তানভীর সোহেল ॥ ‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?’ এই সেøাগানে দেশের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ডুটা) নিজেদের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পরিবার’ নামে বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ইতোমধ্যে দুর্গতদের সহযোগিতার জন্য প্রায় ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। বসে নেই বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী যে যেভাবে পারছে বন্যার্তদের জন্য বিভিন্ন হল ও[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ বিভাগ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের যে কোন দুর্যোগ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসেন। পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে যেভাবে পারছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
ঢাবি শিক্ষকদের একদিনের বেতন দান ॥ বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য একদিনের বেতন দান করবে ঢাবি শিক্ষকবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ জনকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দেশের যে কোন সমস্যায় আমরা শিক্ষদের কাছ থেকে একদিনে সমপরিমাণ অর্থ দান করি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বন্যা কবলিত মানুষকে সহযোগিতার জন্য একদিনে সমপরিমাণ অর্থদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বন্যাকবলিত হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোয় গিয়ে এই ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেবে। অধ্যাপক রহমত উল্লাহর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সমিতির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যার্তদের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর বাইরে যদি কেউ অতিরিক্ত সাহায্য প্রদানে ইচ্ছুক হন, আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করব। এছাড়া কোন সম্মানিত সদস্য উল্লিখিত অনুদান প্রদানে অনিচ্ছুক হলে তা ‘হিসাব পরিচালক’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদনের মাধ্যমে আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
বন্যার্তদের পাশে ঢাবি পরিবার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল, বিভাগ থেকে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য টাকা তুলেছেন। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত অর্থ, বস্ত্র এবং খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ এবং আগামীকাল বুধবার বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা। সংগঠনটি বন্যার্তদের জন্য ১২ কেজির একটি প্যাকেজ দিবে বলে জানান সংগঠনটির এ্যাডমিন প্যানেলের মোতাকাব্বির খান প্রবাস। তিনি জানান, এই প্যাকেজে থাকছে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, ২ কেজি চিড়া, ১ কেজি গুড় এবং ওষুধপত্র।
সাহায্যের জন্য কাজ করছে টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো ॥ বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ শুরু করেছে বিভিন্ন সংগঠন। দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার্তদের সহায়তা করার জন্য তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বন্যায় ভেসে যাওয়া সম্বলহারা মানুষদের জন্য অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করছে সংগঠনগুলোর সদস্যরা। টিএসসির যেসব সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বন্যার্তদের জন্য কাজ করছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম এ্যাকশন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যারিয়ার ক্লাব, প্রভাতফেরী, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি আইটি সোসাইটি, সেøাগান একাত্তর, ঢাকা ইউনিভার্সিটি কুইজ সোসাইট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি কালচারাল সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি লিটারেচার সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি নাট্য সংসদসহ প্রায় প্রত্যেকটি সংগঠন। ঢাবি রিসার্চ সোসাইটির সভাপতি সাইফুল্লাহ সাদেক জনকণ্ঠকে বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। নিজেদের মানবিক দায়িত্ব থেকেই আমরা কাজ করছি। কারন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাস আমাদের তাই শিক্ষা দেয়। আর দেশের জন্য এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্বও বটে।
সোচ্চার সামাজিক মাধ্যমও ॥ বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সোচ্চার সামাজিক মাধ্যমও। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনেকেই স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। বন্যার্তদের দুর্দশার ছবি তুলে ধরছেন কেউ কেউ। সরাসরি যারা দুর্গত মানুষের হাতে চাল-ডাল, স্যালাইন-ওষুধ পৌঁছাতে পারছে না তাদের জন্য ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে প্ল্যাটফর্ম গড়া হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং এবং বিকাশের মতো ডিজিটাল লেনদেন মাধ্যমে দেশে ও দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীদের কাছ থেকেও সহায়তার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের যে কোন সঙ্কটে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জাতির পাশে ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বন্যাকবলিত মানুষের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। এটি বিশ^বিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই এই কাজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আরও বেশি এগিয়ে আসা প্রয়োজন।