ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুব হাসান

জনপ্রিয় এ্যাপ সারাহাহ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ আগস্ট ২০১৭

জনপ্রিয় এ্যাপ সারাহাহ

এমন অনেক কথা থাকে যা ইচ্ছে হলেও প্রকাশ করা যায় না। সেটা হতে পারে কোন ভাল লাগার কথা বা রাগ, ক্ষোভ, অভিমানের কথা। কিন্তু যত কিছুই হোক বলা যায় না অনেক কিছু। পরিচয় গোপন করে কথা বলা গেলে মন্দ হয় নাÑ ঠিক তেমনি একটি এ্যাপ ‘সারাহাহ’। সারাহাহ নিয়ে এখন চলছে মাতামাতি। যারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই ‘সারাহাহ’ থেকে পোস্ট করা বার্তা নিউজফিডে খেয়াল করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রায়ই কোন না কোন এ্যাপ আলোচনায় আসে। এর আগে ফেসএ্যাপ, প্রিজমা নামের এ্যাপ্লিকেশনগুলো নিয়েও মাতামাতি হয়েছিল। এখন আলোচনা হচ্ছে সারাহাহ নিয়ে। এ্যাপল এ্যাপ স্টোরে শীর্ষে উঠে এসেছে সারাহাহ ম্যাসেজিং এ্যাপটি। এ্যাপটি কিছুদিন ধরে তরুণ প্রজন্মের কাছে হঠাৎ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখে অন্য ব্যক্তিকে ম্যাসেজ পাঠানো যায়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই অল্প বয়সী ইংরেজী ভাষী ব্যবহারকারীদের কাছে এ্যাপটি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আরবী শব্দ সারাহাহ, অর্থ সৎ বা অকপটতা। এটি নাম-পরিচয় গোপন করে বার্তা পাঠানোর এ্যাপ। যখন কোন ব্যবহারকারী এ্যাপটিতে নিবন্ধন করেন, তারা বন্ধুদের লিংক পাঠাতে বা অনলাইনে তা পোস্ট করতে পারেন। ওই লিংক ব্যবহার করে যে-কেউ গোপন বার্তা পাঠাতে পারেন। প্রেরকের পরিচয় জানার কোন সুযোগ প্রাপকের কাছে থাকবে না। প্রাপক সরাসরি এ্যাপের মাধ্যমে কোন জবাব দিতে পারবেন না। এ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া বার্তাটির উত্তর দিতে হলে অন্য কোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তাটি শেয়ার করে তারপর তাকে উত্তরটি দিতে হবে। এ্যাপটি তৈরি করেছেন সৌদি আরবের তরুণ ডেভেলপার জায়ান আল-আবিদিন তৌফিক। শুরুতে তিনি ওয়েবসাইটটি হিসেবেই এটি তৈরি করেন। যা শুধু কর্পোরেট কোম্পানিগুলোতেই ব্যবহার করা যেত। কিন্তু গত বছরের শেষ ভাগে ওয়েবসাইটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তৌফিক। শুরুতে তার ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭০। কিন্তু অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তা কয়েকটি আরব দেশে উল্কার গতিতে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু“করে। সবংংধমব-ংধৎধযধয-ঃবপযংযড়যড়ৎ লেবানন ও তিউনিশিয়া জয় করার পর চলতি বছরের শুরুতে ওয়েবসাইটটি মিসরে পৌঁছায়। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এর রেজিস্ট্রার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই তৌফিক ওয়েবসাইটির একটি এ্যাপ ভার্সন চালু করেন। ৫ জুন এ্যাপ স্টোরে উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রায় দেড় মাসের মাথায় ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট ও ইনস্টাগ্রামকে পেছনে ফেলে দেয় সারাহাহ। এ্যাপটি গুগল প্লেস্টোরের র‌্যাঙ্কিংয়েও ৫ নম্বরে চলে আসে। নিজের পরিচয় গোপন রেখে চ্যাট করার বেশ কয়েকটি এ্যাপ যেমন ইক ইয়াক, সিক্রেট, হুইসপার ও আস্ক এফএম আগে থেকেই প্লেস্টোরে রয়েছে। কিন্তু কোনটাই সারাহাহর মতো আন্তর্জাতিক বাজারে সুবিধা করতে পারেনি। আরব ছাড়িয়ে এখন অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ব্যবহারকারীরাও ডুবে আছেন সারাহাহর নেশায়। যদিও এই এ্যাপটি প্রথমে ডেভেলপ করা হয়েছিল কর্পোরেট সহকর্মী নিকট হতে গঠনমূলক যৌক্তিক মন্তব্য পাওয়ার জন্য, কিন্তু সবই সময়ই প্রযুক্তির ব্যবহারে ভাল মন্দ দুটো দিক রয়েছে ও থাকবেই, ঠিক মুদ্রার এপিট ওপিটের ন্যায় এই এ্যাপের বদৌলতে বাড়ছে অনলাইন বুলিং, হেট স্পিচ এবং সঙ্গে রেসিজমের শিকার হচ্ছে অনেক তরুণ তরুণীরাই। নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, সারা বিশ্বে ১৪ থেকে ২৯ বছরের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরাই এটি ব্যবহার করছেন। ফরচুন সাময়িকী জানাচ্ছে, পশ্চিমা দুনিয়াতে অনেক কিশোর সাইবার বুলিংয়ের টুল হিসেবে সারাহাহকে ব্যবহার করছে। ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, তরুণদের মধ্যেই সারাহাহ নিয়ে বেশি মাতামাতি। গুগল প্লেস্টোরের তথ্য থেকে দেখা যায়, চালু হওয়ার এক মাসের মধ্যে এ্যাপটি প্রায় এক কোটিবার নামানো হয়েছে। যদিও এ্যাপটির রেটিং ৫ এর মধ্যে ২.৯। রেটিং কম হলে কী হবে, ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সারাহাহতে সারা দিতে।
×