ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বয় করেই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ হয়

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২০ আগস্ট ২০১৭

টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বয় করেই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন নিয়ে ঢালাও বক্তব্য দেয়ায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালককে চ্যালেঞ্জ করেছেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ‘জ্বালানির দাম ও জাতীয় অর্থনীতি’ বিষয়ক সেমিনারে বলেন, সরকার ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মূল্য কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় প্রতিমন্ত্রী জানতে চান, এটা কোন বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে হয়েছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে না পারলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিলাম, এর মধ্যে জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢালাওভাবে সরকারকে দোষ না দিয়ে কোন্ ক্ষেত্রে এসব করা হয়েছে স্পষ্ট করে বলা উচিত। না হলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সহায়তায় সেমিনারটি আয়োজন করে। ‘জ্বালানির দাম ও জাতীয় অর্থনীতি’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তরা ভবিষ্যত বিদ্যুত এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেমিনারে বলা হয়, আগামী ৩০ বছরে বিদ্যুত ও জ্বালানির দর তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। যদিও স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বক্তরা। সেমিনার সঞ্চালনা করেন এফইআরবির চেয়ারম্যান সাংবাদিক অরুণ কর্মকার। সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বয় করেই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুত ও গ্যাস প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সব খাতের সঙ্গেই জড়িত। মূল্য বৃদ্ধি বা পরিবর্তনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, আয়-ব্যয় ও অবস্থান বিবেচনায় রাখা উচিত। এখন মানুষের আয় এক হাজার ৬০০ ডলার হলেও উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই তা হয়ত ৬ হাজার ডলারে উপনীত হবে। তখন আরও বেশি দাম দিয়ে গ্যাস এবং বিদ্যুত কিনতে জনগণের অসুবিধা হবে না। জনগণের সুবিধা- অসুবিধা বিশ্লেষণ করেই সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছে। তিনি বলেন, পল্লী অঞ্চলে ৫০ ভাগ গ্রাহক বিদ্যুতের লাইফ সেবা পায়। এদের কথা বিবেচনা করে এবং জনগণের আয়ের দিক লক্ষ্য রেখে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রতি বছর বিদ্যুতর চাহিদা ১৬ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা পূরণে পরিকল্পনাও পরিবর্তিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়ার যে ভিশন সরকার দিয়েছে তা পূরণ হবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। মূল প্রবন্ধে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম বিভাগের অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে জ্বালানির দাম নির্ধারণ কঠিন হবে। অনেক বিষয় জ্বালানির দাম নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক বাজার, সরকারের ভর্তুকি, জ্বালানির ব্যবহার, কোন্ জ্বালানি কতটা ব্যবহার হচ্ছে, দক্ষতার উন্নয়ন বিবেচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে কেমন দাম হবে বা কোন্ নিয়মে দাম ঠিক করা হবে তা এখনই পরিষ্কার হতে হবে। বিশেষ করে শিল্প খাতের জন্য। ভবিষ্যতে জ্বালানির দাম কেমন হবে তা জানা থাকলে বিনিয়োগে সুবিধা হবে। ম তামিম বলেন, যে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা ব্যবহার শুরু হলে গ্যাসের দাম আড়াইগুণ বাড়াতে হবে। আর আগামী ১০ বছরে গ্যাসের দাম তিনগুণ বাড়াতে হবে। তবে ব্যবহার ও সরবরাহ দক্ষতা বাড়িয়ে এ দাম বাড়ানো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। পদ্ধতিগত লোকসান কমাতে হবে। সঞ্চালনে লোকসান কমানো সম্ভব। পল্লী বিদ্যুতে লোকসান সবচেয়ে বেশি। জ্বালানি তেলের চাহিদা কমাতে পরিবহনে পরিবর্তন আনতে হবে। পুরানো পরিবহন পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জ্বালানির দাম পরিবর্তন হলে বিদ্যুতের দামও পরিবর্তন হবে। তবে জ্বালানির দাম সব সময় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এজন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র এবং আমদানির ওপর জোর দিতে হবে। এ খাতে কর মওকুফ করে সুবিধা দেয়া যেতে পারে। শিল্পে ভর্তুকি কমিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দেয়া যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি তুলে দিতে হবে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, বিদ্যুত উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরনো বিদ্যুত কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সব মানুষের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে অনেক মানুষেরই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। তখন বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এজন্য ক্ষেত্রবিশেষ জ্বালানির দাম নির্ধারণে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কনজ্যুমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, স্বচ্ছভাবে পরিকল্পনা ও নীতি ঠিক করতে হবে। সব সমস্যার সমাধান শুধু দাম বাড়িয়ে করলে হবে না। বিদ্যুতের দাম পাঁচ ভাগ বাড়লে জীবনযাত্রার অন্য খরচ আরও ২০ ভাগ বেড়ে যায়।
×