ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে চাপ বাড়ানোই লক্ষ্য

যৌথ সামরিক মহড়া শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২২ আগস্ট ২০১৭

যৌথ সামরিক মহড়া শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ২০০২ সালে ইরাকে হামলার ভিত্তি তৈরি করে। পরের বছরই তারা দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। বৈরী দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা নিয়ে ওয়াশিটংটনে উচ্চ মহলেই অনেক বিতর্ক ছিল। কারণ আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ করার মধ্যে যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক যুদ্ধে যান। ওয়াশিংটন পোস্ট। পূর্বসূরিদের মতো বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও চাপ বাড়িয়ে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণূ কর্মসূচী থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। ট্রাম্প এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার উভয়ই উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে শেষ বিকল্প হিসেবে যুদ্ধকে রেখেছেন। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেই তবে যুদ্ধের কথা ভাবা যাবে। ম্যাকমাস্টার একে ‘প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য হামলার ছক পেন্টাগন এক দশকের বেশি আগে ঠিক করে রেখেছে। ট্রাম্পের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টরা এটাও বলতেন যে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে সবগুলো বিকল্পই খোলা আছে। তারপরও ওয়াশিংটন এ পর্যন্ত কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ আক্রান্ত হলে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল আক্রমণ করে করে বসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আড়াই কোটি জন অধ্যুষিত শহরের বাসিন্দার ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। উত্তর কোরিয়ার ওপর বাড়ানোর উদ্দেশ্য সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক মহড়া শুরু করেছে। মহড়ায় ১৭ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য অংশ নিচ্ছে। পিয়ংইয়ং ঘোষণা দিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী যে কোন সময় যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার লক্ষ্য বানাতে পারে। আর তখন তাদের এ নির্মম হামলা গুয়াম, হাওয়াই এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রও এড়াতে পারবে না। উত্তর কোরিয়ার গত মাসে দুটি আইসিবিএম পরীক্ষার পর মার্কিন প্রস্তাবে দেশটির ওপর ওপর কঠোর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ। ক্ষুব্ধ উত্তর কোরিয়া চলতি মাসে প্রশান্ত মহাসাগরীয় মার্কিন দ্বীপ গুয়ামে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। গত সপ্তাহে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরিকল্পনা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘোষণা দেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। উত্তর কোরিয়ার সরকারী পত্রিকা রডং সিনমুন জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পরমাণু যুদ্ধের মহড়া ও বেপরোয়া আচরণ পরিস্থিতিকে অনিয়ন্ত্রিত পরমাণু যুদ্ধের মুখে ঠেলে দেবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস উভয়ই গত সপ্তাহে যথাসময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়া শুরুর কথা জানিয়েছিলেন। দুই দেশের বার্ষিক এ সামরিক মহড়াকে আগ্রাসনের অনুশীলন হিসেবেই দেখে আসছে উত্তর কোরিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরই এ মহড়া পুরোপুরি প্রতিরক্ষামূলক বলে দাবি করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হচ্ছে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে গত সপ্তাহে ম্যাকমাস্টার বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট, উত্তর কোরিয়াকে আমরা আমাদের দেশের প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে দেব না।’ ট্রাম্প যতই বলুন যে শেষ বিকল্প হিসেবে তারা যুদ্ধকে রেখেছেন, কিন্তু তিনি এখনও পর্যন্ত কূটনৈতিক তৎপরতার ওপরই জোর দিচ্ছেন। সমর ইতিহাসবিদ ম্যাকমাস্টার বলছেন, শীতল যুদ্ধ যুগে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনের বিরুদ্ধে যে নীতি অবলম্বন করে যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার বেলায় ওই নীতি একই রকম ফলপ্রসূ হবে না। ম্যাকমাস্টার মনে করেন, উত্তর কোরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখা প্রয়োজন। যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই সিউলের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
×