ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বকেয়া আদায় ও ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২০ আগস্ট ২০১৭

বকেয়া আদায় ও ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে এবং বকেয়া আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এ জন্য সিগারেট ও বিড়ি খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা, বিমানের টিকেট থেকে আবগারি শুল্ক হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা, ফাস্টফুডের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে ১০০ কোটি টাকাসহ মোট ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা করেছে এনবিআর। পাশাপাশি পেট্রোবাংলার কাছে পাওনা প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কাছে পাওনা ২ হাজার কোটি টাকা আদায়ে অর্থ বিভাগের সহায়তা চায় এনবিআর। নতুন ভ্যাট আইন স্থগিতের কারণে রাজস্ব ঘাটতি পূরণে জাতীয় রাজস্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তৈরিকৃত কর্মপরিকল্পনায় এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণে বছরের শুরু থেকেই মনিটরিং জোরদার করা হবে। সম্প্রতি রাজস্ব আদায়ের এই কর্মপরিকল্পনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনবিআর। এতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই রাজস্ব আদায় করবে সরকার। উল্লেখ্য, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিত করেছে সরকার। এতে রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় চিন্তিত খোদ অর্থমন্ত্রী। এজন্য বাজেটের অর্থায়ন ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে একটি কর্মপরিকল্পনা চেয়েছিলেন তিনি। এদিকে, বাজেট বাস্তবায়নে সরকার অর্থবছরের শুরু থেকেই মনিটরিং জোরদার করেছে। একই সঙ্গে অর্থের ব্যয় নিশ্চিতে সব মন্ত্রণালয়কে পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নিদের্শনায় সব মন্ত্রণালয়কে প্রতি প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ এতদূর এগিয়ে নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারণে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে পড়ায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাজেট বাস্তবায়ন। আগামী ২ বছর পর এই আইনের কতটা বাস্তবায়ন হবে সেটাও ভাবনার বিষয়। মূলত ভোটের রাজনীতির কাছে সরকারের এক ধরনের পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বড় দাগে একটা পদক্ষেপ বাদ পড়ে গেল। ভাল হতো পিছিয়ে না গিয়ে সীমিত আকারে হলেও নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করলে। বাজেট ঘাটতির সমন্বয় এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মত তাদের। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ এতদূর এগিয়ে এনে ব্যবসায়ীদের কারণে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে পড়ায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, এবারের বাজেটের নতুন হাইলাইট ছিল ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন। এটি সত্যিকার অর্থে সরকার যদি বাস্তবায়ন করতে পারত, তাহলে সেটা হতো বড় সংস্কারের পদক্ষেপ হিসেবে উত্তম উদাহরণ। এখানে ভ্যাট আদায়ই মুখ্য নয়। উদ্দেশ্য ছিল আইনটির বাস্তবায়ন। তিনি বলেন, ৫ বছর আগে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া এ আইনটি অনেক চেষ্টা করে এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। এবার পারলে অনেক ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলেও তা আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা যেত। ড. জাহিদ বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রত্যাশা নিয়েই এর মাধ্যমে ৯১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে বলে আশা করেছিল সরকার। কিন্তু এখন তা ২ বছর পেছানোয় ওই ঘাটতি সরকার কীভাবে পূরণ করবে? সরকারকে অন্য খাত থেকে এটা তুলতে হবে। আর ঘাটতি যদি বেড়ে যায় তাহলে খরচে কাটছাঁট করতেই হবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর চলতি ব্যয় বাড়ছে। তাই ঋণ নিয়ে ব্যয় করা ঠিক হবে না। তারল্য বেশি থাকায় ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে ব্যক্তি খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই সরকারকে অন্যদিকে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায় এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল। কারণ পেনশন বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা কমানো যাবে না। তাহলে হাত দিতে হবে উন্নয়ন বাজেটের দিকে। এবারের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বেশি দেয়া হয়েছে মেগা প্রকল্পে। সেখানে কমানো সম্ভব হবে না। তবে যেটা করতে হবে ছোট ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দিকে নজর দিতে হবে। নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন কার্যকর না হওয়ায় চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে এমনটি মনে করেন খোদ অর্থমন্ত্রীও। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় এ খাত থেকে বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের চিন্তা ছিল সরকারের। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করা কঠিন হবে। তাই এবার আগেভাগেই বাজেট সংশোধন করবেন। গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়। ১ জুনের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ২ বছরের জন্য স্থগিত করে বাজেট পাস হয়। বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। বিপরীতে মোট আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা এবং অনুদানসহ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।
×