠলে কখন আসাদগেটে পৌঁছবে অথবা নিউমার্কেট থেকে উঠলে কখন কলেজগেট পৌঁছবে তা নির্ধারিত থাকবে। প্রতিটি রাস্তায় একই সঙ্গে চলন্ত রাস্তার উভয় পাশে একাধিক লেনের স্থির রাস্তা থাকবে। এই রাস্তায় বিভিন্ন মোটরযান চলাচল করবে। রাস্তার প্রস্থের ওপর নির্ভর করবে একটি রাস্তায় কয়টি চলন্ত রাস্তা এবং উভয় পাশে কয় লেনের স্থির রাস্তা থাকবে। তিনি দাবি করেন, চলন্ত রাস্তা সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন পদ্ধতিতে এক নতুন ধারণা। পৃথিবীর যে কোন সড়ক-মহাসড়কে এ প্রকল্প বাস্তবায়নযোগ্য। তিনি বলেন, চলন্ত রাস্তা পরিবহন পদ্ধতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে এ আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি অর্থনীতিতেও থাকবে এর প্রভাব।
×