ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাগো জাগো চলো মঙ্গল পথে’

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২১ আগস্ট ২০১৭

জাগো জাগো চলো মঙ্গল পথে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরৎ সন্ধ্যায় জ্বলে উঠে মঙ্গল প্রদীপ। অতিথিরা মঙ্গলের বারতা ছড়িয়ে প্রজ্বলন করেন প্রদীপগুলো। সেই সঙ্গে কণ্ঠশিল্পীরা জীবনের পূর্ণতার আহ্বান জানিয়ে গেয়ে যায়- আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে/এ জীবন পূণ্য করো দহন-দানে...। এভাবেই গানের সুরে, বক্তার কথায়, বাচিকশিল্পীর আবৃত্তি ও শ্রুতিনাটকে স্মরণ করা হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। কবিগুরুর ৭৬তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আয়োজনের শিরোনাম ছিল ‘জাগো জাগো, চলো মঙ্গল পথে’। মানবজাতির মঙ্গল ও কল্যাণের আহ্বানে রবিবার এ শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রবীন্দ্র একাডেমি। সে আয়োজনে গান শুনিয়েছেন এপার বাংলার ও ওপার বাংলার শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সঙ্গে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে। এরপর ছিল রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত আলোচনা। রবীন্দ্র একাডেমির সভাপতি কবি আজিজুর রহমান আজিজের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রবীন্দ্র চেয়ার’ অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী বুলবুল মহলনবীশ। প্রদীপ প্রজ্বালনে অংশ নেন অধ্যাপক অজয় রায়। দুই পর্বে সাজানো অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে গান শুনিয়েছেন ভারতের দুই শিল্পী অমিতাভ মুখোপাধ্যায় ও সুতপা চক্রবর্তী। দেশের শিল্পীদের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, রীতা মজুমদার, অপর্ণা খান, সাবিনা লাকী, নিরুপম শর্মা ও পলি রহমান। তারা গেয়ে শোনান ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’, ‘আমার নিশিত রাতে বাদল ধারা’, ‘আজি সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’, ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’, ‘আমার মাথা নত করে দাও’, ‘অগ্নিবীণা বাজাও তুমি’সহ একগুচ্ছ রবীন্দ্রসঙ্গীত। রবীন্দ্র রচনা থেকে আবৃত্তি করেন বাংলাদেশের শিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঠ করেন ‘পরিচয়’ ও ‘ঝুলন’ শিরোনামের দুটি কবিতা। সব শেষে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প অবলম্বনে শ্রুতিনাটক ‘দালিয়া’। নাট্যরূপ ও পরিচালনায় ছিলেন বুলবুল মহলানবীশ। শ্রুতিনাটকে বিভিন্ন চরিত্র চিত্রায়ণ করেছেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়শ্রী মজমুদার, শফিকুল ইসলাম, সাদিয়া ইসলাম লিজা ও সুলতানা শাহরিয়া পিউ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী। স্মরণে শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা একাত্তরের আরও অনেকের মতোই প্রতিবাদী হয়েছিলেন কবি মেহেরুন্নেসা। সেই প্রতিবাদ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ও স্বাধীন বাংলাদেশের সপক্ষে। একাত্তরের মার্চের সূচনালগ্নে দেশের স্বাধীনতার জন্য পতাকা উড়িয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ এই নারী কবি। দেশকে ভালবাসার অপরাধে অবাঙালী বিহারিদের হাতে প্রাণ হারাতে হয় এই কবিকে। রবিবার বিকেলে ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ করা হলো দেশের জন্য আত্মবিসর্জন দেয়া এই কবিকে। শহীদ কবিকে নিবেদিত আলোচনা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, নাট্য প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠান। বের করা হয় শোভাযাত্রা। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বপ্নকলা সাংস্কৃতিক ভুবন। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলমান আয়োজনে প্রদর্শিত মেহেরুন্নেসার ওপর নির্মিত ডকুফিকশন চলচ্চিত্র ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’। ছিল মেহেরুন্নেসাকে উপজীব্য করে নির্মিত নাট্য প্রদর্শনী। পুরস্কার ও সনদপত্র প্রদান করা হয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের। বিকেল অনুষ্ঠিত হয় মেহেরুন্নেসাকে নিবেদিত আলোচনাসভা। এ পর্বের উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রীয় কণ্ঠযোদ্ধা মনরঞ্জন ঘোষাল। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। প্রধান আলোচক ছিলেন মেহেরুন্নেসার বান্ধবী সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী। আলোচনায় অংশ নেন কবি মেহেরুন্নেসার বড় বোন মোমেনা খাতুন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহম্মেদ হালিম। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রিয়াজ মাহমুদ মিঠু। উদ্বোধনী বক্তব্যে মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে জানতে হলে মেহেরুন্নেসাকে জানতে হবে। একাত্তরের যারা দেশের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন কবি মেহেরুন্নেসা। আদর্শিক এই মানুষটি কখনও আপস করেননি। তাই মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে দেশের পতাকা উড়ানোর দায়ে মা ও দুই ভাইসহ মেহেরুন্নেসাকে প্রাণ দিতে হয় অবাঙালী বিহারিদের হাতে। তাঁর এই আত্মত্যাগ ছিল বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। সাংস্কৃতিকবান্ধব পরিবারের জন্ম নেয়া আত্মত্যাগী মেহেরুন্নেসা ছোট দুই ভাইকে প্রতিষ্ঠিত বিয়ে করেননি। শোক দিবস উপলক্ষে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর আলোচনাসভা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রবিবার বিকেলে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর উদ্যোগে রাজধানীর কদমতলী থানার মুরাদপুর সমীরণ নেসা হাইস্কুল মিলনায়তনে ‘চাই শিক্ষা এবং সংস্কৃতির সমন্বয়ে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট নাট্যকার, কবি ও খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এ কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। প্রধান আলোচক ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাখেন মুরাদপুর সমীরণ নেসা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি প্রকৌশলী আহমেদ আলী, খান মোঃ জাহিদ, মোঃ আবদুর রশিদ, শাহীন আহমেদসহ অনেকে। আয়োজনের শুরুতে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশিত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পর্যন্ত একটি মনোমুগ্ধকর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। বিসিকের শরৎমেলা শুরু বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) নক্সা কেন্দ্রে রবিবার থেকে শুরু হলো শরৎমেলা ও ত্রৈমাসিক কারুশিল্প প্রদর্শনী। রাজধানীর মতিঝিলে বিসিক ভবন চত্বরে পাঁচ দিনের এ মেলায় ৫২টি স্টলে বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হচ্ছে। শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদিন প্রদর্শন কক্ষে এই মেলার উদ্বোধন করেন বিসিক চেয়ারম্যান বেগম পরাগ। সভাপতিত্ব করেন বিসিকের পরিচালক (নক্সা ও বিপণন) রেজাউল করিম। শরৎমেলায় বিসিকের নক্সা কেন্দ্র থেকে হস্তশিল্পের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের তৈরি হস্ত ও কুটির শিল্পজাত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে হাতে তৈরি তাঁতের শাড়ি, জামদানি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শিশুদের পোশাক, পাঞ্জাবি আরও অনেক কিছু। এছাড়া মধু, আচারসহ হাতের তৈরি খাদ্যপণ্য মিলছে এই মেলায়। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের তৈরিকৃত পণ্যসামগ্রীও বিসিকের প্রদর্শন কেন্দ্রে প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ মেলা।
×