ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির পাক সুপ্রীম কোর্টের বিষয় নিয়ে মন্তব্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ আগস্ট ২০১৭

প্রধান বিচারপতির পাক সুপ্রীম কোর্টের বিষয় নিয়ে মন্তব্যে ব্যাপক  প্রতিক্রিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে প্রধান বিচারপতির পাকিস্তান সুপ্রীমকোর্টের বিষয় নিয়ে মন্তব্য ও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে চলছে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রধান বিচারকে উদ্দেশ করে বলা হয়, বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। এটা মনে করে থাকলে দিবাস্বপ্ন। রায়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং আমাদের ধর্ম ইসলামের ব্যাপারেও যেই যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়েছে। তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ২৪ আগস্টের মধ্যে রায় বাতিলের দাবি না মানা হলে ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলন। এক দফার দাবি হতে পারে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে রবিবার ছিল আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীর পাশাপাশি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। রায় ২৪ আগস্টের মধ্যে বাতিলের দাবি ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় ২৪ আগস্টের মধ্যে বাতিলের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। রবিবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এক দফা আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। সমাবেশে পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং আন্দোলন চলমান থাকবে। শুধু এটুকু বলতে চাই আগামী ২৪ তারিখের পরে কোর্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই ২৪ তারিখের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে দেয়া অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যগুলো অপসারণ এবং রায়টি বাতিল করতে হবে।’ ‘২৪ তারিখের মধ্যে বাতিল করা না হলে ছুটির পরে (সুপ্রীমকোর্টের অবকাশের পর) বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। প্রয়োজনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এক দফা আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।’ ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে এই উপমহাদেশের যত রায় আমরা পড়েছি। কোনদিনও আমরা এ রকমভাবে যুক্তিতর্ক পেশ করার নজির পাইনি। সুতরাং আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আমরা সহ্য করব না।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু, সংসদ সদস্যদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে যেভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এই সব কিছুর কারণে এ রায় অবিলম্বে বাতিলের জন্য আমরা আবারও জোর দাবি পেশ করছি।’ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে; ওই পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ইঙ্গিত করে খাটো করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা হয়েছে। এটা আমরা কোন অবস্থাতেই মানতে পারি না। সুতরাং এই অবজারভেশন অপ্রাসঙ্গিক ছিল। তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এটাই আমাদের দাবি।’ আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ.ম রেজাউল করিম বলেন, আমরা চাই অনাকাক্সিক্ষত, অপভিপ্রেত, অপ্রাসঙ্গিগক নিষ্পত্তি বিষয়গুলোকে নিয়ে বিতর্ক করা হয়েছে সেই রায়কে বাতিল করতে হবে। আজ প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানের কথা মনে করিয়ে দিলেন। আমাদের পরিষ্কার কথা বাংলাদেশ পাকিস্তান না। এটা মনে করে থাকলে সেটা হবে দিবাস্বপ্ন। এদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন কটূক্তি বরদাস্ত করা হবে না। প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার, ড. মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী, ওজি উল্লাহ, লায়েকুজ্জামান মোল্লা, পরিমল গুহ, সানদিজা খানম এমপি প্রমুখ। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সরকারের মুখপাত্রের ভূমিকায় ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও জাতীয় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক একজন অসৎ, অনৈতিক এবং নির্লজ্জ ব্যক্তি। তিনি বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সরকারের মুখপাত্রের ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি ছিলেন, অথচ তিনি এত নিচেয় নেমেছেন, তার এহেন কর্মকা- দেখে আমাদের লজ্জায় মাথা হেড হয়ে যায়। গতকাল সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির উত্তর হলে ষোড়শ সংশোধনীর রায় ও বিচার বিভাগ নিয়ে অশালীন বক্তব্য দেয়ায় খায়রুল হকের গ্রেফতার ও অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিতায় রায় চৌধুরী, সুপ্রীমকোর্ট বারের সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, তৈমুর আলম খন্দকার, আবেদ রাজা, বদরুদ্দোজা বাদল, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, গাজী কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক তারই ছেড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানকে (সুপ্রীমকোর্ট) কীভাবে হেয় করছেন? এটা ভাবলে আমাদের মাথা হেড হয়ে যায়। আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখুন। তিনি বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক মুন সিনেমা হলের মামলার মাধ্যমে পঞ্চম সংশোধনীতে হাত দিয়ে তা বাতিল করলেন। অথচ তার রায়ে এখনও সেই হল মালিক হলের মালিকানা ফেরত পায়নি। এই হলো বিচারপতি খায়রুল হক! পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে খায়রুল হক সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বহাল রেখেছেন। গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি ॥ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, এই রায়ে বিচার বিভাগের জয় হয়েছে। সংবিধান রক্ষা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীর আগেও সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল রেখে দেয়া হয়েছিল। বিচারপতি খায়রুল হক তার রায়ে স্বচ্ছতা আছে বলেই রেখে দিলেন। এতে তিনি হাতও দেননি। কিন্তু একটি মাত্র রায় নিয়ে তিনি যেভাবে কথা বলা শুরু করেছেন তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি আদও প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য ছিল কিনা। কারণ কামরুল যেভাবে বলেছে রাজনৈতিক বিবেচনায় তারা প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন, তাহলে আমি বলব সরকার এবং সরকারী দল এ পর্যন্ত যত বিচারপতি নিয়োগ করেছেন, যত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছেন, বিশেষ করে তাদের আমলে সব কিছু রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছে। এটা একেবারেই গ্রহণ যোগ্য না। বিচার বিভাগকে তারা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র এবং উল্লাসে মেতে উঠেছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। রবিবার সুপ্রীমকোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। অন্যদিকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদুল বারি বলেন, বিচারবিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের এই রূপ প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে ষড়যন্ত্রকারীরাই লাভবান হবে। আমাদের সকালের প্রতি আহ্বান সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বক্তব্য না রেখে সংবিধান অনুয়ায়ী আইনানুগ প্রতিকার চেয়ে আবেদন করুন।
×