ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলিফের ডিজিটাল মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ আগস্ট ২০১৭

আলিফের ডিজিটাল মানুষ

মোঃ খোন্দকার আলিফ, স্বাপ্নিক তরুণটির পরিচয় তিনি এবারের ৮ম সাউথ এশিয়ান এমবিলিয়ন্থ এ্যাওয়ার্ডে নিজেদের ক্যাটাগড়িতে রানার্সআপ এবং স্পেশাল মেনশন দুটো ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া ‘ডিজিটাল মানুষ’ এ্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা। আলিফ পড়ছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৩য় বর্ষে, আলিফের এ্যাপসটির মাধ্যমে কাজের সন্ধান পাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। আলিফের বিশেষ সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে ‘ডিজিটাল মানুষ’-এর গল্প, আলিফের ব্যক্তিগত জীবন আর তার দলের স্বপ্ন নিয়ে। জানাচ্ছেন -বেনজির আবরার ডিপ্রজন্ম-প্রথমেই অভিনন্দন আলিফ। আলিফ- আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। ভারত যাওয়ার আগে যখন ডিপ্রজন্ম পাতায় আমাদের টিমের মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে লিখলেন, আমাদের জন্য বিষয়টি খুব কাজে এসেছে। দেশের অসংখ্য মানুষ জেনেছিল, জনকণ্ঠ পরিবারের পপ্রতি অংসখ্য ধন্যবাদ ‘ডিজিটাল মানুষ’ এ্যাপটির পাশে থাকায়, বিমানে ওঠার আগেও কথা হয়েছে আপনার সঙ্গে, বলেছিলাম দোয়া করবেন পুরস্কার নিয়ে যাতে ফিরতে পারি। ডিপ্রজন্ম- ‘ডিজিটাল মানুষ’ সম্পর্কে বলুনÑ আলিফ-বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় বাবার মুখে শোনা বাস্তব আত্মত্যাগের গল্পগুলো থেকে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন কাজ করত। সেই স্বপ্ন থেকে আমাদের ডিজিটাল মানুষ এ্যাপ গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল মানুষ’ এ্যাপটি প্রকাশ হয় ১ মে শ্রমিক দিবসে। থেমে থাকেনি মানুষের প্রয়োজনীয় এ্যাপসটির জয়যাত্রা। একসময় আমাদের বাসার একটি রুমে নিয়মিত গেটলক হয়ে যেত, হলে খুলতে তালামিস্ত্রী লাগতো। প্রতিমাসে একবার লাগতোই তালা ভাঙ্গানো, তাদের যা চাহিদা তা দিতে হতোই। একসময় আমার মনে হলো তালাওয়ালা মামার নাম্বার রেখে দেই, আশেপাশের মানুষজনের কাজে লাগতে পারে। এভাবেই আসলে শুরু, বাবা মারা যাওয়ার পর তিনভাই মিলে চিন্তা করছিলাম কি করা যায় পড়াশোনা, টিউশনির পাশাপাশি। এভাবেই আমার মাথায় আসে এ্যাপসটির চিন্তা-ভাবনা। ২০১৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় ডিজিটাল মানুষসহ ২৯৪টি উদ্যোক্তা-দল অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে স্মার্ট স্যাটেলমেন্টস ও আরবানাইজেশন ক্যাটাগরিতে রানার্সআপ হয়েছে ডিজিটাল মানুষ। গত ৪ মে ভারতের দিল্লীতে পুরষ্কার নিয়েছি আমরা। এবার আমাদের এ্যাপস সম্পর্কে জানাই ‘আমাদের ঘরে টুকিটাকি নানা ছোট সমস্যা হয়। যেমন বৈদ্যুতিক, তালা, গ্যাস, রং, গাড়ির মিস্ত্রি থেকে শুরু করে চর্মকার, স্যানিটারি সেবাদাতা, ইন্টারনেট সেবাদাতা, লন্ড্রি, সংবাদপত্রের হকার, ডেকোরেটর, তাঁতি, বাসা বদলের জন্য শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে স্মার্টফোন এ্যাপি কেশন ‘ডিজিটাল মানুষ’-এর মাধ্যমে। গুগল এ্যাপ স্টোর থেকে নামিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় মিস্ত্রির তথ্য লিখলেই পেয়ে যাবেন ফোন নম্বর। শুধু ফোন নম্বরই নয়, থাকবে তার পুরো ডাটা।’ এ্যাপটিতে মোট ২২টি বিভাগ আছে। ঢাকা শহরের ৮৪টি এলাকার কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যাবে। আপি যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকার ‘লোকেশন’ হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। এরপর এ্যাপে চলে আসবে নির্দিষ্ট কাজের শ্রমজীবীদের তালিকা। সেখানে তাদের নাম, পরিচয়, তথ্য ওম ফোন নম্বর পাবেন। ফোন করতে চাইলে বোতামে চাপ দিলেই তার কাছে ফোনকল চলে যাবে। আপনি তার সঙ্গে কথা বলে তাকে তিনটি বিষয় সম্পর্কে উভয়পক্ষ নিশ্চিত হয়ে নেবেন। প্রথমত আপনার সমস্যাটি সম্পূর্ণ তাকে বলবেন। তারপর এর জন্য কত পারিশ্রমিক দিতে হবে তা নিশ্চিত করবেন। সব শেষে আপনার বাসার ঠিকানাটি ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলবেন। এরপর আপনার বাসায় এসে তিনি কাজটি করে দিয়ে যাবেন। এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে অন্যান্য জনকল্যানমূলক এ্যাপ থেকে আয় হয়, আমাদেরটা পুরোটাই সমাজসেবী এবং অমুনাভোগী। আমরা মাধ্যম হিসেবে শ্রমজীবিদের কাজের খোঁজ দেই। ডিপ্রজন্ম-বলছিলেন তিনভাই মিলে এ্যাপটি তৈরি করেছেন, বাকিদের সম্পর্কে বলুন - আলিফ-আমার ছোট ভাই খন্দকার কাফি আনান এই ডিজিটাল মানুষ এ্যাপটি নির্মাণের মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে এবং বড় ভাই খন্দকার ওলি উল আজম এই অ্যাপকে আরও উন্নত করতে বিগত ১ বছর ৩ মাস ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। খন্দকার কাফি আনান এখন ঢাকার গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ঢাকা জেলায়ে ১ম হয়েছিল। খন্দকার ওলি উল আজম অযংধহঁষষধয টহরাবৎংরঃু ঙভ ঝপরবহপব অহফ ঞবপযহড়ষড়মুতে ইইই বিষয়ে ৩য় বর্ষে অধ্যয়ন করিতিছে। খন্দকার ওলি উল আজমের ধারণা ডিজিটাল মানুষ এ্যাপ একদিন বাংলাদেশের দরিদ্রতার হারকে কমিয়ে আনবে বলে আশা করেন। এ্যাপ নির্মাণে সহযোগিতা শুরু করে আলিফের স্কুল বন্ধু শাজিদ হাসান সজিব। এখন সজিব টহরঃবফ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ টহরাবৎংরঃুতে ইইই বিষয়ে ১ম বর্ষে অধ্যয়ন করিতিছে। নাজমুল হাসান আকাশ ইজঅঈ টহরাবৎংরঃুতে ইটইতে ১ম বর্ষে অধ্যয়ন করছে ও মস্তাহিদ আহমেদ টহরঃবফ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ টহরাবৎংরঃুতে কম্পিউটার সায়েন্সে ১ম বর্ষে অধ্যয়ন করছে এবং মাহিন মুর্তজা অনিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঊজ ২য় বর্ষে অধ্যয়ন করছে। ডিপ্রজন্ম - পুরস্কারপ্রাপ্তির পর অনুভূতি জানান- আলিফ-উরমরঃধষ গধহঁংয অঢ়ঢ়টি উদ্ভাবনের পর ১১ মে, ২০১৭ তারিখে ওহঃবৎ টহরাবৎংরঃু ঝড়ভঃধিৎব ঈড়সঢ়বঃরঃরড়হ-এ প্রথম স্থান অর্জন করেছে। টহরাবৎংরঃু ড়ভ অংরধ-চধপরভরপ-এর চেয়ারম্যান কাইয়্যুম রেজা চৌধুরীর হাতে ঞবধস উরমরঃধষ গধহঁংয পুরস্কার গ্রহণ করে। পুরস্কার-প্রাপ্তির পর উরমরঃধষ গধহঁংয-এর আমরা বসে থাকেনি। তারা সরেজমিন বিস্তার লাভের পাশাপাশি উরমরঃধষ গধহঁংয অঢ়ঢ়টি সংস্করণে নিরলস কাজ করে গেছে। ডিজিটাল মানুষ সইরষষরড়হঃয ঝড়ঁঃয অংরধ অধিৎফ ২০১৭ অর্জন করেছে। ৪ আগস্ট ২০১৭ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের অংশগ্রহণে ডড়ৎষফ ঝঁসসরঃ অধিৎফ (ডঝঅ) এবং উরমরঃধষ ঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ ঋড়ঁহফধঃরড়হ কর্তৃক আয়োজিত সইরষষরড়হঃয ঝড়ঁঃয অংরধ অধিৎফ ২০১৭তে তারা এ সম্মান অর্জন করে। উরমরঃধষ গধহঁংয এ্যাপের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করি