ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফায়ারিং স্কোয়াড

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২৩ আগস্ট ২০১৭

ফায়ারিং স্কোয়াড

সতেরো বছর পর হত্যা চেষ্টার মামলার রায় হয়েছে অবশেষে। কিন্তু এই ঘৃণ্য তৎপরতার নেপথ্যে কারা, কারা ইন্ধনদাতা, কী তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সেসব অজ্ঞাতই রয়ে গেছে। হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ‘রাঘববোয়ালরা চিহ্নিত হয়নি। তবু যে রায় হয়েছে, তাতে দেশবাসী স্বস্তি পেয়েছে বলা যায়। এর সঙ্গে রাজনীতির যে একটা সংযোগ রয়েছে তাও অবলীলায় বলা যায়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাপরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের উত্থান ঘটায় সামরিক জান্তা শাসক। জান্তার সৃষ্ট দলটির সঙ্গে পরবর্তীকালে এই স্বাধীনতাবিরোধী ও পাকিস্তানীমনাদের ঘনিষ্ঠতার মাত্রা এতো বৃদ্ধি পায় যে, তারা আজও প্রায় একদেহে লীন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলেও প্রবাসে থাকা দুই কন্যা বেঁচে যায়। দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকার পর তারা দেশে ফিরে এলেও নিরাপত্তাহীনতা তাড়া করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বিএনপি-জামায়াত জোট শক্তি মেনে নিতে পারছে না বলেই তাকে হত্যার জন্য এ পর্যন্ত কুড়ি দফা চেষ্টা চালানো হয়। এমনকি বিএনপি-জামায়াত নেত্রীও মাসখানেক আগে জোর গলায় বলেছেন, শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে। কিন্তু কেন সরে যেতে হবে, তার ব্যাখ্যা না দিলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিষয়ে জান্তা শাসক যে ভূমিকা রেখেছেন, তারই ধারাবাহিকতায় বেঁচে থাকা কন্যাকেও রক্ষা করা হবে না। তাই বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে শেখ হাসিনাকে হত্যার অনেক তৎপরতা চালানো হয়েছে। সর্বশেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাও চালানো হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যা মানেই মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করে আবার পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নেয়া। পঁচাত্তর পরবর্তী যে অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, তাতে আবার ফিরে যাওয়ার জন্যই সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তো বলেছেনই ‘শেখ হাসিনাকে ঘিরে একটি বুলেট ঘুরছে।’ বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু যেমন একাত্ম, তেমনি দেশের জনগণ ও শেখ হাসিনা আজ একসূত্রে গাঁথা। সতেরো বছর আগে ২০০০ সালের বিশ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের কাছে শক্তিশালী ছিয়াত্তর কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। সেনাবাহিনীর একটি দল তা উদ্ধার করে। তেইশ জুলাই ওই সমাবেশস্থলের পাশে হেলিপ্যাডের কাছ থেকে আশি কেজি ওজনের আরেকটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছিল। দূর নিয়ন্ত্রিত ছিল ওই বোমাগুলো। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছিলেন যে ওই শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এতে শত শত মানুষ হতাহত হতো। এ ঘটনায় জড়িত বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট জঙ্গী দল হরকত-উল-জিহাদ প্রধান মুফতি হান্নানসহ চারজন ঘটনার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করে। মুফতি হান্নান পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ শেষে আফগান সীমান্তে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ। দেশে সে জঙ্গীবাহিনী হরকত-উল-জিহাদ তথা হুজি গড়ে তোলে জামায়াত-বিএনপি সরকারের সহায়তায়। গোপালগঞ্জে তার একটি সাবানের কারখানা রয়েছে। সেখানে বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণাদি মজুদ এবং বোমা তৈরি করা হতো। এই মুফতি হান্নান ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালায়। ওই মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘদিন ধরে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি হয়। আদালত দশ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় দিয়েছে। যাতে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে গুলি করে দশ আসামির দ- কার্যকর করা হোক। ২৪ আসামির মধ্যে মুফতিকে অব্যাহতি দেয়ার পর বাকি তেরোজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও জরিমানা করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও গুরুতর অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার অভিযোগ আনা হয়েছিল। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদ-। ঘটনায় দুটি মামলার একটি হত্যা প্রচেষ্টা ও অপরটি বিস্ফোরক মজুদ রাখা। দ্বিতীয়টি হান্নান বাদে আসামি ছিলেন ১৩জন। তাদের মধ্যে নয়জনকে সশ্রম কারাদ- ও নয়জনকে খালাস দেয়া হয়। সতেরো বছর আগে সংঘটিত অপরাধের ঘটনা দ্রুত বিচার আদালতেও দ্রুত যে হয়নি, তা স্পষ্ট। দেশবাসী ধীর গতিতে মামলা পরিচালনা হোক তা চায় না। তারা চায় একটি অপরাধের মামলার দ্রুত রায় হোক। বিচার ব্যবস্থাকে উন্নত করা তাই জরুরী।
×