ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর শেরেবাংলায় জম্পেশ অনুশীলনে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত নাসির

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২১ আগস্ট ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত নাসির

মিথুন আশরাফ ॥ দুই বছর আগে ২০১৫ সালে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেছেন। আবার টেস্ট খেলার সুযোগ ধরা দিয়েছে। তাও আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে। যে দলটির বিপক্ষে বর্তমান দলের কেউই টেস্ট খেলেননি। যেখানে মুমিনুল হকের মতো ব্যাটসম্যান বাদ পড়েন। যেখানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো অলরাউন্ডার দলের আশেপাশে থাকতে পারেন না, সেখানে নাসির আছেন। আর তাই নাসির রোমাঞ্চিত। রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নামার জন্য অনুশীলন হয় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। অনুশীলন শেষে নাসিরই সেই রোমাঞ্চের কথা জানান। সঙ্গে এও জানিয়ে দিয়েছেন, ভক্তদের জন্যই ভাল খেলতে চান তিনি। বলেন, ‘আমি মোটামুটি ভালই রোমাঞ্চিত। কারণ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমি এর আগে টেস্ট খেলিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ১১ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেটে ডমিনেট করে খেলছে। ওদের সঙ্গে টেস্ট খেলা এবং পারফর্মেন্স করার বিষয়গুলো ক্যারিয়ারের অনেক কিছু পরিবর্তন করে দেবে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাসির সবসময় আলোচনায় থাকেন। এখন দলে আসাতে সেই আলোচনার চাপ, দায়বদ্ধতাও আছে। নাসির তা নিয়ে ভাবেন, ‘আমি খেললে নিউজে থাকি, না খেললেও নিউজে থাকি। যতটা ইতিবাচক দিক আছে ততটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এখন আমি যদি পারফর্মেন্স করি অবশ্যই আমার ভক্তদের ভাল লাগবে। আর না করলে সেই জিনিসগুলো অনেক নেতিবাচকভাবে আসবে। চাপতো একটু থাকবেই। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের মানুষজন আমাকে ভালবাসে। তাদেও তো কিছু দেয়া লাগবে। তাদের জন্য আমি চেষ্টা করব সবসময় ভাল খেলার জন্য।’ তবে নাসির জানেন, পারফর্মেন্সই শেষ কথা। এই পারফর্মেন্সের জন্যই তো মুমিনুলও দল থেকে বাদ পড়েন। নাসির তাই জানান, ‘পারফর্মেন্সেই হচ্ছে শেষ কথা। এটা ছাড়া কোথাও টিকে থাকার সুযোগ নেই। পারফর্মই হচ্ছে সবকিছুর মেডিসিন। আমি চেষ্টা করব পারফর্মেন্স করার জন্য। সত্য কথা বলতে পরের যে টেস্ট ম্যাচ আছে সেগুলো নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। আমি জানি যদি এখানে পারফর্ম করি তাহলে ওইগুলো সুযোগ অবশ্যই আসবে। আর আমি যদি ওখানেই পারফর্মেন্স না করি সুযোগগুলো এখানে আসবে না।’ ঘরোয়া লীগে দুর্দান্ত খেলার পরই নাসিরের সুযোগ হতে পারে ধারণা করা হচ্ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজে সুযোগ হয়েছে। টেস্টেও সেই সুযোগ মিলেছে। নাসির নিজের সঙ্গেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন। তাতে দলে যোগ হওয়ার সাফল্য মিলেছে। নাসির বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই নিজের সঙ্গে ছিল। অনেকদিন পর আমি টেস্ট দলে ফিরলাম। ইচ্ছে ছিল টেস্ট খেলার জন্য। আমি শেষ দুই বছর টেস্ট খেলিনি। আমি জানতাম আমাকে সুযোগ পেতে হলে পারফর্মেন্স করেই সুযোগ পেতে হবে। এটাই আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি যেখানেই খেলেছি চেষ্টা করেছি পারফর্মেন্স করার জন্য। হয়তো সেই পারফর্মেন্সের সুবাদেই আমি জাতীয় দলে এসেছি। একজন ক্রিকেটার যেখানেই পারফর্মেন্স করে সেটা কাউন্ট হয়।’ নাসির প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে ভাল ব্যাটিং করেছেন। তাকে তাই টেস্ট দলেও রাখা হলো। নাসির হোসেন অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংটাও তার কাজে দেয়। নাসির সেই বোলিং নিয়েই জানালেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বোলিংটা আমি উপভোগ করি। আমি চেষ্টা করি ভাল বোলিং করার জন্য। যদি সুযোগ হয় বোলিংয়ের তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব বোলিং দিয়ে কিছু করার।’ মাঝখানের দুই বছর ঘরোয়া লীগে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়েও নাসির বলেন, ‘আমি জাতীয় লীগ খেলেছি, বিসিএল খেলেছি। সেখানে আমার কিছু পরিকল্পনা ছিল। সেই পরিকল্পনাতে আমি সফল হয়েছি। আমি রান করেছি। তেমন পরিকল্পনাই জাতীয় দলে থাকে। হয়তো এখানে কন্ডিশন খানিকটা ভিন্ন হয়। খেলার পরিবেশ আলাদা থাকে। আমার যে প্ল্যান রয়েছে আমি সেই প্ল্যানেই থাকব।’ ছয় কিংবা সাত নম্বর পজিশনে খেলার জন্য প্রস্তুত নাসির, ‘আমি যতটুকু বুঝছি যদি খেলার সুযোগ হয় আমি ৬ কিংবা ৭ নম্বরে খেলব। এই সময়ে আরও দুইজন ব্যাটসম্যান থাকে। বাদ বাকি যারা থাকে তারা টেলেন্ডার। বিষয়গুলো ওইভাবেই সেট আছে। আমার সঙ্গে যখন দুইজন ব্যাটসম্যান আছে তখন চেষ্টা করি ইনিংসটাকে বড় করার জন্য। এরপর বোলাররা চলে আসলে চেষ্টা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু রান স্কোরবোর্ডে যোগ করা। আমার পরিকল্পনা এটাই থাকবে। আমি এভাবেই চিন্তা করে রেখেছি।’ টেস্টে ডাক পেয়ে সারপ্রাইজ? প্রশ্ন করতেই নাসির জানান, ‘আমি আগেও বলেছি, জাতীয় দল সবার জন্য উন্মুক্ত আছে। যারা পারফর্মেন্স করবে তারা জাতীয় দলে সুযোগ পাবেই। এই বিশ্বাসটা আমার মধ্যে ছিল। সেক্ষেত্রে সুযোগটা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি২০ যে কোন কিছুই হতে পারে।’ শুরুর নাসির থেকে এই নাসির মানসিকভাবে কতটা এগিয়ে? নাসির বলেন, ‘একজন খেলোয়াড়ের পারফর্মেন্স সবসময় এক লেভেলে থাকে না। আমি সবসময়ই মানসিকভাবে শক্ত থাকার চেষ্টা করি। সত্য কথা বলতে আমি জাতীয় দল নিয়ে এখন তেমন একটা চিন্তা করি না। যখন যেটা খেলি আমি চিন্তা করি ওটাই আমার শেষ খেলা। এখানে আমাকে সেরা কিছু করে দেখাতেই হবে। আমি ওখানে উপভোগ করি এবং পারফর্মেন্স করে যাওয়ার চেষ্টা করে যাই। আমাকে জাতীয় দলে খেলার জন্য পারফর্মেন্স করতে হবে, সেটা ভেবে আমি কখনও পারফর্মেন্স করি না। খেলতে নেমেছি খেলব, উপভোগ করব, এটা ভেবেই মাঠে নামি।’ পার্থক্যটা কি? নাসির বলেন, ‘ওই সময় আমার গোফ ছিল না, এখন আছে (হাসি)। বাদ পড়েছি। খুব স্বাভাবিক খারাপ খেলোয়াড় দলে থাকবে না এটাই নরমাল। এটাও সত্য পারফর্মেন্স করলে আবার সেখানে আসা যাবে। বাদ পড়ার পর থেকেই চেষ্টা করেছি পারফর্মেন্স করার জন্য। আমার ক্যারিয়ারে অনেক কিছু মিসটেক ছিল। আমি চাইলে আরও বড় রান করতে পারতাম। একটু ক্যাজুয়েল ছিলাম। এখন চেষ্টা করি যত বেশি উইকেটে থেকে ব্যাটিং করা যায়। কঠিন আসলে কোনকিছুই না। আবার সবকিছুই কঠিন। আমি আগেও বললাম, যদি সুযোগ পাই চেষ্টা করব পারফর্ম করার। আমার কারও সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। আমার প্রতিযোগিতা নিজের সঙ্গেই। যদি আমি পারফর্ম করি অবশ্যই আমি দলে থাকব। সবার ন্যাচারাল কিছু খেলা থাকে। সেটা আমার যেটা ন্যাচারাল সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি। চট্টগ্রামে অনুশীলনে বলেন, সব জায়গাতেই আমি ওভাবেই খেলার চেষ্টা করি।’
×