ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি আয় বাড়ছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২০ আগস্ট ২০১৭

রফতানি আয় বাড়ছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ সারা বিশ্বে এখন প্রক্রিয়াজাত খাবারের সরবরাহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের কদরও এখন বিশ্বের মানুষের কাছে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। প্রথমদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ছিলেন এর একমাত্র ক্রেতা ও ভোক্তা। কিন্তু এখন বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের খাবারের গুণগত মান ও তার প্রক্রিয়াজাত রসনার কারণে আগ্রহের বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত রুটি-বিস্কুট-চানাচুর, পানীয়, মসলা, জ্যাম-জেলি, সরিষার তেল ইত্যাদি পণ্য রফতানি আয় বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো পুরনো বাজারের পাশাপাশি আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে এসব পণ্যের বাজার। অন্যদিকে শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীরা নন, আমদানিকারক দেশগুলোর নাগরিকেরাও বাংলাদেশী পণ্য কেনা শুরু“করেছেন। সারা বিশ্বে বাজার পাওয়ার জন্য রফতানি আয়ও বাড়ছে এই খাতের। বাংলাদেশ সরকার বেশ আগে থেকেই কৃষিখাতকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে বলে এখন দ্রুত প্রসার ঘটছে এই খাতের। বর্তমানে শতাধিক প্রতিষ্ঠান রফতানির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের ১৪০টির মতো দেশে। পণ্যের মান উন্নত করা ও গুড এ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (গ্যাপ) অনুসরণ করে সবজি, মাছ ও ফল উৎপাদন করে তা প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে এ খাতটিতে রফতানি আয় বাড়ানোর সুযোগ অনেক বেশি। বাপার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার সদস্যরা রফতানি করেছে ২৪ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে রফতানি আয় এক দশকে প্রায় ১২ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে ৯০ ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য বর্তমানে রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে আছে জুস, পানীয়, মসলা, চানাচুর, ডাল ভাজা ও চিপস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, আলু, মুড়ি, চিড়া, কনফেকশনারি পণ্য, জ্যাম ও জেলি, বিভিন্ন ধরনের সস, কাসুন্দি, আলুপুরি, সবজির রোল, লুচি, সমুচা, জর্দা, হিমায়িত মাশরুম, বাদাম ভাজা, বিভিন্ন ধরনের চাটনি ও আচার, নুডলস, ম্যাঙ্গো ও ফলের বার, বিভিন্ন ধরনের সেমাই, লুচি ও পরোটা, সিঙ্গারা, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, বাবল গাম, খেজুর রস, মধু, পাপড়, বিভিন্ন ধরনের হিমায়িত সবজি। বেশি রফতানি হয় জুস, পানীয়, বিভিন্ন ধরনের মসলা, মুড়ি, চাটনি, আচার, হিমায়িত সবজি ও সেমাই। ইপিবির পণ্যভিত্তিক রফতানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। এ খাতে সবচেয়ে বেশি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণ জানিয়েছে, বিগত অর্থবছরে তাদের রফতানি আয় হয়েছে ২৩ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার সমান। আগের বছরের চেয়ে তাদের রফতানি আয় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রাণের দাবি, তাদের পণ্য এখন কানাডায় ওয়ালমার্ট, সৌদি আরব ও ওমানে ক্যারিফোর, যুক্তরাজ্যে পাউন্ডল্যান্ড, ভারতে রিলায়েন্স ফ্রেশ ও সিটি মার্ট, কাতারে গ্র্যান্ড মল ও আনসার গ্যালারি, মালয়েশিয়ায় টেসকো, সেগি ফ্রেশ ও ইয়নের মতো সুপারশপ ও চেইন স্টোরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান বলেন, চার-পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশী পণ্য শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীরা কিনত। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রাণের পণ্য মূল বাজারেও প্রবেশ করেছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানিকারকদের মধ্যে অন্যতম স্কয়ার ফুড এ্যান্ড বেভারেজ জানিয়েছে, তারা ৩২টি দেশে মসলা, সরিষার তেল, চানাচুর, আচার, সুগন্ধি চালসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত বছর ‘দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যনিরাপত্তা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে ৪০টি প্রক্রিয়াজাত পণ্য খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বিয়ার, কুঁড়ার মতো শস্যজাত পণ্য, বেকারি পণ্য, ফিশ ফিলেসহ মাছজাত পণ্য, আলুজাত পণ্য, জুসসহ ফলজাত পণ্য, হিমায়িত মাংস, প্রক্রিয়াজাত সবজি, নুডলস, সস, সুগার কনফেকশনারি, চা ইত্যাদি।
×