ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানে সুপ্রীমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে করেছেন... সিনহা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২১ আগস্ট ২০১৭

পাকিস্তানে সুপ্রীমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে করেছেন... সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি। সেখানে ধৈর্যের কথা বলা আছে। পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করেছেন। সেখানে কিছুই হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার।’ নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত করার বিষয়ে রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করে। গেজেট প্রকাশের জন্য এ নিয়ে ২৫ বার সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপোড়নের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই বিধিমালার খসড়া সুপ্রীমকোর্টে জমা দিলেও প্রধান বিচারপতি গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই খসড়া গ্রহণ না করে প্রধান বিচারপতি মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, এ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডাকলেও আইনমন্ত্রী এখন পর্যন্ত সুপ্রীমকোর্টে যাননি। চাকরিবিধির ওই গেজেট প্রকাশের জন্য গত ৬ আগস্ট সরকারকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিল আপীল বিভাগ। কিন্তু এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রবিবার আবারও সময়ের আবেদন করেন। এ বিষয়ে শুনানির পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্য বিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করে। গেজেট প্রকাশের জন্য এ নিয়ে ২৫ বার সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি এ্যাটর্নি জেনারেলকে আলোচনায় বসার আহ্বানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “গত তারিখে কি কথা ছিল? কার সঙ্গে কে কে থাকবে তা ঠিক করে আলাপ-আলোচনা করার কথা ছিল। কে কে থাকবে?” জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “ল’ মিনিস্টার।” তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, “এতই আমরা ইয়ে হয়ে গেলাম আলোচনা পর্যন্ত করলেন না?” বিচারপতি সিনহা বলেন, “আপনারা মিডিয়াতে অনেক কথা বলেন। কোর্টে এসে অন্য কথা বলেন। আপনাদের বলছি, আপনাকে নয়। আপনিই বলেন। কবে কি হবে?” এ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, “একটা আনস্টেবল সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে।” তখন প্রধান বিচারপতি সেই ‘আনস্টেবল সিচুয়েশনের’ বিষয়ে জানতে চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সবটা নিয়েই আমি বিব্রত।” বিচারপতি সিনহা বলেন, “আপনারা ঝড় তুলছেন। আমরা কোন মন্তব্য করেছি?” এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “না, আপনারা করেননি।” এরপর প্রধান বিচারপতি গেজেট প্রকাশের জন্য সময় মঞ্জুর করে বলেন, “আপনার চাওয়া মতো ৮ তারিখ রাখলাম।” এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম এ সময় তার আবেদনের শুনানির আরজি জানান। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি সেখানে ধৈর্যের কথাই বলা হলো। পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্র্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করল। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার।” এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পরে নিজের দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, “নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির ব্যাপারে যে রুলস ফ্রেম করার কথা, সে বিষয়টি আজ আদালতের কার্যতালিকায় ছিল। আমি আদালতকে বলেছি, যেহেতু নানা কারণে এখন অবস্থা খুব উত্তপ্ত, সুতরাং রুলস ফ্রেমিংয়ের ব্যাপারে লম্বা সময় দেয়া হোক। যাতে এর মধ্যে সার্বিক অবস্থাটা স্থিতি লাভ করে। তখন আদালত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। “তখন আদালত বলেছে, গত তারিখে কথা ছিল আমাদের সঙ্গে আপনারা বসবেন। তখন আমি বলেছি, আমার তো বসার কথা না, আমি তো এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। যাই হোক, যদি এরকম কথা হয়ে থাকে, তাহলে ফের উদ্যোগ নেব।” এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমি সব সময়ই বলি, আমি পলিসি মেকার না। এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ এবং জুডিসিয়ারির সঙ্গে একটা সংযোগ রক্ষা করি মাত্র। আমাকে বলা হয় একটা ব্রিজ।” ২০১৬ সালের ৭ নবেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নবেম্ব^রের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ। আপীল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে তলব করেছিল আদালত। তবে ওই বছর ১১ ডিসেম্বর রাতে আইন মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে জানায়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে পরদিন ১২ ডিসেম্বর আপীল বিভাগ দ্বিমত পোষণ করে। আদালত বলেছে, ‘রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।’ বিধি প্রণয়ন সম্পর্কে আপীল বিভাগ বলে, ‘এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন। এখানে কোন কম্প্রোমাইজ নেই।’ তবে আপীল বিভাগের এই অভিমত সত্ত্বেও বিগত সাত মাসেও এই গেজেট জারি করা হয়নি। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এ জন্য বার বার আদেশ দিতে হয়েছে আপীল বিভাগকে। এমনকি ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদী পক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নবেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করে। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আপীল বিভাগ চার সপ্তাহ সময় দেয় সরকারকে। এরপর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া শৃঙ্খলা বিধি তৈরি করে সুপ্রীমকোর্টে পাঠানো হয়। কিন্তু তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে না হওয়ায় সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে আলাদা একটি শৃঙ্খলা বিধি তৈরি করে। গত ২ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপীল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি আপীল বিভাগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত চারটি বিধিমালা সাতদিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেন। তবে এ সংক্রান্ত মামলাটি এখনও আপীল বিভাগে বিচারাধীন। ১২ দফা নির্দেশনার যেসব দফা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ রয়েছে।
×