আমরা। ডিপ্রজন্ম-বর্তমানে এ্যাপটির সেবা কত সংখ্যক মানুষ নিচ্ছেন? আলিফ-বর্তমানে বিশ হাজারের অধিক মানুষ এ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন। আমার বিশ্বাস সঠিক প্রচারণা পেলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে, আর আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা কখনও ফেসবুক বুষ্টিং দেব না। কারণ সেখানে আমাদের দেশের অর্থ দেশের বাইরে চলে যায়, যারা এ্যাপটি ব্যবহারে সুবিধা পাচ্ছেন তারা তাদের পরিচিতদের জানালে এটির লাইক এবং ডাউনলোড বাড়লেই আমি খুশি। ডিপ্রজন্ম-বলছিলেন সম্পূর্ণ ফ্রি এই এ্যাপটির সুবিধাগুলো। ব্যাখি করুন- আলিফ-বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় বাবার মুখে শোনা বাস্তব আত্মত্যাগের গল্পগুলো থেকে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন কাজ করত। সেই স্বপ্ন থেকে আমাদের ডিজিটাল মানুষ এ্যাপ গড়ে তোলা। শ্রমজীবী বা পেশাজীবী মানুষের পরিশ্রমেই একটি দেশ গড়ে ওঠে। তাদের পরিশ্রমকে লাঘব করতে এবং তাদের উপযুক্ত সম্মান ও সুবিধা প্রদানই এই এ্যাপের লক্ষ্য। সম্পূর্ণ ফ্রি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবেই কাজ করি আমরা। ডিপ্রজন্ম-সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের কাজের সন্ধান দেবে আপনাদের এ্যাপটি। যারা এ্যাপটির সঙ্গে ইতোমধ্যেই যুক্ত এবং কাজ পাচ্ছেন, করছেন তাদের থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? আলিফ-প্রতিটি নতুন কাজে বাঁধা থাকবেই। এ ধরনের মানুষগুলো বেশিরভাগই শিক্ষার আলোর সন্ধান পায়নি কখনই, তাদের বোঝানো এবং ফোনে কথা বলে কোথাও পাঠানোর মাধ্যমে আরেকজন মানুষকে সেবা দেয়া আর কাজ করা মানুষটিকে তার শ্রমের পর্যাপ্ত মূল্য নিশ্চিত করা হয় বলে সাড়া পাচ্ছি বেশ। বেশকিছু মানুষ আমাদের আপন করে নিয়েছেন শ্রমজীবীদের মধ্য থেকেই, আমাদের এ্যাপটি প্রচারণা পেলে দেশব্যাপী কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। ডিপ্রজন্ম- পুরস্কারপ্রপ্তর পর এ্যাপের আরো কি কি পরিবর্তন আর উন্নয়নে আগ্রই হবে ডিজিটাল মানুষ? আলিফ-আসলে এই জায়গাটিতেই কাজ করছি আমরা। প্রথম ডিপ্রজন্ম পাতার মাধ্যমে জানাতে চাই যে, এবারের ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে যারা দা-ছুরি ধার করান তাদের ঢাকাকেন্দ্রিক নম্বর নিয়েছি, এ্যাপটিতে তাদের ঠিকানা, ফোন নম্বর পাওয়া যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। এর মাধ্যমে সেবাগ্রহীতও সহজে খুঁজে পাবেন তার দরকারি মানুষ আর এই শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষ পাবেন অনেক কাজের সুযোগ। এ ছাড়া হোম টিউটর সার্ভিস এলাকাকেন্দ্রিক এই এ্যাপসের মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা থাকবে। ডিপ্রজন্ম-তরুণদের উদ্দেশে বলুনÑ আলিফ-ডিজিটাল মানুষ এর সেøাগান ‘ঙহব চষধঃভড়ৎস, অষষ ঝবৎারপবং’, তরুণদের স্বপ্নগুলোর বাস্তব রূপই ‘উরমরঃধষ গধহঁংয’। উরমরঃধষ গধহঁংয একটি গড়ে তোলা স্বপ্ন। এই স্বপ্নটি বাস্তবে রূপান্তর করা সরকার বা কোন মুষ্টিমেয় ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা কখনও সম্ভব হবে না যদি আমরা সাধারণ নাগরিক এগিয়ে না আসি। দেশকে উরমরঃধষ করার লক্ষ্যে নিবেদিত হাজারো উদ্যোক্তার মাঝে কিছু উচ্চাকাক্সক্ষী সাহসী তরুণের সমাজসেবামূলক উদ্যোগেই উরমরঃধষ গধহঁংয অঢ়ঢ়টির উদ্ভাবন হয়েছে। তরুণদের বলব দেশের জন্য ভাল কিছু করুন।
×