ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা

বন্যার্তদের কাছ থেকে কিস্তি নিচ্ছে এনজিওগুলো

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২২ আগস্ট ২০১৭

বন্যার্তদের কাছ থেকে কিস্তি নিচ্ছে এনজিওগুলো

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর ॥ আশ্রয় ও খাবারের খোঁজে যখন বন্যাদুর্গতরা ছুটছেন, তখন তাদের তাড়া করে ফিরছে এনজিও কর্মীরা। দুর্গত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। কাজের সঙ্কট থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে আয়। তিন বেলা খাবার যোগাতেই যখন সাহায্যের দিকে তাকিয়ে মানুষ, সেই অবস্থাতেও দুশ্চিন্তায় পড়েছে। তাদের মাথায় এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি। অথচ রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামে বন্যাকবলিত মানুষদের দেখতে এসে এক জনসভায় জেলার সব এনজিওদের নির্দেশ দিয়েছেন বর্তমান সময়ে কোন অবস্থায়ে যেন বন্যাকবলিত মানুষদের কাছে জোর করে কিস্তির টাকা আদায় করা না হয়। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন বন্যাকবলিত। পানিতে ডুবে গেছে ফসল, নিচু এলাকায় বাড়িতেও থাকতে পারছে না মানুষ। জরুরী প্রয়োজনে বা আয়বর্ধক কোন কাজে অর্থায়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ নিয়েছিলেন দুর্গতরা। প্রতি সপ্তাহেই শোধ করতে হয় এই ঋণের কিস্তি। আয় থাকলে এই কিস্তি দেয়া তেমন কোন ঝামেলা হয় না বেশিরভাগ মানুষের কাছেই। তবে কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিত মানুষ। কেউ কেউ কিস্তি দিতে জমানো টাকা ভাঙছে, কেউ বা ধারদেনা করছে, আবার কেউ এনজিওর ঋণ পরিশোধে অন্য এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছে। এতে একটি সংস্থার ঋণ পরিশোধ হলেও আসলে বেড়ে যাচ্ছে ঋণের বোঝা। উপজেলার বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর গ্রামের বাসিন্দা হাছনা বানু। বন্যার পানি তার বাড়িতে এখনও। তিন বেলা খাবার জোগাড় করতে পারছেন না। এই অবস্থাতে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণের এনজিও। মানবেতর জীবনযাপনের মধ্যেও এনজিও আশা বজরা শাখার মাঠ কর্মী শাহাজাহান আলী কিস্তির টাকার জন্য বার বার তাগাদা দিয়ে হাছনা বানুর কাছে এক প্রকার বাধ্য করে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। হাছনা বানু জানান, ‘বন্যায় বাড়িতে পানি উঠছে, ঘরে খাবার নাই, কোন মতে জীবন চলছে। এর মধ্যে কোথায় পাব কিস্তির টাকা।’ আশা বজরা শাখার ব্যবস্থাপক ফজলুল করিম জানান, আমার মাঠ কর্মীদের নিকট যারা কিস্তি দিচ্ছেন শুধু তাদেরই কিস্তি নেয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছেন না তাদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হচ্ছে না। একইভাবে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে, এসকেএস, টিএমএসএওসের (ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ) সহ সবকটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসক ছালেহ মহম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলার প্রতিটি বেসরকারী সংস্থাকে (এনজিও) বলা হয়েছে এ সময়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা না তোলে। আমরা বিষয়টি মনিটরিং করছি।
×