ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফায়ারিং স্কোয়াড

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২১ আগস্ট ২০১৭

ফায়ারিং স্কোয়াড

বিডিনিউজ ॥ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দশ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় দিয়েছে আদালত। ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম রবিবার এই রায় ঘোষণা করে বলেন, ‘হাইকোর্টে বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে গুলি করে দশ আসামির দণ্ড কার্যকর করা হোক।’ সতের বছর আগের ওই ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের দুটি মামলার অপর ১৩ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য একটি মামলায়। এ কারণে তার নাম এ মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও গুরুতর অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। মুফতি হান্নান বাদে মামলার বাকি ২৪ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড; একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা; তিনজনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার ১০ আসামি আদালতের রায়ে খালাস পেয়েছেন। শেখ হাসিনাকে কোটালীপাড়ায় হত্যাচেষ্টা মামলার রায় হয়েছে এই আদালতে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় মুফতি হান্নান বাদে আসামি ছিলেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে নয়জনকে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন চারজন। কোটালীপাড়ার একটি কলেজের কাছে ২০০০ সালের ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা মঞ্চের নির্ধারিত স্থান ও হেলিপ্যাডে মাটিতে পুঁতে রাখা ৭৬ ও ৮০ কেজি ওজনের দুটি বোমা পাওয়ার পর এই মামলা করে পুলিশ। রায়ের পর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ শামসুল হক বাদল বলেন, তিনি ‘আংশিক সন্তুষ্ট’। রায়ের কপি পাওয়ার পর আপীলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, তার মক্কেলদের ‘টাকা-পয়সা নেই’। তারা জেল আপীল করবেন। দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা এই রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপীল করার সুযোগ পাবেন। কার কেমন সাজা ॥ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা মৃত্যুদণ্ড কারাগারে থাকা ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিপন, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আবু বক্কর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মোঃ ইয়াহিয়া, আবদুর রউফ ওরফে মুফতি আবদুর রউফ ওরফে আবদুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর এবং পলাতক ইউসুফ ওরফে মোহসাব মোড়ল, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই। যাবজ্জীবন ॥ কারাবন্দী মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী। ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ॥ কারাগারে থাকা আনিসুল ইসলাম আনিস ও মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং পলাতক সারোয়ার হোসেন মিয়া। খালাস ॥ কারাবন্দী আরিফ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা সাব্বির, মাহমুদ আজহার এবং পলাতক কামাল উদ্দিন সাকের, মুন্সি ইব্রাহিম, মোঃ শাহনেওয়াজ ওরফে মোঃ আজিজুল হক, মোঃ লোকমান, শেখ মোঃ এনামুল হক, মিজানুর রহমান ও আবুল হোসেন ওরফে খোকন। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা ॥ ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড কারাবন্দী আনিসুল ইসলাম আনিস, মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাহমুদ আজহার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিপন এবং পলাতক ইউসুফ ওরফে মোহসাব মোড়ল, মোঃ শাহনেওয়াজ ওরফে মোঃ আজিজুল হক ও শেখ মোঃ এনামুল হক। খালাস ॥ কারাবন্দী আবুল হোসেন খোকন, জামিনে থাকা হাসমত আলী কাজী এবং পলাতক মুন্সি ইব্রাহিম ও মোঃ লোকমান। কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের সেই মাঠ। ঘটনাক্রম ॥ ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় মাটিতে পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া যায়। পরদিন ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয় কোটালীপাড়ার হেলিপ্যাড থেকে। তার একদিন পর নিজের নির্বাচনী এলাকায় দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজ মাঠে জনসভায় শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক নূর হোসেন বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা করেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্ত শেষে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল যে অভিযোগপত্র দেন, তাতে আসামি করা হয় ১৬ জনকে। পরে ২০০৯ সালের ২৯ জুন নতুন করে ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গোপালগঞ্জের আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্রটি যখন দেয়া হয়, ততদিনে ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৪১ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা দুটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে মূল ব্যক্তি হিসেবে মুফতি হান্নানকে দায়ী করা হয়। শেখ হাসিনার নিজের জেলা গোপালগঞ্জেই মুফতি হান্নানের বাড়ি? পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে তার জঙ্গীবাদে হাতেখড়ি। আফগানিস্তান সীমান্তে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এই জঙ্গী নেতা কারাগারেই ছিলেন। ২০০৪ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যাচেষ্টায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় চলতি বছর ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বোমাগুলো উদ্ধারের সময় মুফতি হান্নানের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জে হেমাঙ্গন আবাসিক এলাকার ভাড়া করা একতলা বাসা থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ওই বিস্ফোরক সরবরাহ করা হয়েছিল হান্নানের সোনার বাংলা সাবানের কারখানা থেকে।
×