ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় ষড়যন্ত্রকারীদের বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ॥ লতিফ সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২০ আগস্ট ২০১৭

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় ষড়যন্ত্রকারীদের বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ॥ লতিফ সিদ্দিকী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের কর্মকা- ষড়যন্ত্র কি না তা ইতিহাসের গবেষণার বিষয় হলেও এই রায় ষড়যন্ত্রকারীদের একটি বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীলতা থেকেই একজন নাগরিক হিসেবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করার কথা জানান তিনি। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিষয়ে তিনি তার মতামত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় কার মদদে হয়েছে, রায় কে লিখে দিয়েছেÑএসব তিনি জানেন। কিন্ত বলবেন না। সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে যান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে সাবেক এমপি ও তার সহধর্মিণী লায়লা সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। রায়ে সংসদ সদস্যদের ‘অপরিপক্ব’ বলা হয়েছে-এমন দাবি করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, একজন সংসদ সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না। তবে সংসদ সদস্য হওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। রায়ে সংসদ সদস্যদের নয়, সংসদীয় গণতন্ত্রকে অপরিপক্ব বলা হয়েছেÑ এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ৭৯৯ পৃষ্ঠার পুরো রায়টি তিনি তিনবার পড়েছেন। এরপর আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে নিশ্চিত হয়েছেন। রায় নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষশক্তি ও যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে মন্তব্য করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রিটে হাইকোর্টের রায় ও এ্যাপিলেট ডিভিশনে খারিজ আদেশে যেসব শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, আইনী নজির প্রদানের ভেতর দিয়ে এমন ভাব-ভাবনার প্রকাশ পেয়েছে যা জনগণের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার এবং পাকিস্তানী সুপ্রীমকোর্টের সুরের প্রতিধ্বনি। পাকিস্তানী রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে যারাই জ্ঞাত তাদের কে না জানে পাকিস্তান সুপ্রীমকোর্টের প্রতিটি এই ধরনের রায়ের পেছনে মদদদাতা ও শক্তির উৎস জনগণ, সংবিধান ও আইন নয়, ক্যান্টনমেন্ট। লতিফ সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে এই রায়ের ক্ষেত্রে তিনি কার মদদ দেখছেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, বলব না। কে রায় লিখেছে তা-ও আমি জানি, বলব না।’ রায়ের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্ট, সুপ্রীমকোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং মতামত ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুবিরোধী শক্তি যত বিরূপ কদর্য মন্তব্য করেছে তার চেয়েও অপকৃষ্ট বলে অনেকেই ক্ষুব্ধ।’ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃৃত এই নেতা বলেন, রাষ্ট্রীয় আবেদন সুপ্রীমকোর্ট খারিজ করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। বর্তমান সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ হাসিনা বিরাজ করছেন। তিনি পুনরায় বিল আনবেন এবং আরও জোরালো শর্ত দিয়ে সংশোধনী পাস করবেন। বিচারপতিদের অনেকেই মেয়াদ শেষে অবসরে যাবেন। এভাবে পাল্টাপাল্টি করে কিছু হবে না। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় অনেক বিচারপতি জাতীয় সঙ্কটে সুবিধাবাদী ও আপসকামী চরিত্রেরই প্রমাণ রেখেছেন। রায়ে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক বহুবার বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী কোন বিষয় নয়, আমার ধারণা বিষয়টি অন্য কোথাও আড়াল করে রাখা হয়েছে। আমরা দূর থেকে হাত পা ছুড়ছি, আসল বিষয়টা দেখতে পাচ্ছি না। হত্যা-খুন, নৈরাজ্য করে এবং অসাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তাই সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করা। বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।
×